সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
কালোটাকা সাদা করার পক্ষে অযৌক্তিক ও অযাচিত সমর্থন দিচ্ছে বিতর্কিত প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স; দুর্নীতির সুরক্ষা নয় বরং দমনই প্রত্যাশিত: টিআইবি
ঢাকা, ১৯ জুন ২০১৯: ‘কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই’,- প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে পর্যবেক্ষণে বহুজাতিক পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউজকুপারস বাংলাদেশের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, অনৈতিক ও দৃশ্যত অকার্যকর একটি পদক্ষেপের পক্ষে ‘ভারতেও এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল’ এমন যুক্তি দেওয়াটা রীতিমতো অনৈতিক। টিআইবি আশা করে, সরকার বরং কঠোর অবস্থান নিবেন কালোটাকার মালিকদের বিরুদ্ধে, সুরক্ষা বা নতুন সুযোগ দেবেন না এবং এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিকাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবেন না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “কালোটাকাকে প্রায় অবাধে, নামমাত্র কর প্রদান সাপেক্ষে বৈধতা প্রদান ও ২০১৯-২০২০ বাজেটে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া অসাংবিধানিক, অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক। অথচ প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স সম্পূর্ণ অযাচিত, উদ্দেশ্যমূলক ও অনৈতিকভাবে এই প্রস্তাবকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্য কোনো দেশে এ ধরনের অনিয়মের চর্চা হয়ে থাকলে তা এদেশেও অনুকরণের প্রস্তাবের পেছনে কোনো নৈতিক ভিত্তি থাকতে পারেনা। সুতরাং কালোটাকা সাদা করার স্বপক্ষে প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স যেভাবে ভারতের উদাহরণ টেনে এনেছে সেটা একেবারেই ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক, অযাচিত ও অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি আরো বলেন, “ভারতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। আর তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইনান্স অ্যান্ড পলিসি ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, কালোটাকা ভারতের মোট জিডিপির ৭১ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকতে পারে, অর্থমূল্যে যার পরিমাণ ছিল ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ ভারত সরকার দুই দশকেরও বেশি সময় আগে দিয়েছিল, তা কার্যত কোনো সুফলই দিতে পারেনি। বরং বিগত বছরগুলোতে কালোটাকা নিয়ন্ত্রণে ব্ল্যাক মানি ল এবং ফিউজিটিভ ক্রিমিনাল অফেন্ডার্স অ্যাক্টের মতো কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ এবং মুদ্রা রহিতকরণের মতো পদক্ষেপের পর এক লক্ষ ত্রিশ হাজার কোটি রুপি অপ্রদর্শিত অর্থ করের আওতায় এসেছে আর জব্দ করা হয়েছে পঞ্চাশ হাজার কোটি রূপির সম্পদ। ”
তবে, বিশ্বব্যাপী প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্সের কর্মকান্ডের যে খতিয়ান পাওয়া যায়, তাতে তাদের কাছ থেকে এমন পর্যবেক্ষণ অপ্রত্যাশিত ছিল না বলেই মন্তব্য করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, “প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্সের বিরুদ্ধে এমএফ গ্লোবাল ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলা করেছে, কারণ তাদের পরামর্শে ৬.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানটিকে শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান টেইলর বিন অ্যান্ড হোয়াইটেকারও দেউলিয়া হয়েছে কার্যত প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্সের ব্যর্থতার কারণে। এছাড়া ব্যাংক অব টোকিও- মিতসুবিশির অনুরোধে অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগের পর নিউ ইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেসকে ২৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়ে রফা করতে বাধ্য হয়েছে প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স। এছাড়া, ব্রিটিশ সুপারমার্কেট চেইন টেসকো ৩০০ মিলিয়ন ডলার ভুয়া লাভ দেখিয়েছিল তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে যখন প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স তাদের অডিটরের দায়িত্বে ছিল। যার ফলে টেসকোর ব্যবসামূল্য প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। এমন আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের অবৈধতা ও দুর্নীতির সহায়ক ভূমিকার দৃষ্টান্ত হিসেবে। সুতরাং তারা যে বাংলাদেশে কালোটাকার বিস্তারের পক্ষের শক্তির সমর্থনে যুক্তি দিতে পারে এটাই স্বাভাবিক।”
সরকার প্রধান কালোটাকা সাদার করার সুযোগ দেওয়ার পেছনে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, সে বিষয়ে ড. জামান বলেন, “সব সরকারই এই সুযোগ দিয়েছে কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে ১৯৭২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত আঠারো হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি অপ্রদর্শিত অর্থ করের আওতায় এসেছে। যেখানে বাংলাদেশ ইকোনোমিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে ২০১৮ সাল নাগাদ ৫ থেকে ৭ লক্ষ কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের অর্থনীতিতে ক্রিয়াশীল ছিল। আমরা আশা করি, সরকার এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিবে, এবং দুষ্টের পালন না করে বরং কঠোর আইন করে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। তা না হলে দেশের ভালো করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন নিশ্চিত ভাবেই, এবং আমরা অবাক হবনা যদি এরাও বাড়তি সুবিধা পাবেন এই নিশ্চয়তা থেকে রাতারাতি কালোটাকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। আমরা তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র নীতিতেই আস্থা রাখতে চাই।”
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
শেখ মনজুর-ই-আলম
পরিচালক-আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭০৮-৪৯৫৩৯৫
ইমেইল: manjur@ti-bangladesh.org