খসড়া সড়ক পরিবহন আইনের সম্পূর্ণ প্রকাশ, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রতিফলন ও অংশীজনদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে অগ্রসর হবার আহ্বান টিআইবি’র
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
খসড়া সড়ক পরিবহন আইনের সম্পূর্ণ প্রকাশ, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রতিফলন ও অংশীজনদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে অগ্রসর হবার আহ্বান টিআইবি’র
ঢাকা, ৭ আগস্ট ২০১৮: সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে তরুণ শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দ্রুত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’র খসড়া মন্ত্রিসভার অনুমোদন এবং গণমাধ্যম সূত্রমতে এতে বেশ কিছু ইতিবাচক ধারা অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে পুরো খসড়াটি ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রস্তাবিত আইনে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে কার্যত বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে প্রাণহানির জন্য প্রযোজ্য সাজা কমানো হয়েছে এ মর্মে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তা যেমন অগ্রহণযোগ্য তেমনি খসড়া আইন সংসদে উপস্থাপনের আগে জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ না করাও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিশেষ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এই আইন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার অধিকার রয়েছে, কারণ তারা ন্যায় বিচার ও নিরাপদ সড়কের জন্য শুধু পথে নামে নি, অত্যন্ত সুন্দরভাবে তারা দেখাতে পেরেছে যে সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞান ও চর্চা অনুকরণীয়। তাদের পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে প্রস্তাবিত আইনটি যেমন সমৃদ্ধতর হতে পারে তেমনি সরকারও লাভবান হবে বলে মনে করে টিআইবি।
আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “১৯৮৫ সালে দ-বিধিতে যে সংশোধনীর মাধ্যমে বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত যান চালনায় সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছরে কমিয়ে আনা হয়, মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৪ সালে তা অবৈধ ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী এধরণের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর বহাল থাকার কথা। অথচ গণমাধ্যম প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী প্রস্তাবিত আইনে তা ৫ বছর করায় কার্যত সাজা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আন্দোলনকারী তরুণ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও মতামতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া তরুণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক ও ন্যায় বিচার দাবির আন্দালনের প্রতি সরকারের তাৎক্ষণিক সাড়ার দৃষ্টান্ত হলেও আইনটির খসড়া প্রকাশ না করায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অনুমোদিত খসড়া বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও আইনমন্ত্রী প্রদত্ত ব্যাখ্যায় এ বিভ্রান্তি আরো বিস্তৃত হয়েছে। চালক ইচ্ছা করে হত্যাকা- ঘটিয়েছেন বা ইচ্ছা করলে হত্যা এড়াতে পারতেন এমন ক্ষেত্রে দ-বিধি ৩০২ ও ৩০৪ ধারার প্রয়োগের বিধান অকার্যকর হয়ে যাবে, যদি বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে প্রাণহানির ক্ষেত্রে অন্য বিধান করা হয়। কারণ বেপরোয়া গাড়ি চালানো অবশ্যই চালকের ইচ্ছাধীন বিষয়। সুতরাং দুটোকে আলাদা করে সংজ্ঞায়িত করা বাস্তবসম্মত নয়।”
‘ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান’ অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দূর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর খসড়া জাতীয় সংসদে পাশের আগেই জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। কারণ আমরা বিশ^াস করি, খসড়া অনুমোদনের পদক্ষেপ অন্দোলনে নামা অগণিত শিশুদের দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। তাই তাদেরও অধিকার আছে এই আইনে কি আছে তা জানার। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে উচ্চ আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণসহ অংশীজনদের সুপারিশ আমলে নিয়ে একটি যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন ও নিরাপত্তা বিষয়ক আইন প্রণয়ন করতে হবে।”