TI releases Global Corruption Report: Sport; TIB calls for taking preventive measures to maintain cricket's clean image (Bangla)
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের ওপর টিআই’র বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রতিবেদন প্রকাশ
বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনকে কলুষমুক্ত রাখতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান টিআইবি’র
ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬:বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ম্যাচ ফিক্সিং, বড় বড় প্রতিযোগিতার আয়োজনে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাব এবং ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন পরিচালনা কাঠামোতে সুশাসনের ঘাটতিসহ দুর্নীতির নানাবিধ ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটাঙ্গনকে কলুষমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারসহ সকল অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ‘গ্লোবাল করাপশন রিপোর্ট-স্পোর্ট’ শীর্ষক বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে পাতানো খেলা, ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিং এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্বচ্ছকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। একই সাথে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ক্রিকেট ম্যাচ এবং টুর্নামেন্ট সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী সকল পক্ষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)’র দুর্নীতিবিরোধী বিধি পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালনপূর্বক বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনকে যে কোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে কলুষমুক্ত রাখবেন। টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক রিজওয়ান-উল-আলম, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এবং প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ বিষয়ক প্রবন্ধের যৌথ প্রণেতা গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ নূরে আলম।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিদেশী বাজিকরদের তৎপরতা, পাতানো খেলায় তরুণ এক ক্রিকেটারের শাস্তি ও আম্পায়ারের সংশ্লিষ্টতা এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে পাতানো খেলায় একটি ক্লাবের সংশ্লিষ্টতার উল্লেখসহ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনায় সুশাসনের নানাবিধ চ্যালেঞ্জের তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সংঘটিত দুর্নীতির অপরাধের বিচারে সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির অনুপস্থিতির তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বিসিবি’র দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট (আকসু) কে আরো শক্তিশালী করতে দীর্ঘমেয়াদী দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। একই সাথে ক্রিকেটের জন্য একটি বিশেষায়িত স্বাধীন ন্যায়পাল ব্যবস্থা প্রবর্তনেরও আহ্বান জানায় টিআইবি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে এর থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে টিআইবি ধারাবাহিকভাবে ২০১৩ সালে থেকে অ্যাডভোকেসি করছে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৪ এর প্রেক্ষিতে টিআইবি’র অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অনুমোদনক্রমে জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা ‘দুর্নীতিকে না বলুন’ ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তথাকথিত দুই স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট এবং সার্বিকভাবে ক্রিকেটে মুনাফাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যে প্রভাবশালী কতিপয় দলের প্ররোচণায় আইসিসির উদ্যোগের বিরুদ্ধে সক্রিয় অ্যাডভোকেসি করেছিল টিআইবি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি দুর্নীতিবিরোধী কৌশলের জন্য কিছু মৌলিক সংস্কারেরও প্রয়োজনীয়তার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো-
প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল ও কারিগরি উৎকর্ষ বৃদ্ধি করে ‘দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট’ এর স্বাধীনতা, পেশাদারিত্ব ও কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণ; বিসিবি’র দুর্নীতিবিরোধী কোড অনুসৃত হচ্ছে কিনা তা সুনির্দিষ্টভাবে পরিবীক্ষণের ক্ষমতা বিসিবি’র আয়ত্তে থাকা; পাতানো খেলা, স্পট-ফিক্সিং এবং প্রতারণার অন্যান্য কৌশল নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে আইনী সংস্কার করা ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন করা; বিসিবি’র পরিচালনা উন্নততর করতে একে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তদারকির আওতায় নিয়ে আসা অন্যতম।
এছাড়াও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সাথে সঙ্গতি রেখে বিসিবি’র ‘দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট’ কে (এসিইউ) সম্প্রসারণ করে শুদ্ধাচার ও দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটে পরিণত করা; ক্রিকেট খেলা ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সকল পক্ষ, বিশেষত ফ্র্যাঞ্চাইজি, ব্যবস্থাপক, কোচ, অধিনায়ক, আম্পায়ার, স্পন্সর, দেশি বা বিদেশী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানদের আইসিসি’র দুর্নীতিবিরোধী কোডকে সমুন্নত রাখতে আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করা এবং বিসিবি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের নিকটতম পরিবার, এজেন্ট ও প্রবেশ নিয়ন্ত্রণকারীসহ সকলের স্বপ্রণোদিতভাবে আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশ এবং প্রদেয় তথ্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তরুণ ক্রিকেটারদের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈশ্বিক ক্রীড়াঙ্গনে সাম্প্রতিককালে ব্যাপক আলোচিত ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট, সাইক্লিং, ব্যাডমিন্টন, আইস হকি, হ্যান্ডবল, অ্যাথলেটিকস এবং অন্যান্য খেলাতেও দুর্নীতি রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে সততা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহকে সকলের সামনে তুলে ধরতেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল (টিআই) এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। গ্লোবাল করাপশন রিপোর্ট: স্পোর্ট’ এ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলায় দুর্নীতির মূল কারণগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গবেষণাভিত্তিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। যে কোনো ধরনের ম্যাচ পাতানোকে অবৈধ করা ও তা ঠেকানোর প্রচেষ্টায় বিশ্বজুড়ে গৃহীত পদক্ষেপ এবং করণীয় বিষয়ে সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সুশাসন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কমিটি ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সততার নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা উচিত বলে প্রতিবেদনে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। একইসাথে ক্রীড়াঙ্গনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যে কোনো সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের যেমন খেলোয়াড়, সমর্থক, সরকার, পৃষ্ঠপোষক এবং মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক আর দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
টিআই’র মূল প্রতিবেদন পাওয়া যাবে www.transparency.orgএছাড়া বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে www.ti-bangladesh.org -এ।