টিআইবি’র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭ ঘোষণা; দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করলে তা সরকারের জন্যই ইতিবাচক: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক সংলাপে বক্তাদের অভিমত
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
টিআইবি’র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭ ঘোষণা দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করলে তা সরকারের জন্যই ইতিবাচক: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক সংলাপে বক্তাদের অভিমত
ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭: অসাধু কিছু ব্যক্তির অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতিগ্রস্ত ও প্রশ্রয়দানকারীদের চিহ্নিত করতে গণমাধ্যমকে সরকার সহায়তা করলে ফলশ্রুতিতে তা সরকারের জন্যই ইতিবাচক হবে। আজ সকালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক সংলাপে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্্যাপনে টিআইবি’র সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. এ. টি. এম. শামসুল হুদা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক সংলাপে বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার ওপর অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকাল এর নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাভিশন এর বার্তা সম্পাদক শারমীন রিনভী এবং দৈনিক প্রথম আলো’র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ।
স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দেশে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংলাপে বক্তারা বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। দুঃখজনক এই পরিস্থিতি গণমাধ্যম, গণতন্ত্র বা রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। দুর্নীতি প্রতিরোধসহ সুশাসন ও সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুফল পেতে গণমাধ্যমকর্মীদের নির্ভয়ে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। স্বাধীন মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী আইনের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সংকোচন চূড়ান্তভাবে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের সার্বিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে উল্লেখ করে বক্তাগণ এ প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে বলে সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে সংলাপে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ এবং স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহের সাথে সাংঘর্ষিক হয় এমন কোনো আইন প্রণয়ন করা সরকারের উচিৎ নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করে তা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা অন্য কোনো আইনে কোনো আকারে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
সাংবাদিকরা অনেক সাহসের সাথে কাজ করছে এবং সাংবাদিকতার গুরুত্ব সমাজ ও সরকারকে বুঝতে হবে বলে মন্তব্য করে প্রফেসর ড. গওহর রিজভী বলেন, “দুর্নীতি থাকলে দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা যায় না। আমাদের যদি দারিদ্র্য দূর করার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে অবশ্যই দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে।” দুর্নীতির প্রতিবেদন করতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে হুমকিসহ বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকে হস্তক্ষেপ করার কোনো নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে দেওয়া হয়নি। কেউ যদি গণমাধ্যমকে হস্তক্ষেপ করে থাকে, সেটা তার নিজ স্বার্থে করছে এবং এর দায়িত্ব তার নিজের”। সরকারের কোনো একটি সুনির্দিষ্ট বিভাগ, অধিপ্তর বা এজেন্সির মাধ্যমে সংঘঠিত দুর্নীতির অভিযোগে পুরো সরকারের সমালোচনা করা উচিৎ নয় উল্লেখ করে ড. গওহর রিজভী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিকাশের জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ড. এ. টি. এম. শামসুল হুদা বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যমের মালিকানা ব্যবসায়ীদের হাতে থাকায় ব্যবসার ঝুঁকির কথা চিন্তা করে গণমাধ্যম মালিকরা অনেক সময় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চান না। বাংলাদেশে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে না উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের পেশাগত কাজের মাধ্যমে দেশের সেবা করতে নিজেদের টিকে থাকার উপযুক্ত কৌশল উদ্ভাবন ও অবলম্বনের পরামর্শ দেন।
সংলাপের মুক্ত আলোচনার পর টিআইবি’র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭ এর বিজয়ীদের প্ররস্কার প্রদান করা হয়। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পাঁচজন সাংবাদিক ও চার জন ভিডিও চিত্রগ্রাহকসহ মোট নয় জন সাংবাদিক এ বছর টিআইবি’র অনুসন্ধানীমূলক সাংবাদিকতা পুরস্কার অর্জন করেছেন। প্রিন্ট মিডিয়া (জাতীয়) বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেছেন দৈনিক প্রথম আলো’র স্টাফ রিপোর্টার অরূপ রায়। ঢাকা জেলা পরিষদের অধীনে সাভার ও ধামরাই উপজেলাভিত্তিক ১৭৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ওপর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ২৫ ও ২৬ মে ২০১৬ প্রকাশিত তার দু’টি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য তিনি পুরস্কারটি অর্জন করেন। প্রিন্ট মিডিয়া (আঞ্চলিক) বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আলাউদ্দিন। নকল ও ভেজাল ওষুধের দ্বারা জনসাধারণের আর্থিক ক্ষতি ও বিভিন্ন ভোগান্তিসহ ওষুধ বাজার এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ওপর ১৭ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর ২০১৬ দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত তাঁর ২০টি প্রতিবেদনের জন্য তিনি পুরস্কারটি অর্জন করেন।
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (প্রতিবেদন) বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু। ‘ড্রেজার কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি’ শিরোনামে ৯-১১ জুলাই ২০১৬ মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত তাঁর তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য তিনি পুরস্কারটি অর্জন করেন। প্রতিবেদনের ভিডিওচিত্র ধারণে বিশেষ ভূমিকার জন্য মাছরাঙা টেলিভিশনের সিনিয়র ভিডিও চিত্রগ্রাহক মেহেদী হাসান সোহাগকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে যৌথভাবে বিজয়ী হয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের স্টাফ করেসপনডেন্ট সবুজ মাহমুদ এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর স্টাফ রিপোর্টার মো: জাহিদ মামর ইসলাম সাদ। দেশের পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ওপর ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে প্রচারিত তাঁর অনুসন্ধানী প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের জন্য সবুজ মাহমুদ পুরস্কারটি অর্জন করেন। অন্যদিক ‘জীবন বীমা, নাকি প্রতারণার বীমা’ শিরোনামে ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের জন্য মো: জাহিদ মামর ইসলাম সাদ যৌথভাবে পুরস্কারটি অর্জন করেন।
পুরস্কারজয়ী প্রামাণ্য অনুষ্ঠান দু’টি তৈরিতে ভিডিওচিত্র ধারণের বিশেষ ভূমিকার জন্য ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক রাকিবুল হাসান ও গোলাম কিবরিয়া এবং যমুনা টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক তানভীর মিজানকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
প্রত্যেক পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিককে এক লক্ষ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ এবং প্রত্যেক ভিডিও চিত্রগ্রাহককে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. গওহর রিজভী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
রিজওয়ান-উল-আলম পরিচালক - আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন মোবাইল: ০১৭১৩০৬৫০১২ ই-মেইল:rezwan@ti-bangladesh.org