দুর্নীতি-বান্ধব বাজেট ২০১৭-১৮: মধ্যম ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের ওপর করের বোঝা

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি 
দুর্নীতি-বান্ধব বাজেট ২০১৭-১৮: মধ্যম ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের ওপর করের বোঝা
 
ঢাকা, ৬ জুন ২০১৭: সাধারণ মানুষের করের অর্থে দুর্নীতিগ্রস্ত, জালিয়াতিতে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন ব্যাংকিং খাতের অনৈতিক পুনর্মূলধনীকরণ, সীমিত মধ্যম ও ক্ষুদ্র আয়ের করদাতাদের ওপর বৈষম্যমূলক করারোপ, কালো টাকা বৈধতার অসাংবিধানিক সুযোগের ধারাবাহিকতা, মেগা প্রকল্পে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ হ্রাসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাহীন বাজেট ২০১৭-১৮ দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে, এরূপ উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রস্তাবিত বাজেটের এসব অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
 
এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “একদিকে ব্যাংকিং খাতে চলমান দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার বন্ধে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো পদক্ষপের প্রস্তাব তো করাই হয়নি উল্টো দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে মূলধন বাবদ কর রাজস্ব হতে নতুন করে ২০০০ কোটি টাকা অর্থায়নের প্রস্তাব করে জনগণের অর্থ আত্মসাত ও দুর্নীতিকেই প্রতিপালন ও উৎসাহিত করা হলো। শুধু তাই নয় স্পষ্টতই এটি ব্যাংকিং খাতে লুটপাট ও খেলাপী ঋণের সংস্কৃতি স্থায়ী ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের এক অশুভ উদ্যোগ তাও জনগনের অর্থেই। সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের ওপর অতিরিক্ত করারোপ করে তাদের জন্য বৈধ পথে সামান্যতম বাড়তি আয়ের পথও রুদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিত্তশালী ও ধনীদের তুলনায় মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অতিরিক্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হয়েছে, যা একদিকে যেমন বৈষম্যমূলক, অন্যদিকে তেমনি যেকোন মাপকাঠিতেই রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পন্থা হতে পারে না। এরূপ দুর্নীতি সহায়ক, অবিবেচনা প্রসূত ও অপরিণামদর্শী পথ থেকে সরে এসে শুদ্ধাচার ও জনবান্ধব রাজস্বনীতি অবলম্বন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজস্বের ভার নিরূপিত হতে হবে ক্রমবর্ধনশীলভাবে আয় ও সম্পদের ওপর, কর আদায়ের সহজতর পন্থার ওপর নয়।” 
 
তিনি আরো বলেন, ‘‘রাজস্ব কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত পর্যায়ে করদাতার ব্যপ্তি প্রসারের মাধ্যমে আয়কর বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে মূসক নির্ভর হয়ে পড়ছে। মূসকের চূড়ান্ত বোঝা মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের বা সাধারণ জনগণের ওপর আরোপিত হতে বাধ্য, এর সাথে মূল্যস্ফীতি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি যুক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠায় অস্থিতিশীলতা ও ক্ষোভ বাড়বে”।
 
ড. জামান বলেন, ‘‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখোমুখি জনগণের জন্য গঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ)-এর জন্য ২০১৭-১৮ বছরের বাজেটে মাত্র ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক উৎস হতে প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত না করে বিসিসিটিএফ এর বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হলে ইতিমধ্যে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, যা কখনো কাম্য হতে পারেনা। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়ক সৌর বিদ্যুতের ওপর ১০% কর বসানো গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।”  
 
এবারের বাজেটেও যেভাবে কালো টাকাকে বৈধতা প্রদানের অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে তার জোর প্রতিবাদ জানায় টিআইবি। এ সুযোগ বন্ধ করাসহ উপরোল্লেখিত বৈষম্যমূলক প্রস্তাবনাসমূহ পুনর্বিবেচনা করে সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হবে বলে আশা করছে টিআইবি। সর্বোপরি, সাধারণ মানুষের ওপর ঢালাওভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বোঝা চাপানোর আগে রাজস্ব
 
আয় বাস্তবেই স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতার সাথে জনকল্যাণে ব্যবহারের লক্ষ্যে কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে জনআস্থা বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় টিআইবি।
 
 
গণমাধ্যম যোগাযোগ:
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম
সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার-আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭১৪০৯২৮৬৪;
ইমেইল: zahid@ti-bangladesh.org
 

 


Press Release