সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিরীক্ষা সংক্তান্ত টিআইবি’র প্রতিবেদন প্রকাশ
নির্বাচনী প্রচারণার বৈধ সময়সীমার আগেই প্রার্থীর ব্যয় গড়ে ৩ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে
আসন্নসংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ৪০টি আসনে ১৪২ জন মনোনয়ন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণারবৈধ সময়সীমার আগেই গড়ে প্রায় ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা খরচ করেছেন। আজ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালবাংলাদেশ (টিআইবি) এ তথ্য প্রকাশ করে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনার প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশউপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঢাকার রিপোটার্স ইউনিটির ভিআইপি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনেটিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, কোষাধ্যক্ষ এম হাফিজউদ্দিন খান, সদস্য সুলতানা কামাল ও সংগঠনেরনির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা শাহজাদা এম. আকরাম ওগবেষণা কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা নির্বাচনী আইন-কানুন ও আচরণবিধি কতটুকু মেনে চলছেন তা পরিবীক্ষণ, বিশেষ করে প্রার্থীদেরনির্বাচনী প্রচারণার দৃশ্যমান ও পরিমাণযোগ্য ব্যয়ের পর্যালোচনা করা এবং তার প্রেক্ষিতে করণীয় নিরূপণের উদ্দেশ্যে টিআইবি এ গবেষণাপরিচালনা করে। এটি এই গবেষণার প্রম পর্যায়ের ফলাফল। মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত প্রার্থীদের নির্বাচনীপ্রচারণা ও আচরণবিধি পালনের ওপর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকাশিত হবে। শেষ পর্যায়ে প্রার্থীদের দাখিলকৃত ব্যয়ের সাথেপ্রকৃত ব্যয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হবে।
গবেষণায় মোট ৪০টি আসন থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১টি আসনে কোনো ধরনের প্রচারণা হয়নি।৪টি আসনে প্রচারণা হলেও এর জন্য ব্যয়িত অর্থের হিসাব বের করা সম্ভব হয়নি। দু’টি আসনে সর্বাধিক ১৪ ও ১১ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীপ্রার্থী প্রচারণা চালিয়েছেন। এসব আসনে মোট ১৪২ জন প্রার্থী নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়েছেন। এদের মধ্যেবাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৫১ জন (৩৫.৯%), তারপরেই বিএনপির ৪৪ জন (৩১%), জাতীয় পার্টির ১২ জন (৮.৫%), এবং জামায়াতেইসলামীর ৬ জন (৪.২%) প্রার্থীর প্রচারণা উল্লেখযোগ্য। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা ছিল ৮ জন (৫.৬%)। অধিকাংশ প্রার্থী মূলত তফসিলঘোষণার দুই মাস আগে থেকেই বিভিন্ন পন্থায় প্রচারণা শুরু করেন যা নির্বাচনী আইনের পরিপন্থী। বিএনপি’র ৪৪ জন মনোনয়ন-প্রত্যাশীপ্রার্থী প্রচারণার জন্য গড়ে খরচ করেছেন প্রায় ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৫১ জন প্রার্থী গড়ে ব্যয় করেছেন
প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। বিএনপি’র একজন প্রার্থী সর্বাধিক ১৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী সর্বাধিক ১৬লাখ ২ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ব্যয় করেছেন গড়ে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭১৪ টাকা। এছাড়া একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীরসর্বোচ্চ ব্যয় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জরিপকৃত প্রার্থীগণ উক্ত সময়ে বিধি বহির্ভুতভাবে মোট খরচ করেছেন ৪ কোটি ৩২ লক্ষ ২৭হাজার ৪০০ টাকা। উল্লেখ্য ২০০৭ সালে বাতিল হওয়া সংসদ নির্বাচনের আগে টিআইবি’র অনুরূপ এক জরিপে দেখা যায় প্রার্থীরা গড়ে ১৫লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে। বিএনপির প্রার্থীরা তখন গড়ে প্রায় ১৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা গড়ে প্রায় ১৩লাখ ৯৬ হাজার টাকা খরচ করে।
এবারেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে কালো টাকার মালিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সন্ত্রাসী ইত্যাদি ব্যক্তিকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছেযারা নির্বাচনী আইনের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন না। স্থানীয় পর্যায় থেকে সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়ার যেবাধ্যবাধকতা তা রাজনৈতিক দলগুলো অনেক ক্ষেত্রেই মেনে চলেনি। দু’টি প্রধান জোটের বিরুদ্ধেই মনোনয়নে অর্থের লেনদেনের অভিযোগউঠেছে। অসমর্থিত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ৪০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত দলীয় তহবিলে দেয়া হয়েছে।
এবারে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয় ২০০৭ সালের স্থগিত নির্বাচনের তুলনায় কম হয়েছে। তারপরও দলীয়ভাবে কিছু কিছু নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনকরা হয়েছে (যেমন রাস্তা অবরোধ করে জনসমাবেশ)। কয়েকটি আসনে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং হয়েছে বলে দেখা যায়। এবারেরনির্বাচনে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের সাথে আটটি তথ্য দিতে বাধ্য থাকলেও অনেকে যথাযথভাবে তথ্য দেননি কিন্তু এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখন পর্যন্ত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা ব্যয় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার মতো কোনো ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংঘটিত দুর্নীতি রোধকল্পে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যটিআইবি বেশকিছু সুপারিশ প্রদান করেছে। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে- প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা ব্যয় ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনানিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। যেসব প্রার্থী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই প্রচারণা চালাবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। গণমাধ্যমেপ্রার্থীদের ব্যয়ের আনুমানিক হিসাবও তুলে ধরা প্রয়োজন। এজন্য ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী রিপোর্টিং বাড়ানোদরকার। সুশীল সমাজ ও নির্বাচন সংক্তান্তকাজে অভিজ্ঞ সংস্থাকে প্রার্থীদের নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন এবংজনগণের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কার্যμম পরিচালনা করাও একান্ত দরকার।
গণমাধ্যম যোগাযোগ
মোহাম্মদ ইমাম উদ্দিন যোগাযোগ – ০১৭১৪০৯২৮৬১ |
শাহজাদা এম. আকরাম যোগাযোগ - ০১৭১৩০৬৫০১৪ |