প্রকাশকাল: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে ”
ধারণাপত্র
২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। যার পেছনে টিআইবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি ‘‘জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদের দ্বিতীয় ও পঞ্চম অধ্যায় বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি’’ শীর্ষক একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিআইবি। প্রতিবেদন অনুযায়ী শক্তিশালী আইনি-কাঠামো থাকা সত্ত্বেও কার্যকর পদক্ষেপ ও সক্ষমতা, সমন্বয়হীনতা এবং সদিচ্ছার অভাবে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের প্রতিশ্রুতি পূরণে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সদিচ্ছা ও দক্ষতার ঘাটতি, বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক ও নির্বাহী বিভাগের প্রভাবের অভিযোগ এবং একটি কার্যকর জবাবদিহিমূলক-কাঠামোর ঘাটতির কারনে দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশ তার অঙ্গীকার পূরণ করতে পারেনি।
সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতিতে দুর্নীতি বলতে গেলে প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে, যা আমাদের গৌরবময় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গৌরবকে ম্লান করে দিচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রকাশিত ‘‘দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০২২’’ এ বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ২৫, যা বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩-এর তুলনায় অনেক কম এবং গত এক দশক-যাবত দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে আছে। অন্যদিকে ২০২১-এ টিআইবি কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় খানা জরিপের ফল বলছে, দেশে ৭০.৯ শতাংশ খানাই দুর্নীতির শিকার। উদ্বেগের বিষয়, যে সকল খানা সেবা পেতে গিয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের ৭২ শতাংশের বেশি উত্তরদাতার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ঘুষ দেওয়া ছাড়া সেবা পাওয়া অসম্ভব। অর্থাৎ সেবাখাতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অব্যাহত রয়েছে। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর। দেশের ৮৯ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী মনে করছে দুর্নীতি তাঁদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এর সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত অর্থ পাচার পুরো দেশের অর্থনীতিকেই চাপের মখে ফেলে দিয়েছে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেটি এর প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিবছর ৮.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এড়াতে আইএমএফের কাছ থেকে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে আমাদের কতই-না কাঠ-খড় পোঁড়াতে হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার সংস্কৃতি এতোটাই প্রকট যে, ব্যাংকিং খাতে রেকর্ড হচ্ছে প্রতিবছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১০.১১ শতাংশ। আবার ঋণের অর্থ হুন্ডিসহ অন্যান্য মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান হলেও প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব ঘটনা রোধে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ়তা বা দৃষ্টান্ত তৈরির চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে না।
পুরো ধারণাপত্রের জন্য এখানে ক্লিক করুন