Several projects undertaken to ensure good governance in garment sector have made satisfactory progress in the last one year: TIB recommends 10 measures to overcome various challenges (Bangla)

গত এক বছরে পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকল্পে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের সন্তোষজনক অগ্রগতি:
নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টিআইবি ১০-দফা সুপারিশ
ঢাকা, ২১ এপ্রিল ২০১৫: রানাপ্লাজা ট্রাজেডি-উত্তর পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকার ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের বহুমুখী উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নে গত এক বছরে ৬০ শতাংশ অগ্রগতি হলেও শ্রমিক অধিকার, চাকুরিকালীন নিরাপত্তা ও বিবিধ সুবিধা প্রদানে বিভিন্ন কারণে অনেক প্রকল্প প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আজ এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
২০১৪-১৫ সালের নতুন একটিসহ ৫৫টি সূচকে চলমান ৮০টি উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে টিআইবি বলেছে, গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়ন সম্পন্ন এবং ৪৮টির বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও এর মধ্যে ১২টি উদ্যোগের বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং অন্য ২০টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়ায় পোশাক খাতে অর্জিত সুশাসনের অগ্রগতি ধরে রাখা এখন বিবিধ চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন বাস্তবায়নে গৃহীত পদক্ষেপ: গত এক বছরের অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীষর্ক এ গবেষণা প্রতিবেদনটি আজ সকালে ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন নাজমুল হুদা মিনা, অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার- রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি। অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
২০১৩ সালে পরিচালিত টিআইবি’র ‘তৈরি পোশাক খাত: সুশাসনের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের দ্বিতীয় ফলোআপ হিসেবে বর্তমান গবেষণাটি ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় তৈরি পোশাক খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত ৬৩ টি বিষয়ের মধ্যে ৫৫টি বিষয়ে উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণে এবং সুশাসনের অন্তরায় দূরীকরণে সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহ হচ্ছে: ইপিজেড আইন, ২০১৩ সংশোধনীর উদ্যোগ, শ্রম ট্রাইবুনালে শ্রমিকদের সুবিধার জন্য আইনজীবি প্যানেল নিয়োগ এবং শ্রমবিধিমালা চূড়ান্তকরণের ও সাবকন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরির গাইডলাইন প্রস্তুতে উদ্যোগ গ্রহণ। অন্যান্য অংশীজন কর্তৃক গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহ হচ্ছে: কারখানা মালিক কর্তৃক মজুরি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত হারে প্রায় ৯৫ শতাংশ কারখানায় মজুরি প্রদান এবং অধিকাংশ কমপ্লায়েন্স কারখানায় শ্রমিকদের পরিচয়পত্র প্রদান। বিজিএমইএ কর্তৃক শ্রমিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সুইডিশ ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম এর সহযোগিতায় “সেন্টার ফর এক্সিলেন্স” স্থাপন এবং নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে কোর্স পরিচালনা করছে। অপরদিকে ইউরোপিয়ান বায়ারদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ (অ্যাকর্ড) ও আমেরিকান বায়ারদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়াকার্স সেফটি (অ্যালায়েন্স) কর্তৃক কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুত জরিপ কার্যের অধিকাংশ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠিত রানা প্লাজা ডোনার্স ট্রাস্ট ফান্ডে এ পর্যন্ত ১৯ মিলিয়ন ডলার সংগৃহীত হয়েছে এবং এর সাথে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল হতে ২.৪৮ মিলিয়ন সংযুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায় শ্রম আইন সংশোধিত হলেও গত এক বছরে শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা [ ২৩, ২৭, ১৮৯, (৬৫) ] সমূহের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ও শ্রমিকের সংগঠন করার অধিকার দমনে অপব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৩ প্রণয়নের উদ্যোগ গৃহীত হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি এবং শ্রম আইনের বিধিমালা প্রস্তুতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে কারখানাসমূহে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে রানাপ্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা সমূহের তদন্ত প্রতিবেদন এখনও জমা দেয়া হয়নি। এছাড়া শ্রম আদালতে মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রতা এবং বিভিন্ন তদারকি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে শিথিলতা লক্ষণীয়। সেইসাথে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর কর্তৃক অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও নিরাপত্তার অভিযোগ প্রদানে ‘হটলাইন’ স্থাপিত হলেও এ সম্পর্কিত প্রচারণার অভাব রয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে শ্রম অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিবন্ধনের পূর্বেই মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের তালিকা সরবরাহের ও ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন প্রদানে ৫- ২০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী ১৪২ টি ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা প্রদানের অভিযোগ রয়েছে।
রাজউক কর্তৃক পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ এখনও সম্পন্ন হয়নি। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে অনলাইন আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও অনুমোদনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নির্মাণ নকশা অনুমোদনে রাজউক ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে দু’টি কমিটি গঠিত হলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তা বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফায়ার সার্ভিস এর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কারখানা অধ্যুষিত ঢাকা অঞ্চলে ৯ টি নতুন ফায়ার স্টেশন স্থাপনে এবং মুন্সিগঞ্জে পোশাক পল্লী স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতাও পরিলক্ষিত হয় এই গবেষণায়।
গবেষণায় আরো দেখা যায় শ্রম আইনে দুই ঘন্টার বেশি অতিরিক্ত কাজ না করানোর নিয়ম অমান্য করে চার ঘন্টা অতিরিক্ত কাজের নিয়ম পরিপত্র জারি করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় অনেক কারখানায় নারী শ্রমিকদের রাত্রিকালীন কাজ না করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কিছু কিছু কারখানায় এক ঘন্টা অতিরিক্ত মজুরিবিহীন কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে। সেইসাথে উৎপাদন লক্ষ্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রেষণামূলক ব্যবস্থার পরিবর্তে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে কমপ্লায়েন্স ঘাটতি ও কার্যাদেশ বাতিল ইত্যাদি অযুহাতে ২২০টি মাঝারি ও ক্ষুদ্র কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক চাকুরী হারিয়েছেন। বায়ার, সরকার ও বিজিএমই এ কর্তৃক সাবকন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরির জরিপ করণে ও কমপ্লায়েন্স উন্নয়নে অঙ্গিকারাবদ্ধ হলেও তাদের মধ্যে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আশঙ্কা রয়েছে এ ধরণের অবস্থা বিরাজমান থাকলে এ খাতে কর্মরত এক পঞ্চমাংশ (প্রায় ৭ লাখ ) শ্রমিক চাকুরিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘রানাপ্লাজা ও তাজরীনসহ অন্যান্য ঘটনায় অভিযুক্তরা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হচ্ছে না। ফলে এধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে। এমনকি রানাপ্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে এক শত সাতাশ কোটি টাকা সংগৃহীত হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয় হয়েছে মাত্র উনিশ কোটি টাকা। প্রকৃত অর্থে একশ সাতাশ কোটি টাকাই ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাপ্য।’’
. ইফতেখারুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘রানাপ্লাজা দুর্ঘটনা পরবতী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরী বৃদ্ধি পেলেও তা জীবনযাত্রার মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি সময়মত তাদের প্রাপ্য মজুরীও শ্রমিকরা পান না। তিনি আরও বলেন, এসকল দুর্ঘটনা পরবর্তী বিভিন্ন আইন করা হলেও আইনের অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। তিনি তৈরী পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনেরও দাবি জানান।”
তৈরি পোশাক খাতে গৃহীত উদ্যোগ সমূহকে সফলভাবে বাস্তবায়ন ও সুশাসন নিশ্চিতকরণে টিআইবি’র উল্লেখযোগ্য সুপারিশসমূহ হল: বিভিন্ন উদ্যোগের বাস্তবায়ন ও সমন্বয় জোরদার করতে সরকার ও বিভিন্ন অংশীজনের সমন্বয়ে “পাবলিক সেক্টর বোর্ড” গঠন করা; সাব-কন্ট্রাক্ট ও ক্ষুদ্র কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা; শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠনের জন্য পোশাকের সংখ্যা প্রতি ১ থেকে ১.৫ সেন্ট প্রদানের (যেখানে বায়ার মালিক অনুপাত হতে পারে ৭৫:২৫) মাধ্যমে একটি ফান্ড গঠন; দ্রুততার সাথে শ্রমিক ডাটাবেজ গঠন করা; সব ধরনের সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরির সমন্বিত তালিকা তৈরী করা; শ্রম পরিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিক সংগঠন ও যৌথ দরকষাকষির অধিকার অবস্থা নিরূপনে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে টিআইবি। এছাড়াও সকল বায়ার ওয়েবসাইটে নিজ নিজ বাংলাদেশি ব্যবসায়িক অংশীদার কারখানার নাম প্রকাশ করা; রানা প্লাজা ও তাজরিন দুর্ঘটনায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণপ্রাপ্তদের তালিকা ও প্রাপ্ত ক্ষতিপূরণের পরিমান প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।
Media Contact

Press Release