টিআইবি’র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৫ ঘোষণা
ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫:৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ‘জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য - দুর্নীতি রুখবেই’- এই প্রতিপাদ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০.৩০ টায় টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয় এর মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতা ২০১৫’ এর পুরস্কার ঘোষণা এবং ‘গণমাধ্যম ও সুশাসন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ বছর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতায় প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগ ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেল এর সম্পাদক মিজান মালিক এবং নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজ। এই প্রতিবেদনে সাহসিকতার সাথে ভিডিওচিত্র ধারণ করায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক কাজী মোহাম্মদ ইসমাইল’কেও বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। এছাড়া এ বছরই প্রথমবারের মত প্রবর্তিত ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক জি এম মোস্তাফিজুল আলম বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। প্রতিবেদনটির ভিডিও চিত্রগ্রহণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম রতনকেও বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। উল্লেখ্য, বিচারকদের বিবেচনায় মান সম্মত প্রতিবেদন না পাওয়ায় এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক বিভাগ ও ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ে প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে কাউকেই পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। বিজয়ী সাংবাদিকদের সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও একলক্ষ টাকার চেক এবং দুইজন ভিডিও চিত্রগ্রাহকের প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে চেক পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী এবং সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সদস্য ড. আকবর আলি খান। ‘গণমাধ্যম ও সুশাসন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী এবং এমআরডিআই’র নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার পরও আমাদের দেশের গণমাধ্যম ঝুঁকি নিয়ে ভালো কাজ করে যাচ্ছে। গণমাধ্যম সরকারের সহযোগী ও সহযোদ্ধা হিসেবেই কাজ করে থাকে। তাই গণমাধ্যম যেমন সরকারের ইতিবাচক তথ্য প্রচার করবে, তেমনি সরকারের সমালোচনাও করবে। এই সমালোচনা সরকারকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “টিআইবি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান করায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কিছুটা হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গওহর রিজভী বলেন, “স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না। সরকারও এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। বর্তমান সময়ে এসে কোনো সংবাদ প্রকাশে কোনো সরকারই বাধা দিতে পারে না। গণমাধ্যম নানা উপায়ে সে সংবাদ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়। আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধুমাত্র সরকারের দিক থেকেই বাধাগ্রস্থ হয় না। এক্ষেত্রে সম্পাদকদের ওপর মিডিয়ার কর্পোরেট মালিকদের খবরদারির বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে।”
সভাপতির বক্তব্যে ড. আকবর আলি খান বলেন, “অনেক দুর্বলতা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যে অর্জন তা গর্ব করার মত। বিশেষ করে বিশ্বে সুশাসনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচের দিকে হলেও এদেশের গণমাধ্যমের অর্জন প্রশংসনীয়। ”
প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে বিজয়ী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম এর প্রতিবেদনটি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল ‘বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় বিদেশী বন্ধু ও সংগঠনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া সম্মাননা ক্রেস্টে ১৬ আনা (১ ভরি) পরিমাণ স্বর্ণ না দিয়ে মাত্র সোয়া তিন আনা স্বর্ণ দেয়ার চাঞ্চল্যকর জালিয়াতি ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী মিজান মালিক ও সাজ্জাদ পারভেজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘১০ দিনে বিবিএ পাশ’-এ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিনব প্রতারণা ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ক ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি’ শিরোনামে বিজয়ী প্রতিবেদনটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশে দুর্নীতি বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পেশাদারী উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর টিআইবি এ পুরস্কার প্রদান করে আসছে। এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে ২৩টি, প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক বিভাগে ৫টি এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ২৭টি সহ তিনটি বিভাগে মোট ৫৫টি প্রতিবেদন জমা পড়ে। উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতায় ১ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সময় পর্যন্ত প্রকাশিত বা প্রচারিত সংবাদগুলোই কেবল মূল্যায়িত হয়েছে। এবছর টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্বাচিত বিচারক ছিলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন, বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম ।