TIB recommends 12 measures for improving good governance in Drug Administration (Bangla)
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় টিআইবি’র ১২ দফা সুপারিশ
ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫:যুগোপযোগী নীতি কাঠামো তৈরি, সমন্বিত আইন প্রণয়ন, আইনের কার্যকর প্রয়োগ, জনবল ও দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতির অভিযোগে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আশু পদক্ষেপ সহ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ সকালে সংস্থার ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন মো. শাহ্নূর রহমান প্রোগ্রাম ম্যানেজার- রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি, ও নাজমুল হুদা মিনা, অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার- রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি। টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন- টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় সরকার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভেজাল ও নকল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রতিককালে মাঠ পর্যায়ে জনবল বৃদ্ধি, ওষুধ পরীক্ষাগার পুনঃস্থাপন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভেজাল ও নকল ওষুধ প্রতিরোধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান জোরদারকরণ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণসহ বেশকিছু ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তা স্বত্বেও এ খাতটিতে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি বিদ্যমান রয়েছে ।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদান, প্রকল্প হস্তান্তর/স্থানান্তর, রেসিপি অনুমোদন, ওষুধ নিবন্ধন, নমুনা পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানী নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে পাঁচ শত থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন না করা, কর্মবণ্টনে স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং কর্মকর্তাদের পরিবীক্ষণ ও জবাবদিহিতায় ঘাটতি ও ওষুধ প্রশাসনের সেবা কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়ে যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে এ অধিদপ্তরে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আওতাধীন পাঁচ শ্রেণির ওষুধ কোম্পানির মধ্যে (অ্যালোপ্যাথি, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি ও হারবাল) অ্যালোপ্যাথি ওষুধের বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, অনিয়ম ও দুর্নীতি গবেষণায় আওতাভুক্ত করা হয় এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সুশাসন আলোচনার ক্ষেত্রে সুশাসনের বিভিন্ন নির্দেশকের (আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ, সংবেদনশীলতা, সেবার ঘাটতি ও দুর্নীতি) ওপর ভিত্তি করে তথ্য সংগৃহিত ও বিশ্লেষিত হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতা এ খাতের ব্যাপক কর্মপরিধি, ভৌগলিক আওতা এবং ওষুধের বাজারের ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিদ্যমান আইনি কাঠামো ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট নয় এবং এ ক্ষেত্রে আইনের কার্যকর প্রয়োগেরও ঘাটতি বিদ্যমান। এছাড়া ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। অপরদিকে অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সময়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সদিচ্ছার ঘাটতিও লক্ষ্য করা যায়। এসকল সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কারণে ওষুধের বাজার তদারকি ও পরিবীক্ষণে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে। জনবলের স্বল্পতায় ওষুধ প্রশাসন প্রতি বছর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ওষুধের বাজার তদারকি এবং প্রতিবছর প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধের মান পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “সুশাসনের সবচেয়ে বড় শর্ত দায়িত্বশীলতা। কিন্তু ঔষধ প্রশাসনে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি রয়েছে। অতি মুনাফা লাভের আশায় ওষুধ কোম্পানীগুলো নীতি নৈতিকতার মানদণ্ডের তোয়াক্কা করছে না। নির্বাহী বিভাগগুলোও এর সাথে সংশ্লিষ্ট। দৈনন্দিন খাবারের পাশাপাশি দৈনন্দিন ওষুধ নির্ভরশীলতা বেড়েছে। বিষাক্ত খাবার কিনতে আমরা যেমন বাধ্য হচ্ছি তেমনি ওষুধের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। ওষুধে যে পরিমাণ উপাদান থাকা উচিৎ তা থাকে না। এটিও সুশাসনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রভাবশালী ওষুধ কোম্পানী আছে যারা বিদেশেও ওষুধ রপ্তানী করে। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু রপ্তানীর জন্য যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য সে মানের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় না। যার ফলে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকতে বাধ্য হই। এমনকি ঝুঁকি নিরসনের কোন প্রকার মানদণ্ডও তারা অনুসরণ করেন না যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এবিষয়ে সরকারের আশু কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।”
প্রতিবেদনে উপস্থাপিত জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনের সাথে সম্পর্কিত এ অধিদপ্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় টিআইবি’র উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হল:- মেডিকেল ডিভাইস, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিকস সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত করে, ওষুধ সংক্রান্ত কমিটিগুলোর গঠন ও কর্ম প্রক্রিয়া আইনে অন্তর্ভুক্ত ও সুনির্দিষ্ট করে, ওষুধের মূল্য নির্ধারণে গেজেট প্রকাশের সময়কাল সুনির্দিষ্ট করে এবং ওষুধ আইনে অপরাধের জরিমানা ও শাস্তির অসামঞ্জস্যতা দূর করে কঠোর দণ্ডের ব্যবস্থা রেখে একটি সমন্বিত একক আইন প্রণয়ন এবং এর কার্যকর প্রয়োগে পদক্ষেপ নেয়া। এছাড়া কাজের পরিধি ও ভৌগলিক আওতা বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি ওষুধ পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি ও অতিসত্ত্বর অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সকল পর্যায়ে জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করা; অর্গানোগ্রাম ও কর্ম-বিবরণ অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন করা এবং ওষুধ কারখানা পরিবীক্ষণের দায়িত্ব বণ্টনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; ওয়েবসাইটে সকল প্রকার রেজিস্ট্রেশনের তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা; ওষুধ প্রশাসনের কার্যক্রমে জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা- এ লক্ষ্যে টোল ফ্রি নম্বর বা হটলাইন চালু করা; ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রণোদনার ব্যবস্থা ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য নৈতিক আচরণ বিধি তৈরি ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করে টিআইবি। অন্যদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে বিশেষত: ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি, মূল্য নির্ধারণ কমিটি, ব্লক লিস্ট অনুমোদন কমিটি এবং প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি বন্ধ করা; যে সকল ওষুধ কোম্পানি নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত করে তাদেরকে চিহ্নিত করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানায় টিআইবি।