Global Corruption Barometer 2012: Corruption increases, bribery reduces slightly (Bangla)

 টিআই’র বৈশ্বিক জরিপের ফল প্রকাশ

 ধারণার বিচারে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে, তবে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ঘুষ প্রদান সামান্য কমেছে

ঢাকা, ৯ জুলাই ২০১৩:ধারণার বিচারে বাংলাদেশে দুর্নীতি সার্বিকভাবে বাড়লেও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সরকারি সেবাখাতে ঘুষ দেওয়ার হার সামান্য হলেও কমেছে। ধারণার বিচারে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত/প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে রাজনৈতিক দল ও পুলিশ এবং এরপরে রয়েছে বিচার। আজ বিশ্বব্যাপী একযোগে প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এর ‘গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার ২০১২’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটারে বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রকাশ উপলক্ষে ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ উত্তরদাতাদের ধারণায় ২০১১-১২ সালে বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা বেড়েছে। তবে একই জরিপে তথ্যদাতাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালের তুলনায় সরকারি ৮টি সেবা খাতে ঘুষের হার কিছুটা কমেছে। এই ৮টি খাত হলো: পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, ভূমি-সেবা, রেজিস্ট্রেশন ও পারমিট সেবা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষা, পরিসেবা এবং কর।

বার্লিন-ভিত্তিক টিআই ১০৭টি দেশের ১ লক্ষ ১৪ হাজার ২৭০ জনের ধারণা ও অভিজ্ঞতার ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে। বাংলাদেশে ১৮২২টি খানার নির্বাচিত তথ্যদাতাদের কাছ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তথ্য সংগৃহীত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক প্রতিবেদনের বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক রফিকুল হাসান এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহ্‌নূর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের।

. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের জন্য আশার বিষয় হচ্ছে জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে আগ্রহী। কিন্তু তারা এবিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সক্রিয় সাড়া বা সহযোগিতা পাচ্ছে না। আমরা মনে করি জনগণ, সরকার এবং রাজনীতিবিদদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই বাংলাদেশের দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব।”

উল্লেখ্য, গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার ২০১২ তে দুর্নীতির ধারণার মধ্যে ক্ষুদ্র, বৃহৎসহ সব ধরনের দুর্নীতি এবং গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞ মতামত অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে দুর্নীতির অভিজ্ঞতা বলতে ক্ষুদ্র আকারের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে বুঝানো হয়েছে।

৯৩% তথ্য দাতাদের ধারণায় বাংলাদেশে সর্বোচ্চ দুর্নীতি প্রবণ খাত/প্রতিষ্ঠান হল রাজনৈতিক দল ও পুলিশ এবং ৮৯% তথ্য দাতার ধারণায় এর পরের অবস্থান বিচারের। অন্যদিকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শীর্ষ ঘুষ গ্রহীতা খাতগুলো হল: পুলিশ (৭২%), বিচার ব্যবস্থা (৬৩%) ও ভূমি সেবা (৪৪%)। উল্লেখ্য, ঘুষ প্রদানের কারণ হিসেবে ৫৮% মনে করেন সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এটাই একমাত্র পথ। টিআইবি’র পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপ ২০১০ এর তুলনায় ২০১২ তে সেবাখাতে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দেওয়ার হারও তুলনামূলকভাবে কমেছিল।

উত্তরদাতাদের ৭৬% বাংলাদেশে সরকারি খাতের দুর্নীতিকে খুবই গুরুতর সমস্যা বলে মনে করেন। বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন সরকারি সেবা খাতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা মতে, সরকার বিশেষ মহল বিশেষতঃ রাজনৈতিক দল বা কর্মী এবং বিশেষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী দ্বারা বিভিন্ন মাত্রায় প্রভাবিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের তথ্যদাতাদের ৯২ শতাংশ মনে করেন সাধারণ জনগণ দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে এবং তথ্যদাতাদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে চান।

দুর্নীতির ঘটনা জানানোর ক্ষেত্রে উত্তরদাতাদের ৩১.% জনপ্রতিনিধিদের ওপর আস্থাবান। ১৮.% জনের আস্থা নিয়ে ২য় অবস্থানে রয়েছে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। দুদকের কাছে জানাতে চান ১১.%

জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের তথ্যদাতাদের ৩২% অভিমত হল দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি পদক্ষেপ অকার্যকর। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জরিপে ৫০% উত্তরদাতা মনে করতেন দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। ২০১২ সালের জরিপে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি পদক্ষেপের ওপর আস্থা রেখেছেন মাত্র ২৬% উত্তরদাতা।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি টিআইবি’র পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক, নীতি-নির্ধারণী পর্যায় এবং সচেতনতা, প্রচারণা ও অ্যাডভোকেসি বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশমালা তুলে ধরে গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আস্থা ও বিশ্বাস উদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

Media Contact


Press Release