৯ ডিসেম্বর আর্ন্তজাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে টিআইবি’র বিভিন্ন কার্যক্রম
ঢাকা, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪: আগামীকাল ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত আর্ন্তজাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। ‘জাগ্রত বিবেক, দুর্জয় তারুণ্য, দুর্নীতি রুখবেই’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিবছরের মত টিআইবি বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এ বছর দিবসটি উদ্যাপন করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে দুর্নীতিবিরোধী ক্যাম্পেইন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান ও আলোচনাসভা, কার্টুন প্রদর্শনী ও মানববন্ধন উল্লেখযোগ্য। দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে টিআইবি আজ ৮ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ। অন্যান্যের মধ্যে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত ইয়েস গ্রুপের সদস্য এবং সমমনা সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ বলেন, “ছোট ছোট দুর্নীতি থেকেই বড় বড় দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। সে জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতেই হবে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে আমাদের তরুণ সমাজ। একজন তরুণ যদি সৎ হয় এবং সৎ হওয়ার চেষ্টা করে তবেই সে অন্য একজনকে সৎ হওয়ার আহ্বান জানাতে পারে।” তিনি মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদেরকে দুর্নীতিবিরোধী শপথ পাঠ করিয়ে সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশ দুর্নীতিবিরোধী সনদ বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে সুশীল সমাজ এবং সাধারণ জনগণের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তাদের কথা বলা ও কাজ করার সুযোগকে সংকুচিত না করে বরং বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে।” তিনি ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসকে সরকারিভাবে পালনে এবং স্বীকৃতি প্রদানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় উদ্যোগের আহ্বান জানান। অন্যদিকে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের কার্যকরতা পর্যবেক্ষণে গঠিত বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের সাড়ে তিন শতাধিক সংগঠনের এক কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে আজ এক বিবৃতিতে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ দুর্নীতি প্রতিরোধের যে অঙ্গীকার করেছে তা বাস্তবায়নে সরকারগুলোকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আনক্যাক কোয়ালিশন (UNCAC Coalition) দুর্নীতিবিরোধী সনদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পদ পাচারের ব্যাপারে মূলনীতি গঠন এবং সেই মোতাবেক এগিয়ে যেতে আরও দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে জনগণের তথ্যে অভিগম্যতা এবং দুর্নীতিবিরোধী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি জানাতে সরকার সমূহের প্রতি আহ্বান জানায়। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে গঠিত আনক্যাক কোয়ালিশনের অন্যতম সদস্য সংস্থা হলো টিআইবি। দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে গত ১ ডিসেম্বর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের সাথে অনুষ্ঠিত ৫ম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের শুরুতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল টিআইবি’র “দুর্নীতিকে না বলুন” ক্যাম্পেইনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন হিসেবে খেলা শুরুর আগে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ১৪ জন খেলোয়াড় ÒSay No to CorruptionÓ লিখিত ব্যানার সামনে রেখে ছবি তোলেন। একই দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড স্টেডিয়াম চত্বরে অনুরূপ বার্তা সম্বলিত দুটি স্থায়ী ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে ক্রিকেট অঙ্গন থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অংশ হিসেবে ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, সকাল ১০.৩০টায় ধানমন্ডিস্থ দৃক গ্যালারি (৩য় তলা)তে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৪ বিতরণ এবং ‘বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। একইদিন বিকাল ৪টায় একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা ২০১৪ এর বিজয়ী কার্টুনিস্টদের পুরস্কার প্রদান ও সপ্তাহব্যাপি কার্টুন প্রদর্শনী’র উদ্বোধন। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের মাননীয় রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রিসেল এবং ডেনমার্কের মাননীয় রাষ্ট্রদূত মিসেস হ্যানে ফুগ্ল এসকেয়ার। উভয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। উল্লেখ্য, দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের আরো ৪৫টি এলাকায় সনাক ও ইয়েস সদস্যদের সহযোগিতায় মানববন্ধন, র্যালী, কার্টুন ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা অনুষ্ঠান, তথ্য মেলা, তরুণ সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পথ নাটক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং দুর্নীতিবিরোধী শপথ গ্রহণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
