TIB proposes a set of recommendations to prevent irregularities and corruption in Garment Sector supply chain (Bangla)
তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআইবি’র একগুচ্ছ সুপারিশ
ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬:তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনের প্রায় পুরো প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। শ্রম ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন পরিবীক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদেরকে উপরি দিলেই নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায়। পণ্যের মান, পরিমাণ ও কমপ্লায়েন্স-এর ঘাটতি ধামাচাপা দেয়া হয় ঘুষের মাধ্যমে। অংশীজনের সুশাসন ও জবাবদিহিতাহীন এই ধরনের পরিবেশে সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য চাঁদাবাজি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আজ এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
‘তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনে অনিয়ম ও দুর্নীতি মোকাবেলায় অংশীজনের করণীয়’ শীষর্ক এ গবেষণা প্রতিবেদনটি আজ সকালে ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন শাহজাদা এম আকরাম, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও নাজমুল হুদা মিনা, অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার- রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগ। অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনে অনিয়ম ও দুর্নীতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনের ভূমিকা চিহ্নিত করার জন্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জার্মানি ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ যৌথভাবে এ গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের সমন্বয়ে এ গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য তৈরি পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনের ১৬টি ধাপে বিদ্যমান দুর্নীতি চিহ্নিত করে তা মোকাবেলায় সুপারিশ প্রদান করা।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. জামান বলেন, “পোশাক খাতে অনিয়মের জন্য আমরা সাধারনতআমাদের কারখানা মালিক, রপ্তানিকারক এবং সরকারি কর্মচারীদের দোষারোপ করি, কিন্তু বায়াররাও এর জন্য কম দায়ী নন। কিছু বায়ার আছেন যারা কম দামে পণ্য কিনতে নন-কমপ্লায়েন্সড কারখানাকে অগ্রাধিকার দেন।
তিনি আরও বলেন,“রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বিদেশি বায়ারদের মধ্যে কারখানার মালিকদের চাপ দিয়ে ত্বরিত মুনাফা করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে।”
গবেষণায় দেখা যায় সাপ্লাই চেইন এর কার্যাদেশ, উৎপাদন ও সরবরাহ এ তিনটি পর্যায়েই দুর্নীতি বিদ্যমান। কোন কোন ক্ষেত্রে কারখানার মালিক কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষককে ঘুষের বিনিময়ে কারখানার কমপ্লায়েন্স সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য প্রভাবিত করেন। ছোট আকারের কারখানার ক্ষেত্রে যথাযথ কাগজপত্র না থাকা স্বত্বেও ঘুষের বিনিময়ে মার্চেন্ডাইজার কিছু উৎপাদন ইউনিটকে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। সেইসাথে ঘুষের বিনিময়ে ন্যূনতম মজুরি, কর্মঘণ্টা এবং শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন এবং তথ্য বিকৃত করার বিষয় এড়িয়ে যাওয়া, বেআইনিভাবে ‘সাব-কন্ট্রাক্ট’ প্রদান করা, এসএসসি নিরীক্ষকের প্রাপ্ত তথ্য গোপন করা এবং নিম্নমানের পণ্যের বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া তৈরি পোশাক কারখানাকে নির্দিষ্ট অ্যাক্সেসরিজ কারখানা থেকে উপকরণ ক্রয়ে মার্চেন্ডাইজারের পক্ষ থেকে বাধ্য করা, প্রয়োজনের তুলনায় কারখানার বেশি উপকরণ আমদানি এবং বাড়তি উপকরণ খোলা বাজারে বিক্রি করা, কারখানার পক্ষ থেকে অবৈধভাবে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ভাঙ্গানো, বায়ারদের পক্ষ থেকে চুক্তি-বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন চাহিদা পূরণে কারখানাকে বাধ্য করা, বায়ারের পক্ষ থেকে ইচ্ছা-মতো কার্যাদেশ বাতিল করা, বায়ারের পক্ষ থেকে পরিদর্শন/কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যাদেশ বাতিল করা, অনুমোদনের জন্য কারখানার কাছে মান পরিদর্শকের নিয়ম-বহির্ভূতভাবে অর্থ দাবি, গন্তব্য দেশের বন্দর পরিদর্শনের সময় নিম্নতর মূল্য প্রদানের উদ্দেশ্যে বায়ারের মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে কখনো জোরপূর্বক আবার কখনো সমঝোতার মাধ্যমে।
তৈরী পোশাক খাতের সাপ্লাই চেইনে দুর্নীতি মোকাবেলায় বায়ার, বিজিএমইএ, সরকার, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে টিআইবি ১৩ দফা তাৎক্ষণিক করণীয় ও ১৪ দফা কাঠামোগত সুপারিশ উত্থাপন করে। তাৎক্ষণিক করণীয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- দুর্নীতি হলে বিষয়টি বিজিএমইএ’কে অবগত করে ‘সালিশ সেল’ কর্তৃক বিষয়টি সুরাহা করার পাশাপাশি তদারকি ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষকে (যেমন বিজিএমইএ) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির জন্য জানানো, বায়ার কর্তৃক পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আকস্মিক কারখানা নিরীক্ষণ/পরিদর্শন করা, প্রয়োজনে বায়ার কার্যাদেশ বাতিল এবং কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি। কাঠামোগত সুপারিশসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বায়ারদের সাথে সমন্বিতভাবে একটি অনুসরণযোগ্য ‘মডেল চুক্তিপত্র’ তৈরি করা যেখানে পুরো প্রক্রিয়া দেওয়া থাকবে; চুক্তি করার সময় কারখানার সকল নিয়ম ও শর্ত পরিষ্কারভাবে নির্দেশিত চুক্তিপত্রে প্রদর্শন করা, বিজিএমই ও বায়ার-এর যৌথ উদ্যোগে বায়ারদের কমপ্লায়েন্স চাহিদা মেনে চলে এমন কারখানার একটি সমন্বিত তালিকা তৈরি করা ও তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা, বিজিএমইএ কর্তৃক সংশোধিত শ্রম আইন ও এর প্রয়োগ সম্পর্কে সদস্যদের তথ্য ও প্রশিক্ষণ দেয়া, সনদপ্রাপ্ত তৃতীয় পক্ষ নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করা। এছাড়াও অপরাপর সুপারিশসমূহের মধ্যে বায়ার/ভোক্তা কর্তৃক (অনৈতিক, অসাধু ও অন্যায্য আচরণ সংক্রান্ত) অভিযোগ দেওয়ার জন্য সহজে ও বিনামূল্যে প্রবেশযোগ্য সতর্কীকরণ হটলাইন স্থাপন করা, সরকারিভাবে সকল কারখানার জন্য এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেখানে প্রত্যেক কারখানার জন্য আলাদা শনাক্তকারী নম্বর থাকবে যেন তথ্যের কোনো ধরনের কারসাজি, নকল করা অথবা সংশোধন করা না যায়, কারখানার ন্যূনতম মজুরি সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য সরকারি উদ্যোগে তদারকি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
উল্লিখিত সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রণয়ন ও অ্যাডভোকেসি করার জন্য নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমকে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানায় টিআইবি।