FAQ on election time Government, 2013

Published: 12 April 2013

বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা: প্রক্রিয়া ও কাঠামো প্রস্তাবনা

সম্ভাব্য প্রশ্ন ও উত্তর

১. টিআইবি কেন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে কার্যপত্র প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে?

গণতন্ত্র চর্চায় অন্যতম এক পদ্ধতি হচ্ছে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে দায়িত্ব হস্তান্তর অপরিহার্য। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বিভিন্ন সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আগামী দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কার অধীনে হবে সে বিষয়েও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারের প্রস্তাবিত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচনী অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে না এ মর্মে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে অন্যতম সহায়ক উপাদান সি'তিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, জাতীয় সংসদসহ গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার সকল মৌলিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকরতা এবং কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানীকরণের স্বার্থে যথাসময়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবাধ, সুষ্ঠ, অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হস্তান্তর ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত গবেষণা ও তার ভিত্তিতে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমের অংশ  হিসেবে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য বর্তমান সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিসি'তিতে সংশ্লিষ্ট সকলের বিবেচনার জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের সম্ভাব্য কাঠামো ও প্রক্রিয়া প্রস্তাব করে এই কার্যপত্রটি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

২. টিআইবি প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো ও প্রক্রিয়া অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে প্রচলিত আছে কি?

কিছু দেশে দলীয় সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। যেমন ভারতে সংসদ বিলুপ্তির পর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঐ সরকারই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে ক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যবহার করে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে। একইভাবে অস্ট্রেলিয়াতে পরবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল সাধারণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে পাকিস্তানে যে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রচলিত আছে তা কাদের নিয়ে গঠিত হবে সে বিষয়টি সব দল মিলে ঠিক করে। তবে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে ধরনের পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ প্রয়োজন, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর চর্চা ও আচরণ তার জন্য অনুকূল নয়। নির্বাচনী ফলাফলকে একদিকে প্রভাবিত করা এবং অন্যদিকে গ্রহণ না করার মানসিকতার কারণে নির্বাচনকালীন সরকারের ওপর আস্থার অভাব একটি সাধারণ প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। তাই টিআইবি এরকম নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো ও প্রক্রিয়া প্রস্তাব করছে।

৩. কোনো বিশেষ পক্ষকে বিবেচনা করে এ কার্যপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে কি?

টিআইবি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তিবর্গকে বিবেচনা করে কোনো গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে না। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অন্যতম পূর্বশর্ত নির্বাচন যেন অবাধ, নিরপেক্ষ, ও সকলের অংশগ্রহণমূলক হয় সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের বিবেচনার জন্যে এই কার্যপত্রটি প্রণয়ন করা হয়েছে।  জনপ্রতিনিধিদের ঐকমতের  উপর প্রাধান্য দিয়ে সম্পুর্ন বস্থনিষ্ঠতার সাথে সকল পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্যতার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৪. যদি সরকার বা বিরোধী দল টিআইবি প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো ও প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে বা প্রত্যাখ্যান করে তবে টিআইবির প্রতিক্রিয়া কি?

টিআইবির প্রত্যাশা সরকার ও রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার কার্যপত্রে উপস্থাপিত প্রস্তাবনা গুরুত্বের সাথে বিবেচনার মাধ্যমে  অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনুকূল নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র সুসংহত করতে সহায়তা করবেন।  টিআইবির প্রস্তাবনা সকলেই বিবেচনা করে চলমান জটিলতা নিরসনে সচেষ্ট হবেন-এটাই টিআইবির প্রত্যাশা । প্রস্তাব পরিপূর্ণভাবে গৃহিত বা প্রত্যাখাত হবে তা বিবেচ্য নয়।

৫. এ ধরনের গবেষণার এখতিয়ার টিআইবির আছে কি?

 দুর্নীতি প্রতিরোধে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার  অন্যতম পৃর্বশর্ত জবাবদিহিতামুলক গণতন্ত্র।  ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কিত গবেষণা ও তার ভিত্তিতে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ গবেষণাটি করেছে।

৬. টিআইবি কি প্রকারান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সমর্থন করছে?

টিআইবির মুল বিবেচ্য নির্বাচনকালিন সরকারের কাঠামো ও প্রক্রিয়া ও এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিত্বের পা্রধান্য। বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এবং এ পর্যন্ত প্রচলিত দুই ধরনের নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে ভারসাম্যমূলক এ নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো ও প্রক্রিয়া প্রস্তাব করছে। এখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রাধান্য দিয়ে তাদের মতামতের প্রেক্ষিতে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

৭. বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংসদীয় ঐকমত্য কমিটি গঠন করার বিষয়টি প্রত্যাশা করা যায় কি?

গণতান্ত্রিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক মুল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার মাধ্যমে  অবশ্যই সম্ভব। টিআইবির প্রত্যাশা সরকার ও রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার কার্যপত্রে উপস্থাপিত প্রস্তাবনা গুরুত্বের সাথে বিবেচনার মাধ্যমে  অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনুকূল নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি এবং গণতন্ত্র সুসংহত করতে সংসদীয় ঐকমত্য কমিটি গঠন করার বিষয়ে উদ্যোগী হবেন। কারণ রাজনৈতিক সমঝোতা ও আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের পূর্ব অভিজ্ঞতায় রাজনৈতিক সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে অনেক সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে দেখা গেছে এবং অন্যদিকে আলোচনা ও সমঝোতার অনুপস্থিতিতে সংঘাত ও বিপর্যয় ঘটেছে।

৮. টিআইবি প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থায় দুটি পর্যায় প্রস্তাব করার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি কি জটিল করা হল?

এ প্রক্রিয়াটি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে দুটি পর্যায় প্রস্তাব করা হয়েছে। একদিকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের  ভূমিকাকে একক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে অপরদিকে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনায় একইভাবে যেমন জনপ্রতিনিধিদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তেমনি প্রয়োজনে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট করবার সুযোগ রাখা হয়েছে । নির্বাচনকালীন সরকারের সদস্য কারা হবেন  তা নির্বাচনে সংসদীয়  ঐকমত্য কমিটি যেহেতেু মূল ভূমিকা পালন করবেন তাই গ্রহণযোগ্যতার সম্ভাবনা উত্তম। তবে টিআইবি মনে করে গোটা প্রক্রিয়াটির সাফল্য অবশ্যই সকল পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল ।


Position Paper