প্রকাশকাল: ১৪ আগস্ট ২০২৩

জাতীয় শোক দিবস
জীবনের সর্বক্ষেত্রে অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কীভাবে সোচ্চার থাকতে হয়, বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় তিনি তা দেখিয়েছেন, যা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘‘দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন : অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু’’ শীর্ষক আালোচনা সভায় উল্লিখিত মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির কর্মীবৃন্দ। ১৪ আগস্ট, টিআইবির ৪৫টি কর্ম এলাকা ও ঢাকা অফিসের সকল কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মিশ্র-পদ্ধতিতে (সশরীর ও ভার্চুয়াল) আয়োজনের মধ্য দিয়ে গভীর শ্রদ্ধাভরে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্ট নিহত তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চলনায় ‘‘এক-মিনিট নীরবতা’’ পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শোক দিবসের আয়োজনে টিআইবির উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ফারহানা ফেরদৌস, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম, অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মেহবুব এলাহী এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামানসহ সংস্থাটির সর্বস্তরের কর্মীগণ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতির পিতা ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা, শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হিসেবে একটি বিরল ঘটনা। এই দিনটি অতন্ত শোকের, ক্ষোভের ও বিব্রতকর। টিআইবির কার্যক্ষেত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর জোরালো কন্ঠ ছিলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে। ছাত্রজীবন, পাকিস্তান পর্ব ও স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন এবং প্রত্যয় নিয়েছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে-বাস্তবায়নের সুযোগ তিনি পাননি। কিন্ত তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণীত করে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র চিন্তা ও রাজনৈতিক আদর্শের ব্যাপ্তি বিশাল-এক অর্থে সীমাহীন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সবসময় জোরালো বক্তব্য রেখেছেন এবং সুযোগ পেলেই তিনি সেগুলো বলতেন। ১৯৭৫ সালের একটি ভাষণে তিনি বলেছিলেন-৭১ এ আমি আহ্বান জানিয়েছিলাম প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার জন্য, আজকে আমাদের প্রাধান্য হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। আমি আইন করবো, কাউকে ছাড় দেব না। তবে আমি একা পারবো না...দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেছিলেন দেশের বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষেরা এই আন্দোলন করবে, কিন্তু তিনি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন তরুণদের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে চারটি উপাদান দরকার- রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সামাজিক আন্দোলন। প্রথম তিনটি উপাদান অপরিহার্য কিন্ত যথেষ্ট নয়। দুর্নীতিকে রুখতে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন রয়েছে এবং এর জন্য মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সেই কারণে সামাজিক আন্দোলনকে ধারণ করে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সনাক, ইয়েস, এসিজি করা হয়েছে। তিনি বলেন চারটি উপাদানকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি বিরোধী যে সামাজিক আন্দোলন, সেটির তুলনা বঙ্গবন্ধুর ভাষণেও পাওয়া যায়।
ড. জামান গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত করা হয়েছে। তার আদর্শিক জায়গা থেকে সরে গিয়ে আমরা শুধুমাত্র দুর্নীতিবিরোধী ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকি। যা বলি- তা বাস্তবায়ন করি না। তার যে দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার ও দিক-নির্দেশনা ছিল সেগুলো রাষ্ট্র কাঠামো ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ ছিল, কিন্তু সেটি করা হয়নি। এটি আমাদের জাতীয়ভাবে বড় ধরনের ব্যর্থতার জায়গা। এ কারণে দুর্নীতি বিকশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘‘দুর্নীতির বিরোধী শূন্য সহনশীলতা’’ নীতি যাদের ওপর বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব, তাদের অনেকেই দুর্নীতির অংশীদার।’
টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর যে ইন্ডেমনিটি করা হয়েছিল, সেটি ছিল মানবাধিকারের লঙ্ঘন, অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার ও দুর্নীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বঙ্গবন্ধু সবসময় ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। অন্যায়ের সঙ্গে তিনি কখনো আপোস করেননি। অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কীভাবে সোচ্চার থাকতে হয়, সেটি তিনি দেখিয়েছেন, যা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের রাজনীতি পর্যন্ত তিনি পুরো রাজনৈতিক জীবনে যে সংগ্রাম করেছেন, সেখানে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়েছেন।’

টিআইবি মনে করে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জায়গা থেকে একটি কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্ত সেখানে সহযোগিতার পরিবর্তে প্রতিকূলতা দেখা যায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে, প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সেগুলোকে এখন ‘সোর্স অব থ্রেট’ মনে করা হচ্ছে, যা দুঃখজনক।

দিবসটি উপলক্ষে টিআইবি ঢাকা ও ৪৫টি কর্ম এলাকায় জাতীয় শোক দিবসের ব্যানার প্রদর্শন ও কালো ব্যাজ ধারণ; সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস), অ্যাকটিভ সিটিজেনস গ্রুপ (এসিজি) সদস্যদের অংশ্রগহণে ‘‘দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন : অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু’’ শীর্ষক আলোচনা সভা; তরুণ ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রচনা, কুইজ, চিত্রাঙ্কন ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা; ওয়েবসাইটে শোক দিবসের ব্যানার প্রদর্শন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘‘বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একসাথে’’ শীর্ষক প্রচারণা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।