এনজিও খাতে সুশাসনের বেশ কিছু ইতিবাচক চর্চা অর্জিত হলেও আরো অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
 
এনজিও খাতে সুশাসনের বেশ কিছু ইতিবাচক চর্চা অর্জিত হলেও আরো অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে
 
ঢাকা, ২ আগস্ট ২০১৮: বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের এনজিও খাতে সুশাসনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক চর্চা অর্জিত হলেও এখনো উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে সুশাসন চর্চার উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এনজিওগুলোর অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকি প্রতিষ্ঠান ও অনুদান প্রদানকারী সংস্থাসমূহের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নানা ধরনের কাঠামোগত ব্যবস্থা তৈরি হলেও সেগুলোর আরো কার্যকর প্রয়োগের যথেষ্ঠ অবকাশ রয়েছে। ‘বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও খাত: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণসমূহ তুলে ধরে এ খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে টিআইবি ১৯ দফা সুপারিশ পেশ করে। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এস এম জুয়েল ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায়। গবেষক দলের ওপর দুই সদস্য গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. মোস্তফা কামাল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।  
বাংলাদেশে বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও খাতের সুশাসন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা, অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ উত্তরণে কার্যকর ও বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে এ গুণগত গবেষণাটি পরিচালিত হয়। অক্টোবর ২০১৬ থেকে মে ২০১৭ সময়ে গবেষণাটির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত স্থানীয় পর্যায়ের ১৫টি, জাতীয় পর্যায়ের ২৪টি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ৯টিসহ মোট ৪৮টি এনজিওর ২০১৪ থেকে ২০১৬ সময়ের সুশাসন পরিস্থিতি এ গবেষণায় বিবেচিত হয়েছে। এনজিও ব্যুরো, নির্বাচিত এনজিও’র পরিচালনা পরিষদ, ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা দল ও নাগরিক সমাজের কর্মকর্তা ও সদস্য, এনজিও কর্মকর্তা, অনুদান প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছ থেকে গবেষণাটির প্রত্যক্ষ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইন, এনজিও ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্য, প্রাসঙ্গিক গবেষণা প্রতিবেদন ও নিবন্ধ, বাছাইকৃত এনজিও’র বার্ষিক প্রতিবেদন ও ওয়েবসাইট থেকে পরোক্ষ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত এনজিওসমূহের সবগুলোতেই গঠনতন্ত্র, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ক্রয়, মানবসম্পদ ও জেন্ডার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও নির্দেশিকার উপস্থিতি চিহ্নিত হয়েছে। অধিকাংশ এনজিওতে কর্মীদের বার্ষিক কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন ব্যবস্থাসহ কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ, পত্রিকা বা জব-পোর্টালে চাকুরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ক্রয় কমিটি গঠন, ক্রয়ের জন্য সেবা বা পণ্য সরবরাহকারীদের সুনির্দিষ্ট তালিকা অনুসরণ, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সকল পর্যায়ের কর্মীদের বেতন প্রদান, প্রকল্প চাহিদা নিরূপণ এবং উপকারভোগী নির্বাচনে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও অংশীজনের পরামর্শগ্রহণ, স্বতন্ত্র পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের উপস্থিতিসহ এ বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকর্তার উপস্থিতি, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থার উপস্থিতিসহ প্রভৃতি ইতিবাচক উদ্যোগ চিহ্নিত হয়েছে। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এনজিওর পরিচালনা ও সাধারণ পরিষদে প্রত্যক্ষ উপকারভোগীদের প্রতিনিধিত্বসহ এসব এনজিও কর্তৃক দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপকারভোগীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 
গবেষণাটিতে এনজিও খাতের অনেক ইতিবাচক দিক চিহ্নিত হওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অন্তরায় বেশকিছু চ্যালেঞ্জ লক্ষণীয়। তদারকি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের অনিয়ম-দুর্নীতি, সংশ্লিষ্ট আইনে দুর্বলতা, দুর্বল পরিচালনা পরিষদ গঠন, সমন্বয়-পরিবীক্ষণ-মূল্যায়ন-নিরীক্ষার ঘাটতি, স্থানীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গের একাংশের অযাচিত হস্তক্ষেপ, এনজিওসমূহের অনুদান নির্ভরতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে এনজিওগুলোর অভ্যন্তরে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। গবেষণায় দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বল দিক বা ঘাটতি যথাযথভাবে উল্লেখ না করে শুধু সাফল্যের দিক অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি ও তাদের মূল্যায়নকারী পরামর্শকদের নিয়ে শুধু সফল কর্ম-এলাকা পরিদর্শন করানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদের কাছে ব্যবস্থাপনার জবাবদিহিতায় ঘাটতি লক্ষণীয়। নীতি-নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত পরিচালনা পরিষদের সভায় অনুমোদনের বিধান থাকলেও প্রধান নির্বাহী কর্তৃক এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অনুমোদন গ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নিয়ম-বহির্র্ভূতভাবে তা বাস্তবায়নের তথ্য পাওয়া গেছে। আবার ক্রয় কমিটি থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক কর্তৃত্ব খাটিয়ে ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম করা, ভুয়া ক্রয়-রশিদ বানিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম, তদারকি প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ প্রদান এবং কর্মসূচি বাজেট থেকে তা পূরণসহ কিছু এনজিও’র বিরুদ্ধে প্রকল্পের মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, ১০টি এনজিওতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই কর্মী নিয়োগ, ৫টিতে কর্মীদের বিশেষ করে মাঠকর্মীদের বেতন ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে নগদ প্রদান, দু’টি এনজিওতে বেতন প্রদানে দু’টি পৃথক রেজিস্টার ব্যবহার, কর্মীদের নির্ধারিত বেতন এবং প্রদত্ত কম বেতনের হিসাব পৃথকভাবে সংরক্ষণ, দু’টি এনজিও’র ক্ষেত্রে একই কর্মীকে বিভিন্ন প্রকল্পে শতভাগ হিসেবে দেখানো হলেও একটি প্রকল্প থেকে তার নির্ধারিত বেতন প্রদান প্রভৃতি অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। 
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৬টি এনজিও’র ক্ষেত্রে প্রকল্প চাহিদা নিরূপণ এবং উপকারভোগী নির্বাচনে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও অংশীজনের পরামর্শ গ্রহণে ঘাটতি লক্ষণীয়। ক্ষুদ্রঋণ আইন অনুসারে দরিদ্রদের স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী করার জন্য ক্ষুদ্রঋণ সহায়তার বিধান থাকলেও তাদের উপেক্ষা করে তুলনামূলক স্বচ্ছলদের প্রাধান্য দেওয়ার তথ্য গবেষণায় পাওয়া গেছে। একই এলাকায় একই সময়ে একাধিক এনজিওকে একই ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করার নির্দেশনা থাকলেও তার ব্যত্যয় এবং সেবামূলক কর্মসূচির ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হলেও একই উপকারভোগীকে পুনরায় একই ধরনের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা লক্ষণীয়। আবার কিছু এনজিও’র পরিচালনা পরিষদে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রধান নির্বাহীর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের প্রাধান্য, অনেক ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদে নামসর্বস্ব সদস্যের সম্পৃক্ততা, পরিচালনা পরিষদের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণে ঘাটতিসহ কিছু ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদের নারী সদস্যদের পরিষদের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণে ঘাটতি লক্ষণীয়। 
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার দেশীয় কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের একাংশের বিরুদ্ধে এনজিওগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় ক্ষমতাশালী বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের একাংশের বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের এনজিও কার্যক্রমে অযাচিত প্রভাব বিস্তার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের একাংশ কর্তৃক বিভিন্ন দিবস উদযাপনের জন্য নিয়ম-বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়, জেলা প্রশাসনের একাংশ কর্তৃক জেলা পর্যায় থেকে সনদ সংগ্রহের সময় নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ দাবি ও হয়রানি, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ কর্তৃক এনজিওসমূহের নিবন্ধন ও প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়ায় হয়রানি ও অর্থ দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ গবেষণাটিতে পাওয়া গেছে। যেমন, প্রকল্প ও তহবিল অনুমোদন এবং  প্রতিবেদন জমাদানের পর নথিভুক্ত করার সময় নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ আদায়, এনজিও কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় নিয়ম-বহির্ভূত সুবিধা গ্রহণ, পারিবারিক ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয় এনজিও থেকে পরিবহন ও রেস্ট হাউজের সুবিধা গ্রহণ, বিভিন্ন ফরম পূরণের নিয়ম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের নামে এবং এনজিও কার্যালয় পরিদর্শনকালে নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ আদায় ইত্যাদি। পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যরত এনজিওসমূহকে প্রকল্প অনুমোদন ও তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে বেশি ধাপ অতিক্রম করতে হয় বলে তাদেরকে অন্য এলাকার এনজিও’র তুলনায় বেশি হয়রানি ও নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ প্রদানের শিকার হতে হয়। 
গবেষণায় বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন, ২০১৬ প্রণয়নসহ আইনটির বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ; জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ২০১২ তে অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনজিও ও সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্তি, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের আওতায় এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর পরিবীক্ষণ; জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে ‘নৈতিকতা কমিটি’ গঠন; তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ প্রণয়নের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এনজিও’র তথ্য উন্মুক্তকরণ; এবং অর্থপাচার রোধ আইন, ২০১২ প্রণয়নের মাধ্যমে এনজিওগুলোর বিদেশি অনুদান প্রাপ্তিতে বৈধ উৎসের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্যোগসহ এনজিও খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক গৃহীত কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ চিহ্নিত হয়েছে। যেমন, জরুরি ত্রাণ কর্মসূচি ব্যতীত অন্যান্য প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কোনো প্রকল্পের ব্যাপারে আপত্তি জানালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখায় প্রকল্প অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টির সম্ভাবনা বিদ্যমান। আবার এনজিও’র গঠনতন্ত্রে পরিচালনা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা থাকলেও আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহের ক্ষেত্রে দেশীয় পর্যায়ে সমান্তরাল কোনো কাঠামো থাকবে কি-না সে সম্পর্কে আইনটিতে কোনো নির্দেশনা নেই। 
সম্প্রতি এনজিও খাতে সুশাসনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয় উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এনজিও খাতের সুশাসন পরিস্থিতিকে উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে  যাওয়ার ক্ষেত্রে জনগণ, দাতা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের যে প্রত্যাশা ছিল ২০০৭ সালের পর থেকে সে প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে প্রতীয়মান।”
ড. জামান আরো বলেন, “বেসরকারি সংস্থা, পুরো এনজিও খাত এবং বিশেষকরে বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালত এনজিওগুলো বাংলাদেশেরই প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশেই কাজ করে এবং বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যেই তাদের কাজ করতে হয়। দেশে বিদ্যমান সুশাসনের সার্বিক চ্যালেঞ্জ থেকে এনজিওগুলোর মুক্ত থাকা কঠিন এবং অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই এনজিও খাত সুশাসন সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, যা রাষ্ট্রীয়  ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, সর্বজনবিদিত এবং গণমাধ্যমেও তার প্রতিফলন ঘটে। স্বীকৃত অবদান থাকা সত্ত্বেও এনজিও খাতের সাথে এক ধরনের বৈরি সম্পর্ক দেখা যায়। এনজিওকে প্রতিপক্ষ ভাবা হয়। এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোসহ এনজিওসমূহের কাজ সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সরকারি সমন্বয়ক সংস্থাগুলোর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হওয়ার প্রবণতাসহ অতিরিক্ত বা অবৈধ অর্থ সংগ্রহের একট প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র পক্ষ থেকে এনজিও খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনজিও, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার বিবেচনার জন্য পেশ করা ১৯ দফা সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বৈদেশিক অনুদান রেগুলেশন আইন, ২০১৬ এর বৈষম্যমূলক ও অস্পষ্ট ধারাসমূহ সংস্কার করা এবং বিধিমালা চূড়ান্ত করা; প্রকল্প অনুমোদন ও তহবিল ছাড়ের ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি চালু করা; এনজিওদের জন্য জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের খসড়া কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন; এবং প্রত্যেক প্রকল্পের মধ্যে ‘সুশাসন কম্পোনেন্ট’ রাখা ও তা বাস্তবায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং এনজিও’র অভ্যন্তরীণ সুশাসন জোরদার করতে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ।  এছাড়াও, প্রশিক্ষণ প্রদান, কার্যালয় পরিদর্শনের নামে এবং নিবন্ধন ও প্রকল্প অনুমোদনের সময় নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ আদায় ও হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকল্প কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরিবীক্ষণে বিশেষ করে সেবামূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ ও উপকারভোগীদের সম্পৃক্ত করার সুপারিশসহ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা; একক কর্তৃত্বপূর্ণ নেতৃত্ব পরিহার করা; নৈতিক আচরণবিধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবসম্পদ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা;  নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রণোদনা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা; এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত এবং নাগরিক সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনা পরিষদ গঠনের সুপারিশ করে টিআইবি।
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
 
শেখ মনজুর-ই-আলম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ
মোবাইল: ০১৭০৮৪৯৫৩৯৫
ই-মেইল: manjur@ti-bangladesh.org 
 

Press Release