সাভার দুর্ঘটনার জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
পোশাক শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনে বিজিএমইএ এর প্রতি টিআইবি’র আহ্বান
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০১৩: সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের ফলে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনার জন্য দোষীদের কোন প্রকার করুণা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসাথে নিহতদের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষায়িত জরুরি চিকিৎসা ও স্থায়ী পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনে বিজিএমইএ’র প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মহান মে দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সাভারের রানা প্লাজায় সংঘটিত মানবিক ট্রাজেডির ক্ষত কোনভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে নিহত ও আহত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সংশ্লিষ্ট সকলের মৌলিক দায়িত্ব। ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা ও সকল প্রকার অনিয়মের ঊর্ধ্বে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত প্রকাশের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দ্রুত মুনাফা অর্জনের একধরণের অসুস্থ প্রবণতা প্রত্যাহার করে নৈতিক মূল্যবোধ ধারণের আহ্বান জানিয়ে ড. জামান পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষায়িত জরুরি চিকিৎসা ও স্থায়ী পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য পোশাক শিল্প-মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। বিশেষতঃ পোশাক শ্রমিকদের জন্য জীবনবীমাসহ সুস্পষ্ট চাকুরী বিধি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তিনি বিজিএমইএ’র নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
একইসাথে সাভার ট্রাজেডির ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে ভয়-ভীতি বা করুণার ঊর্ধ্বে উঠে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয় এই বিবৃতিতে।
ড. জামান বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে জড়িত বিদেশী কোম্পানীদের আরো দায়িত্বশীল ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশী পোশাক শিল্প-মালিকদের একাংশের দুর্নীতি এবং আইনের ঊর্ধ্বে থাকার প্রবণতার মুখে বিদেশী কোম্পানীদের নিস্ক্রিয় থাকার কোন সুযোগ নেই। শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হওয়ার অভিযোগে পোশাক রপ্তানী ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা প্রকারান্তরে শ্রমিকদেরই বিশেষতঃ নারী শ্রমিকদের শাস্তি প্রদানের নামান্তর হবে। বরং ব্যবসায়ীদের উদ্যোগের প্যাকেজের অংশ হিসেবে শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাদের নৈতিকতার চর্চার পরিচয় দিতে হবে।”
ড. জামান বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সংকট থেকে উত্তরণে দুর্বল নিরাপত্তা মানসম্পন্ন ও ঝুকিপূর্ণ কারখানার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা; অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্যোগ; বিশ্বাসযোগ্য পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং আইন প্রয়োগে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন ও শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিবৃতিতে মে দিবস ও অন্যদিকে সাভার ট্রাজেডির শিক্ষার ওপর নির্ভর করে শ্রমিকদের আরো সচেতন ও সক্রিয়ভাবে সকল প্রকার প্ররোচণার ঊর্ধ্বে থেকে সহিংসতা পরিহার করে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার আদায়ে সংঘবদ্ধ হবার আহ্বান জানানো হয়।