To prevent illegal human trafficking, TIB urges ensuring justice and demands exemplary punishment to those responsible for plight of Bangladeshi's floating on seas (Bangla)
অবৈধ মানব পাচার প্রতিরোধে সাগরে ভাসমান বাংলাদেশী নাগরিকদের দুর্দশার জন্য দায়ী চক্রকে চিহ্নিত করে
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান টিআইবি’র
ঢাকা, ২৪ মে ২০১৫:অবৈধ মানব পাচারকারীদের দ্বারা হাজার হাজার বাংলাদেশীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সাম্প্রতিক সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ দুরবস্থার জন্য অভিবাসন খাতে সুশাসনের ঘাটতি, যোগসাজশের দুর্নীতি ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতাকে দায়ী মনে করছে। এই চরম দুর্দশার জন্য দায়ী চক্রকে চিহ্নিত করে কোন প্রকার করুণা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একইসাথে টিআইবি বর্তমানে সাগরে ভাসমান কয়েক হাজার বাংলাদেশীদের উদ্ধারে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করতে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সম্প্রতি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রে মানব পাচারের উপর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এটি সুস্পষ্ট যে অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, পাচারকারীদের পাশাপাশি এক শ্রেণীর ক্ষমতাবান ব্যক্তি, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশের দুর্নীতির ফলে অভিবাসনে ইচ্ছুক বাংলাদেশের নাগরিকরা এরূপ নির্মম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে দেশীয় পাচারকারীদের সাথে পাচারকৃত দেশে এ জঘন্য ব্যবসার সাথে জড়িত এক শ্রেণীর কুচক্রী মহলের যোগসাজশ ও অন্যদিকে বিদেশে পাচার হতে পারলেই অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব এমন ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান প্রত্যাশী সরল, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করে জীবনের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় আরো একবার প্রতীয়মান হল যে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতে ব্যর্থতা শুধু আর্থ-সামাজিক ক্ষতিই করে না বরং মানুষের জীবন বিপন্ন করে; দুর্নীতি নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে।”
উল্লেখ্য টিআইবি’র ২০১২ সালের জাতীয় খানা জরিপের ১৪টি সেবা খাতের মধ্যে শ্রম অভিবাসন খাতে দুর্নীতির শিকার হওয়ার মাত্রা ছিল সর্বাধিক। উক্ত জরিপ অনুযায়ী শ্রম অভিবাসন খাতে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ দেওয়ার হার ছিল ৭৭% এবং নিয়ম বহির্ভূত অর্থের গড় পরিমাণ ছিল প্রায় দুই লক্ষ টাকা। প্রতিবেদনের তথ্য ও সুপারিশমালা ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও দুঃখের বিষয় সংশ্লিষ্ট মহল কর্তৃক দুর্নীতি প্রতিরোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
ড. জামান বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী ও বিজিবি সতর্ক ও দায়িত্বশীল হলে এতবড় মানবিক বিপর্যয় এড়ানো যেত। তিনি বলেন, অবৈধ পাচারকারী অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের ক্রসফায়ারের শিকার হওয়া সমস্যার সমাধান হওয়া দূরে থাকুক, বাস্তবে প্রকৃত অপরাধী, বিশেষ করে ক্ষমতাধর কুচক্রী মহলকে সুরক্ষা প্রদানের সমতুল্য কিনা এমন প্রশ্ন উত্থাপন হওয়াই যৌক্তিক। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে না পারলে সমস্যার মূলোৎপাটন অসম্ভব।
অন্যদিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী কিছুদিনের মধ্যেই ২০৮ জন বাংলাদেশেীকে মায়ানমার থেকে ফেরত আনার জন্য সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ড. জামান বর্তমানে সাগরে ভাসমান সকল বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানান। জাতিসংঘ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া এবং ফিলিপাইন সরকারের সাথে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে মানব পাচারের শিকার বাংলাদেশী নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব বলে ড. জামান অভিমত প্রকাশ করেন। মনে রাখতে হবে এই সমস্যার দু’টি দিক রয়েছে সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের এবং চাহিদাকারী হিসেবে পাচারকৃত দেশের কুচক্রী মহল। এক্ষেত্রে কুটনৈতিক দক্ষতা ও কার্যকরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ কুটনীতিকদের সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়।