Investigative journalists and cartoonists are awarded for fighting corruption (Bangla)

 
জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য, দুর্নীতি রুখবেই’- প্রতিপাদ্যে টিআইবি’র আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০১৪ উদযাপন
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪: ৯ ডিসেম্বর আর্ন্তজাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ‘জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য, দুর্নীতি রুখবেই’- এই প্রতিপাদ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করেছে। দিবসটি উদ্যাপনের অংশ হিসেবে আজ সকাল ১১টায় ধানমন্ডিস্থ দৃক গ্যালারি (৩য় তলা)তে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৪ ঘোষণা ও পুরষ্কার প্রদান ও ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এবছর প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগ ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হয়েছেন দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদক অরূপ রায়। আঞ্চলিক বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকায় নিজস্ব প্রতিবেদক এইচ এম আলাউদ্দিন; এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন যমুনা টিভির ইনভেস্টিগেশন সেল এর নিজস্ব প্রতিবেদক- সাজ্জাদ পারভেজ। এসএ টিভি তে থাকাকালীন তার প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয়। এই প্রতিবেদনে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ক্যামেরায় ছিলেন কামরুল হাসান সেলিম, আব্দুল আল মামুন ও সালাউদ্দিন তারেক। প্রতিবেদনের চিত্র ধারণে তাদের বিশেষ ভূমিকার জন্য টিআইবি তাদেরকেও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে।
বিজয়ী সাংবাদিকদের সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও আশি হাজার টাকার চেক এবং তিনজন ক্যামেরাপারসনের প্রতিজনকে বিশ হাজার টাকার সম্মানী দেয়া হয়। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী এবং সভাপতিত্ব করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জনাব খালেদ মুহিউদ্দীন, বার্তা প্রধান, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন এবং রোবায়েত ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানে তিনজন তরুণ সাংবাদিক যথাক্রমে আলমগীর স্বপন, বিশেষ প্রতিবেদক, যমুনা টেলিভিশন; শারমিন রিন্ভী, বার্তা সম্পাদক, বাংলা ভিশন এবং নাদিয়া শারমিন, প্রতিবেদক, ৭১ টেলিভিশন তাদের পেশাগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন।
. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় হল: গণমাধ্যমের বিকাশ, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে নাগরিক সমাজের কাজের পরিবেশ তৈরি করা এবং তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের পরিধি বিস্তৃত করা। এ বিষয়গুলিকে নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক মনোভাব ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
প্রফেসর ড. গওহর রিজভী বলেন, “তথ্য প্রকাশের অধিকারের ওপর বাধা দেওয়া কোনভাবেই উচিত হবে না। একে আঘাত দেওয়া আমাদের অধিকারের বাইরে। একে সবসময় সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। অনেক বিষয়ে আমাদের দ্বিমত হতেই পারে। কিন্তু সেই মতকেও আমাদের সম্মান করতে হবে। উক্ত মতের বিরুদ্ধে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি তবে এক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।”
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “সাংবাদিকরা আছেন বলেই সমাজের অনেক অসঙ্গতির কথা আমরা জানতে পারি। গণমাধ্যমের সাথে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের একটি নিবিড় সম্পর্কও রয়েছে। এটা গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি।” যদি সমাজে ব্যক্তিগত সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। জনগণ যেহেতু রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের একটি বিরাট উপাদান তাই জনগণের সার্বভৌমত্বের উপাদানগুলিকে নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।”
প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে বিজয়ী সাংবাদিক অরূপ রায় এর প্রতিবেদনটি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ‘ঠিকানা জালিয়াতি করে এক হাজার কনস্টেবল নিয়োগ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এবং ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার পুলিশ কনস্টেবলকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। আঞ্চলিক বিভাগে বিজয়ী প্রতিবেদনটি দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকায় ২০১৩ সালের ২২ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘খুলনার স্বাস্থ্য সেবায় দুরবস্থা (সিরিজ)’ শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদক খুলনার স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সার্বিক চিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী প্রতিবেদনটিতে নাম-সর্বস্ব বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং ক্ষেত্র বিশেষে আন্দোলন সংগ্রামে ভাড়াটে পিকেটার ও অংশগ্রহণকারীসহ এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সংগঠকদের মুখোশ উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পেশাদারী উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি বছর টিআইবি এ পুরস্কার প্রদান করে আসছে। এবার তিনটি বিভাগে সর্বমোট ৪৮টি প্রতিবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে ২৮টি, প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক বিভাগে ১২টি এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ৮টি প্রতিবেদন। মূলত ১ জানুয়ারী ২০১৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ সময় পর্যন্ত প্রকাশিত বা প্রচারিত সংবাদগুলোই কেবল মূল্যায়িত হয়েছে। টিআইবি’র ট্রাস্টিবোর্ড কর্তৃক বিচারকম-লীর সদস্যরা হলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আলী খান; দৈনিক প্রথম আলো’র ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভি’র বার্তা প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন।
বিকেলে একই স্থানে ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা পুরস্কার ২০১৪’ ঘোষণা ও প্রদান এবং কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের মাননীয় রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রিসেল এবং ডেনমার্কের মাননীয় রাষ্ট্রদূত মিসেস হ্যানে ফুগ্ল এসকেয়ার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা ২০১৪ এর বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়নপ্রাপ্ত কার্টুনিস্টদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়। এবারের প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে (১৩-১৮ বছর) ১ম ও ২য় স্থান অধিকার করেছে যথাক্রমে এস এম আসিফ বিন গাফ্ফার এবং মাহামুদুল হাসান ইমন। ‘খ’ বিভাগে (১৯-৩৫ বছর) ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেছে যথাক্রমে মোঃ ফরিদুর রহমান রাজীব, আরাফাত করিম এবং মেহেদি হক। এছাড়া ২টি বিভাগ থেকে মোট ৩৫টি কার্টুনকে বিশেষ মনোনয়ন দেয়া হয়। উল্লেখ্য এ প্রতিযোগিতায় দুইটি বিভাগের বিজয়ী ও বিশেষভাবে মনোনীত সর্বোমোট ৫৯টি কার্টুন নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আজ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ৩.৩০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে। টিআইবি’র ওয়েবসাইটসহ ফেইসবুক পেইজেও (www.facebook.com/TIBangladesh) এ কার্টুনগুলো দেখা যাবে।
উল্লেখ্য, দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের আরো ৪৫টি এলাকায় সনাক ও ইয়েস সদস্যদের সহযোগিতায় মানববন্ধন, র‌্যালী, কার্টুন ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা অনুষ্ঠান, তথ্য মেলা, তরুণ সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পথ নাটক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং দুর্নীতিবিরোধী শপথ গ্রহণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে।
Media Contact

Press Release