ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০১৬: গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দাবি জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র সদস্যরা। একই সাথে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণকে আরো অধিকতর সম্পৃক্ত করে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন জোরদারের অঙ্গীকার করেন সদস্যরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির সদস্যদের বার্ষিক সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা খাতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সঞ্চয়/বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করা একইসাথে ব্যবসা-বাণিজ্যে কালো টাকা ও সিন্ডিকেটের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে এবং পুঁজি বাজারে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সংবিধান ও নির্বাচনী অঙ্গীকার পরিপন্থী কালো টাকা বৈধ করার সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুযোগ বন্ধসহ এ ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িতদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জোর আহ্বান জানানো হয়।
অবাধ তথ্য প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও সুশাসনের পূর্বশর্ত এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের অন্যতম সহায়ক হাতিয়ার। তথ্য অধিকার আইনে ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের পথে বিরাজমান সকল প্রতিকূলতা উত্তরণে বিশেষ করে গণমাধ্যমসহ মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সকলকে উদ্যোগী ভূমিকা পালনের অভিমত ব্যাক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এতে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শামসুদ্দিন এবং সঞ্চালনা করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সুলতানা কামাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, “স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অনাচার, অবিচার ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হতে পারে যদি বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক সমাজ একসঙ্গে সাহসের সাথে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।”
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমাদের ম্যান্ডেট সীমিত এবং দুদক, বিচার বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যাতে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে সেজন্য তাদের আইনি কাঠামো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করার দাবি উত্থাপন ও এ ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করা এবং দুর্নীতিবিরোধী চাহিদা সৃষ্টি করাই টিআইবি’র কাজ।”
সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, তদবিরসহ বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করে এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন টিআইবি’র সদস্যরা। পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের গ্রহণযোগ্য সমীক্ষা না করে রামপাল তাপ বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে তা সুন্দরবনের ওপর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে দাবি করেন তারা। দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থীরা অর্থ ও পেশীশক্তির মাধ্যমে নির্বাচিত হচ্ছেন বলেও সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বার্ষিক সদস্য সভা শেষে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, অপহরণ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, গুম এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি এবং ব্লগারদের সাম্প্রতিক হত্যাকা-ের মতো জঘন্য অপরাধ দমনসহ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে আরও সচেষ্ট হওয়ার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানসহ এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পরিহার করে নিরপেক্ষ ও সকল প্রকার প্রভাবমুক্ত হয়ে পেশাদারিত্বের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালনের দাবি জনানো হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে আগ্রহী বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ নাগরিককে টিআইবি সদস্যভুক্ত করে আসছে। বর্তমানে টিআইবি’র সদস্য সংখ্যা ৩৫০জনেরও বেশি।