সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
তথ্য অধিকার আইন কার্যকরে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি টিআইবির
ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯: তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগে সকল অংশীদারগণ - নাগরিক, সরকার, তথ্য কমিশন এর সংক্রিয় ভূমিকা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর অভীষ্ট অর্জন সম্ভব। জনগণকে এই আইন ব্যবহারে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংগঠন এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস ২০১৯ এবং তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ১০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ: আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক’ এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
সরকারি, বেসরকারি ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বিত উদ্যোগ ও তথ্য অধিকার আইনের দশ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এর বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারনের ওপর গুরুত্বারোপ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইনের প্রথম দশকে বেশ ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে তবে তা এখনও প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌছাতে পারে নি। যদিও অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য ১০ বছর খুব বড় একটা সময় নয়।’
সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যে গোপনীয়তার সংস্কৃতি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তথ্য যে জনস্বার্থে জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশযোগ্য একটি বিষয়, এবং তা জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত, এ উপলব্ধি ও চর্চা অপরিহার্য। তথ্য কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সম্পৃক্ততায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘার্ষিক আইন বিশেষকরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যা বাকস্বাধীনতা ও তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনাকে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে তাকে ঢেলে সাজাতে হবে।’
বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ১০০ জন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন, যেখানে ৮৯ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনযাপনে দুর্নীতির শিকার হয়ে থাকে। এছাড়া তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জানেন মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ, তন্মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষ পরিষ্কার ধারণা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, জরিপকৃতদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন, তথ্যের ফলে দুর্নীতি কমে বলে বিশ্বাস করেন। অন্যদিকে, রাজনৈতিক আন্দোলন তেমন কার্যকরি নয় কেননা জরিপকৃতরা বিশ্বাস করেন বেশিরভাগ রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ। বরং তারা সামাজিক আন্দোলনের প্রতি তাদের আস্থা বেশি। তাছাড়া, তথ্য অধিকার আইনকে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শও দেয়া হয় জরিপে। তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকান্ডে জনগণের অধিকার সচেতনতা ও অংশগ্রহণ করার পদ্ধতি হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন। একে কার্যকর করার মাধ্যমে জনগণ সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারে। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. অনন্য রায়হান, প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য, পরিচালনা পর্ষদ, ডি’নেট এবং টিআইবি উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
মূল প্রবন্ধের সমর্থন করে ড. অনন্য রায়হান বলেন, ভিন্নমত প্রকাশের যে স্বাধীনতা তা ভীষণভাবে সংকুচিত হয়েছে। আর সেই অবস্থার উন্নতি সম্ভব যদি তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ করা যায়। গণমাধ্যমকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বড় বড় যে দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমকর্মীদের জন্যই জনগণ জানতে পেরেছে।’ এছাড়া তিনি তথ্য সংরক্ষণ ও এর নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আমন্ত্রিত অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ও বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিবর্তন; তথ্য কমিশনের কার্যক্রমের গতিশীলতা ও কার্যকরতা বৃদ্ধির লক্ষে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সম্পৃক্ততায় কমিশনের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং বার্ষিক জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিতের উদ্যোগ; তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিধান; তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থি’ বিদ্যমান আইনসমূহ সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল, যেমন- জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ৩২ ধারাসহ বাকস্বাধীনতার পরিপন্থি অন্যান্য ধারা; সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে পরবর্তী দশকের জন্য বাস্তবায়ন কৌশল এবং আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ; দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান ও তথ্য প্রদানে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অর্জনে বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার; তথ্য অধিকার আইনের অধিকতর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রমে সুশীল সমাজ, জনগণ ও গণমাধ্যমের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
শেখ মনজুর-ই-আলম
পরিচালক-আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭০৮-৪৯৫৩৯৫
ইমেইল: manjur@ti-bangladesh.org