জাগ্রত বিবেক নিয়ে দুর্জয় তারুণ্যকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়ানোর আহ্বান
ঢাকা, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: ‘জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য- দুর্নীতি রুখবেই’ প্রতিপাদ্যে আজ বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস)-এর দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ৪৫টি অঞ্চল ও ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি সনাক, স্বজন, ইয়েস, ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্য এবং টিআইবি কর্মী এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা এবং টিআইবি’র থিম সংগীত-ভিত্তিক কোরিওগ্রাফি প্রদর্শনের পর দুর্নীতিবিরোধী শপথ পাঠের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
এরপর জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য এবং সাংস্কৃতিক চেতনা ও দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল ও মহাসচিব সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সূচনা পর্বের সমাপ্তি ঘোষণা করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদ ও বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য প্রফেসর এম. মোয়াজ্জেম হোসেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে নাগরিকের দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহবান জানান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে নিজের বিবেক জাগ্রত করার আহ্বান জানিয়ে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দুর্নীতি প্রতিরোধ আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সমাজে ন্যায়-নীতির বোধ তৈরিতে নিজের বিবেক জাগ্রত করতে হবে।”
সেলিনা হোসেন তাঁর বক্তব্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির কিছু উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “সমষ্টির প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে হবে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর স্বেচ্ছাসেবীরা বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন নিয়ে নিজেদের নতুন ভাবনা তুলে ধরেন। এরপর টিআইবি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এর সঞ্চালনায় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের উদ্বুদ্ধকরণ পর্বে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের সহকারী কমিশনার সুশান্ত পাল, এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফট্ওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর পরিচালক ও টিম ইঞ্জিন-এর প্রতিষ্ঠাতা সামিরা জুবেরী হিমিকা। এরপর সারাদেশের ইয়েস সদস্যদের পাঠানো রচনা নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতা ২০১৫-এর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক।
এরপর বিকেলে জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ এর ঘোষণা পাঠ করা হয়। এসময় দুর্নীতিকে সর্বান্তঃকরণে ঘৃণা করার সম্মিলিত অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে দুর্নীতি থেকে বিরত থেকে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান অনুযায়ী একক ও সমষ্টিগতভাবে দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করার অঙ্গীকার করা হয়। গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে আরও বেগবান ও কার্যকর করতে সবাই একযোগে কাজ করতে সচেষ্ট থাকারও অঙ্গীকার করা হয়। এছাড়াও ন্যায্যতা, সুশাসিত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ; দুর্নীতি দমনে দুদকসহ কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান; উন্নয়ন, স্বচ্ছতা, গণতান্ত্রিক অধিকার; তথ্যের অধিকার, অবাধ তথ্য প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা; বিনিয়োগের আস্থা নিশ্চিত করা এবং কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বাতিল; জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নারী ও শিশুসহ সকল সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমান অধিকারের দাবি জানানো হয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ ও তার দল নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘জলের গান’ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।