টিআই আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদ এর চেয়ারপারসন ঢাকায়
ঢাকা, ১৫ অক্টোবর ২০১৬:বার্লিন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এর পরিচালনা পর্ষদ এর চেয়ারপারসন হোসে কার্লোস উগাস সান্চেস-মরেনো দুই দিনের এক সফরে আজ ঢাকায় এসেছেন। ২০১৪ সালে টিআই পরিচালনা পর্ষদের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর একশটিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের সর্ব বৃহৎ চ্যাপ্টার হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর আমন্ত্রণে জনাব উগাসের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর।
দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন ত্বরান্বিত করতে বৈশি^ক ও জাতীয় পর্যায়ের পারস্পারিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ই তাঁর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য।
দুই দিনের সফরকালে আইনের এই অধ্যাপক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান জনাব ইকবাল মাহমুদ এবং টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সুশীল সমাজের সদস্য ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের সাথে সাক্ষাত করবেন।
বিবেচনার্থে অতিরিক্ত তথ্য:
খ্যাতিমান আইনজ্ঞ অধ্যাপক উগাস (এড্হক) এর্টনি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বহুল আলোচিত পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরি ও দেশটির গোয়েন্দা প্রধান মন্তেসিনো চক্রের প্রায় পনেরশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুই’শরও বেশি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগ গঠন এবং এফবিআই এর সহযোগিতায় ভেনিজুয়েলা থেকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। এই ঘটনায় জড়িত দেশটির সাবেক এর্টনি জেনারেল, কংগ্রেস প্রসিডেন্ট, সুপ্রিম কোর্টের একাধিক বিচারপতি, একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং চৌদ্দজন জেনারেলকে বিচারের সম্মুখীন করা এবং দেশটি থেকে বিদেশে পাচার হওয়া দু’শ পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেন স্থগিত এবং একশ পঞ্চাশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়।
টিআই পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন জনাব হোসে কার্লোস উগাস এমন একটি সময় বাংলাদেশে এসেছেন, যখন টিআইবি সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সকল পর্যায়ের অংশীজনের সমন্বয়ে ও প্রয়াসে একটি কার্যকর দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার নিরন্তর প্রচেষ্টার বিশ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে।
টিআইবি এই সুদীর্ঘ পথচলায় তার গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক (অ্যাডভোকেসি) কর্মকা- এবং জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে সুশাসন ও দুর্নীতিবিরোধী অবকাঠামো বির্নিমানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। যার মধ্যে: দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ প্রণয়ন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর প্রতিষ্ঠা; ২০০৭ সালে জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর আওতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে দুর্নীতিবিরোধী ধারণার অন্তর্ভূক্তি; সমমনা অন্যান্য সংগঠনের সহযোগিতায় তথ্য অধিকার আইন ২০০৯; জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১; “সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়: জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ২০১২” প্রণয়ন অন্যতম। একইসাথে দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে উক্ত আইন, নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যকর ও বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন কাজের সহযোগি সংগঠন হিসেবে টিআইবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
টিআইবি’র জনসম্পৃক্ততা ও অধিপরামশমূলর্ক কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে ৪৫টি সনাক অঞ্চল ও ঢাকায় প্রায় ছয় হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবী সক্রিয়ভাবে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে, যাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে তরুণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি ও জলবায়ু অর্থায়নের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বেচ্ছাসেবীগণ বিভিন্ন কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে। একইসাথে টিআইবি প্রবর্তিত সেবা প্রদান পর্যায়ে সামাজিক জবাবদিহিতা (সোস্যাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি) টুলস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে টিআইবি’র কর্মকান্ডের ব্যাপ্তি ও অভিনবত্বের কারণে টিআই সেক্রেটারিয়েটসহ বিভিন্ন চ্যাপ্টার থেকে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ তাঁদের অভিজ্ঞতা ও মতামত বিনিময়ের জন্য টিআইবি’র আতিথ্য গ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া, টিআই এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ড. পিটার আইগেন ও সাবেক চেয়ারপারসন ড. হিউগেট লেবেল ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সফর করেছেন।