বাজেটে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির বোঝা সীমিত উপার্জনকারী, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী আর সাধারণ মানুষের ওপর: পুনর্বিবেচনার আহ্বান টিআইবি’র
ঢাকা,১৯ জুন ২০১৬: উচ্চাভিলাষী ২০১৬-২০১৭ জাতীয় বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির চাপের বৃহদাংশ যেভাবে সুকৌশলে সীমিত আয়ের মানুষ, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও সর্বোপরি সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অনুমোদিত হলে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, ক্ষোভ ও অস্থিতিশীলতা বাড়বে, এরূপ উদ্বেগ প্রকাশ করে বাজেট পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রস্তাবিত ২০১৬-২০১৭ বাজেটে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বোঝা সীমিত আয়ের মানুষ, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ী ও বিনিয়োগকারী এবং পেনশনভোগীসহ সাধারণ নাগরিকের ওপর বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদ্ধতিতে চাপিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক দিকে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও তদসংশ্লিষ্ট সুদ পরিশোধ ও অন্যদিকে সরকারি খাতে বেতন-ভাতাসহ বর্ধিত ব্যয় সংকুলানে চাকুরিজীবিসহ যারা সৎভাবে নিয়মিত কর প্রদান করে থাকেন ও সাধারণ মানুষ যাদের ওপর পরোক্ষ কর তথা মুসক আয় বৃহদাংশে নির্ভরশীল, তাদের ঘাড়েই বৈষম্যমূলকভাবে অসহনীয় হারে চাপিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের অন্যতম নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের উপায় সঞ্চয়ের ওপর অতিরিক্ত করারোপ করে তাদের জন্য বৈধ পথে সামান্যতম বাড়তি আয়ের পথ রুদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিত্তশালী ও ধনীদের তুলনায় সীমিত ও কম আয়ের মানুষের জন্য কর রেয়াত ব্যাপকহারে কমানোসহ অতিরিক্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হয়েছে, যা এক দিকে যেমন বৈষম্যমূলক অন্যদিকে তেমনি যেকোন মাপকাঠিতেই রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পন্থা হতে পারে না।
সরকারকে এরূপ অবিবেচনা প্রসূত ও অপরিণামদর্শী পথ থেকে সরে এসে জনবান্ধব রাজস্বনীতি অবলম্বন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, যার মাধ্যমে রাজস্বের ভার নিরূপিত হবে আয় ও সম্পদের উপর, কর আদায়ের সহজলভ্যতার উপর নয়।”
রেয়াত কাঠামো পুনর্গঠন করে এমন বৈষম্য প্রস্তাব করা হয়েছে যে, যাদের করযোগ্য আয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশী করের বোঝা বইতে হবে এমন করদাতাদের যাদের করযোগ্য আয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত প্যাকেজ মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা যেমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে তেমনি এরূপ বোঝা চূড়ান্ত বিবেচনায় সাধারণ ভোক্তা ও গ্রাহকের ঘাড়েই চাপবে।
প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটি ও শ্রমিক মুনাফা তহবিলের ওপর আরোপিত কর সীমিত আয় ও এ ধরনের তহবিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন দুর্বিষহ করবে। রাজস্ব আয়ের সিংহভাগের উৎস হওয়া উচিত আয়কর। রাজস্ব কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশিত পর্যায়ে আয়কর বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে মুসক নির্ভর হয়ে পড়ছে। মুসকের উপর সম্পূরক শুল্কসহ যেভাবে মুসক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তার সিংহভাগ ভোক্তাই মধ্যবিত্ত, নিম্ন আয়ের বা সাধারণ জনগণ। তাদের দৈনন্দিন জীবন যাত্রার জন্য পণ্য ও সেবা পেতে নতুন বাজেট অনুযায়ী কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ মূল্য বেশী দিতে হবে। এর সাথে মূল্যস্ফীতি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি যুক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হবে। অস্থিতিশীলতা ও ক্ষোভ বাড়বে।
এবারের বাজেটেও যেভাবে কালো টাকাকে বৈধতা প্রদানের অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে তার জোর প্রতিবাদ জানায় টিআইবি। এ সুযোগ বন্ধ করাসহ বাজেটে উল্লেখিত বৈষম্যমূলক প্রস্তাবনাসমূহ পুনর্বিবেচনা করে সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট হবে বলে আশা করছে টিআইবি। সর্বোপরি, সাধারণ মানুষের ওপর ঢালাওভাবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বোঝা চাপানোর আগে রাজস্ব আয় বাস্তবেই স্বচ্ছতার সাথে জনকল্যাণে ব্যবহৃত হয়, এরূপ জনআস্থা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।