দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায়: নারীর ভূমিকা, ঝুঁকি ও করণীয়

বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি গুরুতর সমস্যা - রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির বিস্তার গভীরভাবে ঘটেছে। দুর্নীতি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব সমাজের সব স্তর, বিশেষকরে ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে অবস্থানকারী দরিদ্র, প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। ‘দরিদ্রদের মধ্যে দরিদ্রতর’ হিসেবে নারীর ওপর দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি হয় বলে ধারণা করা হয়। দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতার কারণে পুরুষের মতো নারীদেরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হতে হয়। টিআইবি’র ২০১৫ এর খানা জরিপে দেখা যায় সারা দেশে জরিপকৃত খানাগুলোর ৯৯.৬% কোনো না কোনো সেবা খাত হতে সেবা নিয়েছে এবং সেবাগ্রহণকারী খানার ৬৭.৮% সেবা নিতে যেয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। জরিপে সেবাগ্রহীতাদের ৪২.৮% ছিল নারী যাদের ৩৮.২% দুর্নীতির শিকার হয়েছে বলে দেখা যায়। তবে টিআইবি’র খানা জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নারীর ঘুষ দেওয়ার বা দুর্নীতির কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হার কম হলেও এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না যে নারীর ওপর দুর্নীতির প্রভাব কম, বরং তুলনামূলক কম সেবা নেওয়ার কারণে ঘুষ দেওয়ার প্রথম ধাপে (entry Point) নারীদেরকে কম দেখা যায়।

কার্যপত্রের উদ্দেশ্য

টিআইবির কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি জেন্ডার-সংবেদনশীল সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। এই উদ্দেশ্যে টিআইবি দীর্ঘদিন যাবৎ তার কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের নারীদের ওপর দুর্নীতির বিভিন্ন প্রভাব চিহ্নিত করছে এবং সে অনুযায়ী করণীয় প্রস্তাব করে আসছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য আইনিভাবে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) দেশে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে নানা প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নারীর ওপর দুর্নীতির বিশেষ ধরনের একটি ঝুঁকি লক্ষ করা যায় - দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় ও সম্পদের সাথে নারী জড়িয়ে পড়ছেন, নারীকে জড়িত করা হচ্ছে, নারীকে উক্ত অবৈধ আয় ও সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ করা হচ্ছে এবং এই অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনার উদ্দেশ্যে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, এবং এ প্রেক্ষাপটে এ কার্যপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কার্যপত্রের মূল উদ্দেশ্য নারীর ওপর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায়ের ঝুঁকির বিশ্লেষণ, এই প্রক্রিয়ায় নারীর ভূমিকা, সংশ্লিষ্ট আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থ-সামাজিক কাঠামোগত প্রভাব চিহ্নিত করা, এবং এর প্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণে সহায়ক আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি।

বিস্তারিত জানতে নিচে ক্লিক করুন