স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা পরিপন্থী পশ্চাৎ-মুখী অবস্থান পরিহারের আহ্বান
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০১৭: উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) আইন ২০০৯ এ সুর্নির্দিষ্ট বিধান থাকা সত্তে¦ও সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীদের হলফনামা দাখিলের বিধান বাতিল চেয়ে অভিমত প্রকাশ করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা পরিপন্থী পশ্চাৎ-মুখী এরূপ অবস্থান পরিহারের জন্য দলটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসাথে আগামী সংসদ নির্বাচনে আইনানুগভাবে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করে জনসম্মুখে তা প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক, ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে দেশের আপামর জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন অনুযায়ী সকল রজিনৈতিক দল ও অংশীজনের অংশগ্রহণে প্রণীত এবং সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) আইন ২০০৯- এ জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অন্যতম উপায় হিসেবে বিধানটি প্রতিষ্ঠা হয়। তদুপরি উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও একটি রাজনৈতিক দল গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় হলফনামার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধান বাতিল চেয়ে যে অভিমত প্রকাশ করেছে, তা সত্যিই হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত।” উক্ত রাজনৈতিক দল কর্তৃক উত্থাপিত দাবিকে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতার অন্তরায় ও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সম্ভাবনার জন্য অশনিসংকেত উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, “জনপ্রতিনিধিরা যখন শপথ নিয়ে তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করে, তখন তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং প্রার্থী ও তার দল তথা সার্বিকভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর আস্থার সম্ভাবনা ও জনগণের ক্ষমতায়নের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যখন কোনো প্রার্থী তার সম্পর্কে তথ্য প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করে, তা প্রকারান্তরে জনমনে সন্দেহের উদ্রেক করে ও জনগণের কাছে তাদের প্রতিনিধিদের সম্পর্কে আস্থার সঙ্কটের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।”
তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে এ ধরনের অযাচিত প্রস্তাবের প্রতি কোনো গুরুত্ব প্রদান না করা। পাশাপাশি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা হলফনামায় যেসব তথ্য প্রদান করবেন, আইন অনুযায়ী তা যাচাই-বাছাই করে কমিশনের ওয়েবসাইটে জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা। একইসাথে, যাচাই-বাছাইপর্বে যদি কোনো প্রার্থীর হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যের সাথে বাস্তবতার অমিল খুজে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তার প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণাসহ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৪ মে হাইকোর্ট প্রার্থীদের আট ধরনের তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দিলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এরপর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী মনোনয়ন পত্রের সাথে হলফনামার মাধ্যমে আট ধরনের তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আট ধরনের তথ্যের মধ্যে রয়েছে ১. শিক্ষাগত যোগ্যতা ২. বর্তমানে প্রার্থীর বিরুদ্ধে রুজুকৃত ফৌজদারি অপরাধের তালিকা ৩. অতীতের ফৌজদারি মামলার তালিকা ও ফলাফল ৪. প্রার্থীর পেশা ৫. প্রার্থীর আয়ের উৎস (সমূহ) ৬. অতীতে সংসদ সদস্য হয়ে থাকলে জনগণের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে তার ভূমিকা ৭. প্রার্থী ও তার ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়-দেনার বর্ণনা এবং ৮. ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তিগত বা যৌথভাবে এবং এমন কোম্পানি থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ও বর্ণনা যে কোম্পানির তিনি সভাপতি বা নির্বাহী পরিচালক বা পরিচালক।