সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার আহ্বান
ঢাকা, ৩০ জুন ২০১৯: প্রস্তাবিত স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯ এর খসড়ায় অস্পষ্ট ও অনেকক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক ধারা সন্নিবিষ্ট হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ধরনের ধারাগুলো পরিবর্তন, পরিমার্জন ও বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে কর্মরত দেশি ও বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে খসড়াটি ঢেলে সাজিয়ে অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে।
আজ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা জানতে পেরেছি যে, সম্প্রতি বাংলাদেশে কর্মরত দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি সেচ্ছাসেবী ও সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি নতুন আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, এর বেশ কয়েকটি ধারা-উপধারা এসব সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাপক বাধা সৃষ্টি করবে। এছাড়া কয়েকটি ধারা-উপধারা ও শব্দের ব্যাখ্যায় অস্পষ্টতা থাকায় আইনটি অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। বিশেষ করে, আইনের ধারা ১১(১ ও ২)-এ নিবন্ধিত সব সংস্থাকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নতুন করে নিবন্ধন নবায়নের বিধান এবং যথাসময়ে নবায়নে ব্যর্থ হলে বা আবেদন প্রত্যাখাত হলে সংস্থাটি বিলুপ্তি ঘোষণার বিধান; ধারা ১৭(১, ২, ৩) অনুযায়ী কোনো সংস্থার ‘কারণ দর্শানো’ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সে সংস্থার নিবন্ধন বাতিল এবং নিবন্ধন বাতিলের তারিখ থেকে সংস্থাটি বিলুপ্তির বিধান; এসব প্রতিষ্ঠানের জনকল্যাণমুখী উদ্যোগের অযাচিত অবসান, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উপকারভোগী ও কর্মীদের অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বেচ্ছাচারিতার আশংকা সৃষ্টি হবে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।”
বাংলাদেশে কর্মরত উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পক্ষে আরো বলা হচ্ছে, “খসড়া আইনের ধারা ৩ অনুযায়ী আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে। আবার ধারা ৪(১)- অনুযায়ী এই আইনের বিধানাবলী অনুসরণ না করে কোনো সংস্থা প্রতিষ্ঠা বা তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে না। যা সংবিধান পরিপন্থী এবং প্রচলিত ট্রাস্ট অ্যাক্ট, ১৮৮২; বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬; সোসাইটিজ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০ ও সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ সহ একাধিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বিদেশি সহায়তায় পরিচালিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে নিবন্ধিত হলেও, তাদেরকেও এই আইনের আওতায় নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এছাড়া, খসড়া আইনে বিদেশি সহায়তায় পরিচালিত এনজিওগুলোর জন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পাশাপাশি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠানের ওপর দুটি সরকারি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের এই ব্যবস্থা দ্বৈত শাসন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বৃদ্ধি করবে, যাতে সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর কার্যক্রম স্থবির হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।”
এছাড়া, উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যএলাকা সীমিত করে দেওয়ার যে বিধান প্রস্তাব রাখা হয়েছে তা কার্যত অবাস্তব বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, “খসড়া আইনের ধারা ১০ এর উপধারা-১ অনুযায়ী নিবন্ধনের সময় সংস্থার কার্যএলাকা নির্ধারণ করতে হবে এবং প্রাথমিকভাবে ১ (এক)টি জেলার বেশি কার্যএলাকা নির্ধারণ করা যাবে না; এবং উপধারা-৩ এ সংস্থা নিবন্ধনের পর একবারে অনধিক ৫ জেলায় কার্যএলাকা সম্প্রসারণের জন্য মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করার বিধান রাখা হয়েছে। বিদেশি অনুদানে পরিচালিত এনজিও এবং দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত দেশিও এনজিওসমূহের কার্যক্রম পরিচালনায় ধারাটির সংশ্লিষ্ট উপধারাসমূহ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।” তাছাড়া, ধারা ১৫ তে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর সাথে সাংঘর্ষিক ‘কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় বা জনস্বার্থে অন্যদের জানানো সমীচীন নহে’ এবং ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে’ প্রভৃতি শর্ত যুক্ত করে তথ্য-উপাত্ত জানার মৌলিক জন-অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে বলে মনে করছে এসব দেশি ও বিদেশি উন্নয়ন সংস্থা।
এধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধান রেখে খসড়া তৈরি করাকে হতাশাব্যঞ্জক বলে মন্তব্য করেছেন উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠান বরাবর সহায়ক শক্তির ভূমিকা পালন করে এসেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকার অংশীদারিত্বের চেতনা থেকে সরে এসে উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণ করার পথই হয়তো বেছে নিচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯- এই নামকরণেই তার প্রতিফলন ঘটেছে এবং প্রস্তাবিত ধারা-উপধারা বিশ্লেষণ করে আমরা এই আশঙ্কাকে অমূলক বলে নাকচ করে দিতে পারছি না।”
নতুন আইনটি চূড়ান্ত করার আগে দেশি ও বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটির অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অস্পষ্ট ধারাসমূহ বাদ দিয়ে খসড়াটি নতুন করে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরকারী সংস্থাসমূহ:
ব্র্যাক; নিজেরা করি; মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক); ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশ; অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভলপমেন্ট এজেন্সিস ইন বাংলাদেশ (এডাব); অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি); বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা); বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট); গণসাক্ষরতা অভিযান; বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস); সেন্টার ফর সোস্যাল অ্যাক্টিভিজম; ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি); খ্রীস্টিয়ান কমিশন ফর ডেভলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি); মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ); অক্সফাম বাংলাদেশ; অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ; ওয়াটার এইড বাংলাদেশ; কনসার্ন ওয়াল্ড ওয়াইড; প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন; সাইট সেইভারস্; সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল মিনিস্টিরিজ (এসআইএম বাংলাদেশ); ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস (সিআরএস বাংলাদেশ); ল্যাম্ব
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
শেখ মনজুর-ই-আলম
পরিচালক-আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
মোবাইল: ০১৭০৮-৪৯৫৩৯৫
ইমেইল: manjur@ti-bangladesh.org