সংবিধান পরিপন্থি ও বৈষম্যমূলক বিধি রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন’ কার্যকর হওয়া উদ্বেগজনক: টিআইবি
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
সংবিধান পরিপন্থি ও বৈষম্যমূলক বিধি রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন’ কার্যকর হওয়া উদ্বেগজনক: টিআইবি
ঢাকা, ৩০ সেপ্টম্বর ২০১৯: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের মূলচেতনা ও অভীষ্টের পরিপন্থি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের পূর্বানুমতির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর কার্যকর করার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দক্ষ, জনবান্ধব, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন নিশ্চিত করতে আইনের চোখে ‘সকল নাগরিক সমান’ অধিকারের যে সাংবিধানিক বিধান তার সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে ১ অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হওয়ার যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ সাধারণ জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক বিধানাবলী রেখে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত সংবিধান পরিপন্থি। আইনটি এভাবে কার্যকর হলে বর্তমান সরকারের আমলেই প্রণীত ও বাস্তবায়নরত ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ এর সাথেও এটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হবে। তাছাড়া, ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের পূর্বে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণের বিধান ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৫৪ ধারার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।”
‘দুর্নীতিবাজ ও অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে’ মর্মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তার প্রতি আস্থা রেখে ড. জামান বলছেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জোরালোভাবে ‘শূন্য সহনশীলতার’ ঘোষণা এবং সরকারের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান জনমনে যে প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে, এই আইনটি কার্যকর হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। এছাড়া, বিতর্কিত বিধানটি দুদকের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করে সম্পূর্ণ অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।”
উল্লিখিত বিধানটি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, স্বচ্ছতা, উন্নততর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিতের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “সরকারি চাকরি আইন নামটিই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই আইনটির নাম হওয়া উচিত ‘জনপ্রশাসন আইন’। তাই আমরা পুনরায় আইনটির নাম সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া, গ্রেফতারের পূর্বে সরকারের অনুমতি গ্রহণের বিধানটি বাস্তবে সরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধের পরিবর্তে আইনের ছত্রছায়ায় এ ধরনের অপরাধের সুরক্ষা ও এর ব্যাপকতা বাড়ার ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পাবে বিধায় তড়িঘড়ি করে আইনটি কার্যকর করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। একইসাথে, আইনটির পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণের দাবি পুর্নব্যক্ত করছি”
উল্লেখ্য, ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ তে উল্লিখিত বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বিধানাবলী রেখে ২১ অক্টোবর ২০১৮ জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হওয়ার প্রেক্ষিতে টিআইবি ২২ অক্টোবর ২০১৮ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনটি পাশ না করার জন্য জাতীয় সংসদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায়, ২৩ জুন ২০১৯ ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার: নীতি ও চর্চা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় আইনটির নাম পরিবর্তন করে ‘সরকারি’ শব্দটির পরিবর্তে ‘প্রজাতন্ত্র’ এবং উল্লিখিত ‘সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের অনুমতি রাখার’ বিধানটি বাতিল করার জোর দাবি জানিয়েছিল।