ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে রুপালী ব্যাংকের ন্যক্কারজনক প্রস্তাব নাকচ করে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে টিআইবির আহ্বান; ব্যাংকিং খাত সংস্কারে দ্রুত স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য আবারো জোরালো তাগিদ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে রুপালী ব্যাংকের ন্যক্কারজনক প্রস্তাব নাকচ করে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে টিআইবির আহ্বান; ব্যাংকিং খাত সংস্কারে দ্রুত স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য আবারো জোরালো তাগিদ
ঢাকা, ০৬ অক্টোবর ২০১৯: ব্যাংকিং খাতে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের বিদ্যমান সব নীতিমালা অগ্রাহ্য করে বস্ত্র খাতের একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে রুপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশ ব্যাংকে যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তাকে ন্যক্কারজনক বলে অভিহিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এই প্রস্তাব নাকচ করে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রুপালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের ভয়াবহ দুর্গতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছে টিআইবি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “মাদার টেক্সটাইলের ঋণ পুনঃতফসিলের প্রস্তাব সংক্রান্ত যে খবর বেরিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কোম্পানিটি সাতবার পুনঃতফসিলের সুবিধা পেলেও ঋণ পরিশোধের কোনো আগ্রহ দেখায়নি গেলো দুইযুগে। তারপরও রুপালী ব্যাংক পর্ষদ সম্পূর্ণ সুদ (৪শ কোটি টাকা) মওকুফ করে আসল আদায়ে দীর্ঘমেয়াদি (২০৪০ সাল পর্যন্ত) সুযোগ দেওয়ার অভাবনীয় সুপারিশ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা আরো জানতে পেরেছি যে, এহেন ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য নূন্যতম অর্থ (মোট ঋণের ৫ ভাগ) এককালীন পরিশোধের যে ব্যাংকিং নিয়ম রয়েছে তাও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ যেভাবে বিদ্যমান সব নীতিমালা অগ্রাহ্য করে এই প্রস্তাব দিয়েছে তাতে প্রমাণ হয় যে, তারা কার্যত কায়েমি স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা ন্যূনতম পেশাদারিত্ব দেখানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করে জনগণের আমানতের টাকা যেভাবে লুটপাট করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারেনা- এমন মন্তব্য করে ড. জামান রুপালী ব্যাংকের প্রস্তাবটি নাকচ করে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলছেন, “প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখা সমীচীন হবে না। বরং এমন বিধিবহির্ভূত প্রস্তাব আসার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে হবে এবং পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো যোগসাজশের ঘটনা ঘটে থাকলে বা পরিচালনা পরিষদের উক্ত সুপারিশের পেছনে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকলে তা চিহ্নিত করে কঠোর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংকিং খাতে যে অশুভ আঁতাত চলছে তার রাশ এখনই টেনে ধরার আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “ব্যাংকিং খাত সংস্কারে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই যে, সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের জন্য খাত সংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অতি দ্রুত একটি কমিশন গঠন করবেন; যারা বাস্তবতার নিরিখে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা পেশ করবেন, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তা বাস্তবায়ন করবেন।”