Published: 18 October 2012
নবম জাতীয় সংসদের সদস্যদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভূমিকা পর্যালোচনা
গবেষণা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১: এই গবেষণার পেছনে টিআইবি’র উদ্দেশ্য কী? এ গবেষণার মাধ্যমে কি সংসদকে অবমাননা করা হয়েছে?
উত্তর:নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংসদ কার্যকর করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল। তবে নবম সংসদ গঠনের পর থেকে পরবর্তী তিন বছরে সংসদ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব প্রত্যাশিত পর্যায়ে পালন করছেন না বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়। এছাড়াও সংসদের বাইরে সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে সংসদ সদস্যগণ কতটুকু ইতিবাচক ও কতটুকু নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত তার কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য পাওয়া যায় নি। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উদ্দেশ্যে টিআইবি নিয়মিতভাবে গবেষণা করেছে, এবং এর ধারাবাহিকতায় এই গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেখানে সংসদ ও সংসদের বাইরে সংসদ সদস্যদের কার্যক্রমের ওপর একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করার প্রয়াস রয়েছে।
এ গবেষণায় জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কোন প্রকার আলোচনা বা মন্তব্য করা হয়নি, শুধুমাত্র সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। সুতরাং জাতীয় সংসদ অবমাননার প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক।
প্রশ্ন-২: এ গবেষণার প্রেক্ষাপট কী? গবেষণার পদ্ধতি কী? কিভাবে সংসদ সদস্যদের নির্বাচন করা হয়েছে?
উত্তর: নবম সংসদ গঠনের পর থেকে পরবর্তী তিন বছরে সংসদ সদস্যগণ তাদের মূল দায়িত্ব প্রত্যাশিত পর্যায়ে পালন করছেন না বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে (রোজেটি ও অন্যান্য, ২০১১; জাহান, ২০১১)। এসব গবেষণায় বর্তমান সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের সংসদে নিয়মিত অনুপস্থিতি, আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় তাদের ন্যুনতম অংশগ্রহণ, এবং সরকারের জবাবদিহিতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে না পারা। এছাড়াও সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন আইন-বহির্ভূত কর্মকা-, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম, এবং অনেক ক্ষেত্রে এসব কর্মকান্ডের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। প্রকাশিত সংবাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী (জানুয়ারি ২০০৯ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত) নবম সংসদের ১৮১ জন সদস্যের (সংসদ সদস্যদের ৫১.৭%) বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান গবেষণাটি হাতে নেওয়া হয় এবং টিআইবি কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায় নেতিবাচক কর্মকান্ডের পাশাপাশি সংসদ সদস্যগণ ইতিবাচক কর্মকান্ডেও জড়িত রয়েছেন। তবে নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িতদের আনুপাতিক হার পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হারের চেয়েও অধিক।
সর্ম্পূণ গবেষণাটি প্রাথমিক ও পরোক্ষ তথ্যের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত। সংসদে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত কার্যক্রম পর্যালোচনার ক্ষেত্রে টিআইবি’র পার্লামেন্টওয়াচ প্রতিবেদন থেকে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। সংসদের বাইরের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে দল-নিরপেক্ষ এবং সচেতন জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে দলগত আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্যের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সারাদেশের সাতটি বিভাগের ৪২টি জেলায় ৪৪টি দলগত আলোচনার আয়োজন করা হয়, যেখানে মোট ৬০০ জন আলোচক অংশগ্রহণ করেন। এসব আলোচনায় অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ছিলেন স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও অন্যান্য পেশাজীবী, এবং গণমাধ্যম কর্মী। এসব দলগত আলোচনায় যেসব সংসদ সদস্যের ওপর কোনো তথ্য আলোচকদের কাছে ছিল না, গবেষণার বিশ্লেষণে সেসব সংসদ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এভাবে মোট ১৪৯টি আসনের সংসদ সদস্যদের নিয়ে আলোচনা হয়, এবং আলোচকদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তথ্য ও মতামত গ্রহণ করা হয়।
প্রশ্ন-৩: এ গবেষণার ব্যবহৃত তথ্যের মান কিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে? দলগত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের কিভাবে বাছাই করা হয়েছে?
উত্তর: এ গবেষণার অধীনে স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত দলগত আলোচনায় যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা প্রত্যেকেই নিজ এলাকায় শিক্ষিত, দল-নিরপেক্ষ এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে শ্রদ্ধাভাজন ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি আলোচনায় সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, এবং দলের সবার পক্ষ থেকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি কোনো বিষয়ে কোনো আলোচক দ্বিমত পোষণ করে থাকলে তা-ও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, এবং বিশ্লেষণের সময় এই ভিন্নমতকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব আলোচনায় সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্যের ওপর তথ্য সংগ্রহ আলোচকদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা ও তথ্যভিত্তিক মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য নয় এমন কোনো তথ্য আমলে নেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন-৪: পূর্বের একটি গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে উচ্চ আদালত এর আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বর্তমান গবেষণার পদ্ধতি কতটুকু সঠিক?
উত্তর: যেকোনো সামাজিক গবেষণার পদ্ধতিতেই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকে এবং কোনো একটি সামাজিক গবেষণার পদ্ধতিই যে চূড়ান্তভাবে সঠিক তা দাবি করা যায় না। তবে গবেষকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় যেন তথ্যের সত্যতা, যথার্থতা, নির্ভরযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়। বর্তমান গবেষণার ক্ষেত্রেও গবেষণার আওতা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের (এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম পর্যালোচনা) ওপর তথ্য সংগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন দিক (তথ্যের উদ্দেশ্য ও প্রাপ্যতা, তথ্যের উৎস, তথ্যের উৎকর্ষ, গবেষণার সময়, অর্থায়ন) বিবেচনা করে বর্তমান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রশ্ন-৫: এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য কি জাতীয় সংসদের সকল সদস্যের জন্য প্রযোজ্য?
উত্তর: এ গবেষণায় দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করে সংসদ সদস্যদের বাছাই করা হয়নি বলে গবেষণার বিশ্লেষণকে সাধারণীকরণ (মবহবৎধষরুবফ) করা যাবে না। অর্থাৎ এটি নবম সংসদের সব সদস্যের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়, শুধুমাত্র যেসব সংসদ সদস্য এর অন্তর্ভুক্ত তাদের ক্ষেত্রে এই বিশ্লেষণ প্রযোজ্য। তবে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে সক্ষম।
প্রশ্ন-৬: জাতীয় সংসদের সদস্যদের ওপর কাজ করার অধিকার টিআইবি’র রয়েছে কি?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। জনগণ তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে এই সাংবিধানিক ক্ষমতা ভোগ করে থাকে এবং এই প্রতিনিধিত্ব হয়ে থাকে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে। কাজেই সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানার পূর্ণ এখতিয়ার জনগণের রয়েছে। জনগণের পক্ষ থেকে টিআইবি এ গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছে, এবং এ ধরনের উদ্যোগ অন্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিতে পারে।
প্রশ্ন-৭: এ গবেষণার মাধ্যমে টিআইবি কি বিরোধী দলের পক্ষে কাজ করছে?
উত্তর: টিআইবি’র কোনো কার্যক্রমই কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে পরিচালিত নয়। টিআইবি’র সকল কার্যক্রম দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে পরিচালিত। এ গবেষণাতেও সংসদ সদস্যদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক কর্মকা- সমান গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে, এবং এক্ষেত্রে কোনো একটি বিশেষ দলের সংসদ সদস্য বেশি মাত্রায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত কিনা তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন-৮: গণমাধ্যমের নিজস্ব এজেন্ডা আছে তা জেনেও টিআইবি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ওপর কেন নির্ভর করে?
উত্তর: বর্তমান গবেষণাটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন নির্ভর নয়। মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত দলগত আলোচনা থেকে প্রাপ্ত তথ্যই এখানে বিশ্লেষিত হয়েছে।
প্রশ্ন-৯: এই গবেষণা প্রতিবেদন কি রাজনীতিকদের চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে পরিচালিত? এই গবেষণা প্রতিবেদন কি আগামী নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে?
উত্তর: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংসদ কার্যকর করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল। এছাড়াও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সর্বসম্মত আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কথা বলা হয়, এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তনের কথাও বলা হয়। এসব বিষয়ের প্রেক্ষিতে বর্তমান সংসদের সদস্যরা প্রকৃতপক্ষে তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছেন তার একটি নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করাই এই গবেষণার উদ্দেশ্য। গবেষণায় এ বিষয়ে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো বিশেষ দলের সংসদ সদস্যদের নেতিবাচক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়নি। একইসাথে কোনো সংসদ সদস্যের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, যার ফলে বলা যাবে না কোনো রাজনীতিকের চরিত্র হরণ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আগামী নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার কোনো উদ্দেশ্য টিআইবি’র নেই, বা সেরকম কোনো ক্ষমতা টিআইবি’র আছে বলেও জানা নেই। যেহেতু সংসদের মেয়াদ এখন এক বছরেরও অধিক রয়েছে তাই উবহরধষ ংুহফৎড়সব এ না ভুগে যদি বর্তমান গবেষণার ফলাফলকে বস্তুনিষ্ঠভাবে গ্রহণ করা হয় তাহলে ইতিবাচক কর্মকা- বাড়িয়ে এবং নেতিবাচক কর্মকা- থেকে বিরত থেকে সংসদ সদস্যগণ নিজেদের পরবর্তী নির্বাচনের ফলাফলকে নিজেরাই প্রভাবিত করতে পারবেন এমন বিশ্বাস অযৌক্তিক হবে না।
প্রশ্ন-১০: এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৯৭ ভাগ সংসদ সদস্য নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত, ৫৩ ভাগ ইতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত। এর অর্থ কি যে ৪৪ ভাগ শুধু নেতিবাচক কর্মকান্ডেই জড়িত? এলাকায় কোনো ইতিবাচক কর্মকান্ডেই তারা নেই?
উত্তর: “৪৪ ভাগ সদস্য শুধু নেতিবাচক কর্মকান্ডেই জড়িত” এরকম গাণিতিক হিসাব সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে করা এ গবেষণার উদ্দেশ্য নয়। একজন সংসদ সদস্য একইসাথে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত থাকতে পারেন, এবং এ কারণেই এ গবেষণায় এভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কোনো একজন ব্যক্তিকে শুধুমাত্র ভাল বা শুধুমাত্র খারাপ এভাবে চিহ্নিত করা টিআইবি’র উদ্দেশ্য নয়।
প্রশ্ন-১১: মাননীয় স্পিকার বলেছেন তার এলাকায় ছয়জন সংসদ সদস্য আছেন, তিনি জানেন তারা সকলেই ভাল। টিআইবি’র প্রতিবেদন এই তথ্যের সাথে মেলে কি?
উত্তর: টিআইবি’র প্রতিবেদনে কে ভাল বা খারাপ তা চিহ্নিত করার উদ্দেশ্য ছিল না। সংসদ সদস্যগণ ব্যক্তিগতভাবে সবাই ভাল তা টিআইবি বিশ্বাস করে। তবে গবেষণার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট মানদ- ও নির্দেশক অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা কী ধরনের কার্যক্রমে জড়িত তা পর্যালোচনার সাথে ভাল বা খারাপের সম্পর্ক নেই, কারণ ভাল বা খারাপ এগুলো ব্যক্তিগত গুণাবলীর মূল্যায়ন। মাননীয় স্পিকারের সাথেও দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই যেহেতু তিনি ব্যক্তিগত গুণাবলীর মূল্যায়ন করে বলেছেন যে তাঁরা ভাল।
প্রশ্ন-১২: টিআইবি’র প্রতিবেদন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথা সংসদকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে কি? নাকি এটি দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ধ্বংস করে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র?
উত্তর: টিআইবি’র কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য দেশের রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, যার জন্য প্রয়োজন এসব প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ও শক্তিশালী করা। এ কারণে টিআইবি জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে কিভাবে আরও কার্যকর করা যায় তার ওপর নিয়মিত গবেষণা করে আসছে। টিআইবি আশা করে এসব গবেষণায় প্রস্তাবিত সুপারিশ অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। টিআইবি একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে এবং বাংলাদেশে এ ধরণের ব্যবস্থা যেন কার্যকর রূপ পায় সে লক্ষ্যেই টিআইবি কাজ করে চলেছে।
প্রশ্ন-১৩: মাত্র ৬০০ জনের মতামতের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ কি সঠিক হয়েছে?
উত্তর: প্রথমেই পরিস্কার করা প্রয়োজন যে, এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র ৬০০ জনের মতামতের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়নি। গবেষণার পদ্ধতিগত ভাষায় এই ৬০০ জন কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য ছিল প্রাথমিক তথ্য (Primary Data) যার মাধ্যমেজাতীয়দৈনিকসমূহহতে পূর্বেসংকলিতপরোক্ষতথ্য(Secondary data) একধরণেরযাচাই(Validation) হয়েছে।পত্রিকাসূত্রেপ্রাপ্তসংবাদপর্যালোচনাকরে দেখাযায় ৯মজাতীয়সংসদেরমোট ১৮১ জনসদস্যের(৩৫০ জনেরমধ্যে৫১.৭%) বিরুদ্ধেবিভিন্নধরণেরনেতিবাচককর্মকান্ডেরঅভিযোগরয়েছে।এইসকল সদস্যেরখুব কমসংখ্যকএইব্যাপারেপ্রতিবাদজানিয়েছেনবাআদালত/প্রেসকাউন্সিলেরশরণাপন্নহয়েছেন।মাঠ পর্যায়ে৪২টিজেলায়মোট ৪৪টিদলগতআলোচনারমাধ্যমেপ্রাথমিকতথ্যসংগ্রহকরা হয়। প্রাথমিকতথ্যবিশ্লেষণকরে দেখাযায় পত্রিকায়প্রকাশিতহারেরচেয়েওঅনেকঅধিকহারেনেতিবাচককর্মকান্ডেলিপ্তথাকারঅভিযোগএসেছে(১৪৯ জনসংসদসদস্যেরমধ্যে৯৭%; এদেরমধ্যেপত্রিকায়অভিযোগপ্রকাশিতহয়েছে৫৭.৭% সম্পর্কে)। সুতরাংমাঠ পর্যায়েপ্রাপ্ততথ্যসংবাদপত্রেপ্রকাশিততথ্যকেValidationবাপ্রমাণসিদ্ধতাপ্রদানকরছে।তবে মাঠ পর্যায়েপ্রাপ্ততথ্যেদেখাযায় সংসদসদস্যদেরঅর্ধেকেরওবেশী(১৪৯ জনেরমধ্যেপ্রায়৫৪%) ইতিবাচককর্মকান্ডেওজড়িতরয়েছেন।
প্রশ্ন-১৪: কারা এই তথ্য প্রদান করেছেন?
উত্তর: সংবাদপত্রে প্রাপ্ত সংসদ সদস্যদের নেতিবাচক কর্মকান্ড সংক্রান্ত তথ্য গবেষণার পদ্ধতি অনুসরণ করে যাচাই করবার জন্যে সারাদেশে ৪২ টি জেলায় ৪৪ টি দলগত আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে মোট ৬০০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাদেরকে নিম্নলিখিত যোগ্যতার/নির্দেশকের ভিত্তিতে বাছাই করা হয়। তাদের তথ্য প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে কিনা? এক্ষেত্রে বিবেচ্য হল:
vতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা
vসমাজের বিভিন্ন স্তরে তারা মেলামেশা করে কিনা
vতাদের দলনিরপেক্ষতা আছে কিনা
vতারা সমাজে সচেতন বলে পরিচিত কিনা
vতারা তথ্য জানেন কিনা
উল্লেখ্য যথাযথ তথ্য জানা নেই বলে তথ্যদাতারা তাদের এলাকার মোট ৭১ টি আসনের তথ্য প্রদান করেননি। শুধুমাত্র নিশ্চিত হয়ে তথ্য প্রদান করায় প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৯।
প্রশ্ন-১৫: দলগত আলোচনার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যটুকু গ্রহণযোগ্য?
উত্তর: দলগত আলোচনা সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সাধারণত একটি সমজাতীয় দলের(homogenous group) চিন্তা, মতামত, সন্তুষ্টি, তথ্য(information), মনোভাব(attitude), আচরণ(practice), সংঘটিতঘটনা(fact) প্রভৃতিবিষয়েতথ্যনেয়াসম্ভব।দলগতআলোচনারমাধ্যমেপ্রাপ্ততথ্যযখন অপর কোন পদ্ধতিতে(বর্তমানক্ষেত্রেযেমনপ্রায়তিন বছর সময়কালেজাতীয়দৈনিকসমূহেপ্রকাশিতসংবাদবিশ্লেষণেরমাধ্যমে) প্রাপ্ততথ্যেরদ্বারাপ্রমাণসিদ্ধহয়তখন তার গ্রহণযোগ্যতানিয়েপ্রশ্নতোলারঅবকাশখুব একটাথাকেনা।
প্রশ্ন-১৬: প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে কি সকল সংসদ সদস্য সম্পর্কে সাধারণীকরণ করা সম্ভব?
উত্তর: টিআইবি প্রতিবেদন প্রকাশের সময়েই বলেছে এই তথ্য দ্বারা সকল সংসদ সদস্য সম্পর্কে সাধারণীকরণ করা যাবে না। অর্থাৎ প্রাপ্ত ফলাফল শুধু ১৪৯ জন সদস্যের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু গণমাধ্যমের উপস্থাপনার পদ্ধতির কারণে এমন বক্তব্য এসেছে যে, টিআইবি’র গবেষণা অনুযায়ী ৯৭% সংসদ সদস্য নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত।
প্রশ্ন-১৭: সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫৩% সরাসরি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত?
উত্তর: প্রথমেই বলা প্রয়োজন এটি গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, টিআইবির প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়নি। গবেষণাভুক্ত ১৪৯ জন সদস্যের মধ্যে তথ্যদাতাদের মতে শতকরা ৯৭ ভাগ নেতিবাচক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন। এই ৯৭ ভাগের মধ্যে ৭৬.৬% অর্থাৎ ১১১ জন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত বলে জানা গেছে। এই ১১১ জনের মধ্যে ৫৩.৫% অর্থাৎ মোট প্রায় ৫৯ জন নিজেরাই সরাসরি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। অর্থাৎ ১৪৯ জনের মধ্যে ৩৯.৬% সরাসরি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত বলে তথ্যদাতারা জানিয়েছেন।
প্রশ্ন-১৮: এই গবেষণার ফলে সকল সদস্যকে হেয় করা হয়েছে কি? কোন ব্যক্তি বা সংসদ সদস্য অপমানিত হবার কারণ রয়েছে কি?
উত্তর: টিআইবির এই গবেষণার দ্বারা সকল সংসদ সদস্য হেয় বোধ করার কোন কারণ প্রকৃতপক্ষে নেই। টিআইবি তার গবেষণার মাধ্যমে বর্তমান ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছে এবং প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই ব্যবস্থার অবকাশে কোন কোন সদস্য নেতিবাচক কর্মকান্ডে লিপ্ত আছেন বলে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সকল সদস্য সম্পর্কে, অন্তত এই গবেষণা থেকে ঢালাওভাবে একথা বলার সুযোগ নেই। টিআইবির গবেষণার উদ্দেশ্য বর্তমান ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে সংসদ সদস্যদের কিভাবে আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণী ভূমিকায় নিয়ে আসা যায়। কোন ব্যক্তি বা সংসদ সদস্যের অপরাধ উন্মোচন এই গবেষণার উদ্দেশ্য নয়। গবেষণার ফলাফলও তাই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রশ্ন-১৯: সংসদ সদস্যদের ৯৭% শতাংশ ‘খারাপ’ মানে ৩% ভাগ অর্থাৎ মাত্র ৯ জন ভালো?
উত্তর: গণমাধ্যমের ভুলভাবে উপস্থাপনার জন্যে ৯৭% শতাংশ বলতে সকল সংসদ সদস্যের ৯৭% শতাংশ এ ধরণের ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে টিআইবির গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১৪৯ জন সদস্যের মধ্যে ৯৭% নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত। যদি সকল সদস্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাহলে অনুরূপ ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন-২০: ইতিবাচক কাজ বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: সংসদ সদস্য কর্তৃক ইতিবাচক কর্মকান্ডের তালিকায় নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি বরাদ্দ, অনুদান, সেতু নির্মাণ, সংস্কার প্রকল্প অনুমোদন, বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজ অন্যতম। এছাড়া নদী ভাঙ্গনরোধ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক কার্যক্রম হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রশ্ন-২১: নেতিবাচক কাজ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: নেতিবাচক কর্মকান্ডের দীর্ঘ তালিকা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্থানীয় উন্নয়ন বরাদ্দ নিজ কাজে ব্যবহার, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত হওয়া উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্ন-২২: অপরাধমূলক কাজ বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: অপরাধমূলক কর্মকা- বলতে বোঝায় হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ, দখল (সরকারি খাস জমি, নদী, খাল, জলমহাল, পুকুর), চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রতারণা ইত্যাদি।