সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু তহবিলের সার্বিক প্রবাহ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও
জবাবদিহিতা জোরদারে
সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান
ঢাকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭: জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কল্যাণের
জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিল প্রদান ও তার ব্যবহারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নাগরিক অংশগ্রহণ ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে দক্ষিণ
এশিয়ার সংশ্লিষ্ট সরকারসমূহকে জরুরিভাবে সামষ্টিক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকায় সমবেত দেশি ও বিদেশি
বিশেষজ্ঞগণ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত দুদিনব্যাপী জলবায়ু বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সংলাপের
শেষ দিনে আজ বিশেষজ্ঞগণে আরো বলেন, যেহেতু দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো প্রশমন অপেক্ষা অভিযোজনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা
করছে, তাই এ অঞ্চলের স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রয়োজনসমূহ পূরণে জলবায়ু অর্থায়নের অধীন
প্রকল্পসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে এ অঞ্চলের সরকারসমূহের চলমান উন্নয়ন কর্মসূচীর মূলধারায় অভিযোজনকে অবশ্যই
সন্নিবেশ করতে হবে।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ‘জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন তহবিল ২: জলবায়ু অর্থায়ন ও সুশাসন বিষয়ে ইন্টেগ্রিটি ডায়ালগ’ শিরোনামে দুদিনব্যাপী এ সংলাপে ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস্, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ থেকে বিশেষজ্ঞগণ অংশগ্রহণ করেন। জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিতকরণ ও জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের আলোকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ ১৩ ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আঞ্চলিক প্রচেষ্টার সম্ভাব্য ক্ষেত্র ও উপায় অনুসন্ধান করাই ছিল এ সংলাপ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
সংলাপে বক্তাগণ একমত হন যে, জলবায়ু অর্থায়নে চাহিদা ও সরবরাহ উভয় প্রান্তেই স্বচ্ছতা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, জলবায়ু অর্থায়নের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নেও শুদ্ধাচার অনুশীলন চর্চা অর্থদাতা ও অর্থগ্রহীতা উভয়েরই জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতকে এ প্রকল্পসমূহে কিভাবে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে উদ্ভাবনী উপায় খুজে বের করার তাগিদ দেন বক্তাগণ। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে অভিযোজন অর্থায়নে স্বচ্ছতা জোরদারকরণে সমতা, অংশগ্রহণ, সংবেদনশীলতা ও মালিকানাই মূল- এই নীতিতে সকল বক্তা একমত পোষণ করেন। সংলাপের বিভিন্ন অধিবেশনে অভিযোজন কার্যক্রমের দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার যোগ্যতা ও কার্যকরতা নিশ্চিতে প্রায়োজনীয় অর্থায়ন সংস্থানের উপায়সমূহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা অভিযোজন প্রচেষ্টাসমূহকে সমগ্র বিশ্বের জন্য কল্যাণকর বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে জলবায়ু অর্থায়নের টেকসই মূল্যায়নের জন্য শুধু অনুদানের ওপর গুরুত্বারোপ না করে বিভিন্ন বিকল্প উপায় অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এসকল দেশে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে জ্বালানীদক্ষ উৎপাদন ও ভোগ বৃদ্ধিতে প্রণোদনাভিত্তিক নীতিসমূহকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ বলে বক্তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। সংলাপে বক্তারা অভিযোজন অর্থায়নে স্বচ্ছতা জোরদারকরণের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নিশ্চিতে সমতা, অংশগ্রহণ, সক্রিয়তা ও মালিকানার নীতি অবলম্বনের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এর সঞ্চালনায় আজ সংলাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের উপ-মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (জ্যেষ্ঠ) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জলবায়ু সংক্রান্ত প্রকল্পসমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জলবায়ু তহবিলের ওপর ছয়টি অডিট প্রতিবেদন আলোচিত হয়েছে এবং আরো কয়েকটি প্রকল্পের অডিট বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্বাচার নিশ্চিতে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও এ খাতে তহবিল প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ উন্নত দেশসমূহের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার উপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ডিএফআইডি বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সুশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ও সুশাসন বিষয়ক দলনেতা আইসলিন বেকার বলেন, জলবায়ু বিবর্তনের সংকট মোকাবেলায় বৈশ্বিক অঙ্গীকারের প্রতি যুক্তরাজ্য শ্রদ্ধাশীল হয়ে ২০১৬-২০২১ পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে। বাংলাদেশের জলবায়ু তহবিলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়ে যুক্তরাজ্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি জলবায়ু অর্থায়নের স্বচ্ছতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদ- অর্জনে সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী অধিবেশনে টিআইবি’র উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা প্রফেসর ড. সুমাইয়া খায়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদা ও এ অঞ্চলে অভিযোজন প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।
সংলাপের শেষ দিনে চারটি অধিবেশনে অভিযোজন অর্থায়নে সুশাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের কেস স্টাডি; সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থায়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের প্রবেশাধিকারে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রেক্ষিতে প্যারিস চুক্তির অধীনে স্বচ্ছতার কাঠামো বিষয়ে আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে বক্তাগণ জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়গুলিকে বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক সুশাসন ব্যবস্থার মত বৃহত্তর পরিসরের বিষয়গুলির সাথে সংযোগ স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে সবুজ জলবায়ু তহবিল অনুমোদনের জটিল প্রক্রিয়ার সহজীকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এছাড়া বক্তাগণ তাদের পর্যবেক্ষণে বলেন, প্রাসঙ্গিক টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনে শাসন ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার ও ট্রান্সপারেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক এর মান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি, সরকারি তত্ত্বাবধানে জলবায়ু অভিযোজন অর্থায়নের অধীনে প্রকল্পসমূহের পরীবিক্ষণ প্রক্রিয়ার ন্যূনতম গুণমান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।
এর আগে গতকাল সোমবার উদ্বোধনী দিনে সংলাপে বক্তাগণ জলবায়ু তহবিলকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা পালনের পাশাপাশি দাতা দেশগুলোর অঙ্গীকারকৃত ক্ষতিপূরণ ও অনুদান জলবায়ু তহবিলে যথাযথভাবে প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
উল্লেখ্য, টিআইবি’র উদ্যোগে ইতিপূর্বে ২০১৬ এর মার্চ মাসে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিষয়ে
প্রথম বারের মতো ‘ঢাকা ইন্টেগ্রিটি ডায়ালগ’ অনুষ্ঠিত হয়।
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
রিজওয়ান-উল-আলম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ
মোবাইল:
০১৭১৩০৬৫০১২
ই-মেইল:
rezwan@ti-bangladesh.org