ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০১৭: প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে পরিবেশ দূষণকারী উন্নত দেশগুলো কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ঋণের পরিবর্তে উন্নয়ন সহায়তার অতিরিক্ত এবং নতুন প্রতিশ্রুতি হিসেবে শুধু অনুদান আকারে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ দশ দফা দাবি উত্থাপন করে টিআইবি।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে টিআইবি কর্মী, সদস্য ও টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়েস গ্রুপের সদস্যরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় দেশের ৪৫টি অঞ্চলে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন প্রশ্নে সর্বোচ্চ দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু প্রশ্নবিদ্ধ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি হতে সরে আসলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ব্যাপক ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। জলবায়ু অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু অর্থায়নের সর্বসম্মত সংজ্ঞা নির্ধারিত না হওয়ায় উন্নত দেশসমূহ উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ এবং ‘নতুন’ প্রতিশ্রুতি, অনুদান কিংবা ঋণ প্রদান করবে কিনা তাও সুস্পষ্ট নয় উল্লেখ করে ড. জামান প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ আদায়ে জোর কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি একই সাথে সরকারের বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের পরিচালনা অব্যাহত রাখা, ট্রাস্টের তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে জলবায়ু প্রকল্প পরিচালনার আহ্বান জানান।
টিআইবি’র উত্থাপিত দাবিগুলো হলো: ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নে প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী হিসেবে সকল শিল্পোন্নত দেশের অঙ্গীকার অব্যাহত রাখা; ‘দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদান’ নীতি বিবেচনা করে ঋণ নয়, শুধু অনুদান, যা উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ এবং ‘নতুন’ প্রতিশ্রুতি হবে- কে স্বীকৃতি দিয়ে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা; প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী সবুজ জলবায়ু তহবিলে শিল্পোন্নত দেশসমূহের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির আইনী বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা; এবং প্যারিস চুক্তিতে প্রস্তাবিত ‘স্বচ্ছতা কাঠামো’তে শিল্পোন্নত দেশ কর্তৃক গৃহীতব্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত কার্যক্রমে বিশেষ করে জলবায়ু অর্থায়নে স্বপ্রণোদিত তথ্যের উন্মুক্ততা, জবাবদিহিতা, নাগরিক অংশগ্রহণ এবং শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা।
এছাড়াও জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জলবায়ু তহবিল এর আওতায় গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সকল প্রকার আর্থিক লেনদেনের প্রতিবেদন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করাসহ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নির্ধারণে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞসহ সকল অংশীজনের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংক্রান্ত সকল প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির সম্মুখীন জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং আদিবাসীদের ব্যাপক ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
গণমাধ্যম যোগাযোগ,
রিজওয়ান-উল-আলম
পরিচালক - আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭১৩০৬৫০১২
ই-মেইল: rezwan@ti-bangladesh.org