সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা অর্পণে সাংবিধানিক সংশোধনীর পূর্বে জনমত যাচাই ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের অভিমতের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান টিআইবি’র
সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা অর্পণে সাংবিধানিক সংশোধনীর পূর্বে জনমত যাচাই ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের অভিমতের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান টিআইবি’র
ঢাকা, ২৩ আগস্ট ২০১৪:উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদের ওপর ন্যাস্ত করার উদ্যোগের প্রেক্ষিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ বিষয়ে ব্যাপক-ভিত্তিক জনমত যাচাই এবং সাংবিধানিক ও আইন বিশারদ, গবেষক, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের অভিমত সংগ্রহ সাপেক্ষে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ১৮ আগস্ট ২০১৪ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৭২’র সংবিধান অনুযায়ী সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে আরো গভীরতর ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের মাধ্যমে অভিসংশন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা অপরিহার্য বলে মনে করে টিআইবি।
আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং আদর্শ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নিরিখে তথা বিশ্বের উন্নততর গণতান্ত্রিক দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিসংশনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ৭২’র সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনা যৌক্তিক বিবেচিত হতে পারে। তবে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের স্বপ্ন নিয়ে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপনের প্রত্যাশায় ৭২ এর সংবিধান প্রণীত হয়েছিল তা যেভাবে ক্ষমতার রাজনীতির হাতে জর্জরিত হয়েছে তার ফলে সংসদের হাতে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা এককভাবে ন্যাস্ত করা কতটুকু যৌক্তিক তা গভীরতর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে ক্ষমতাহীন করা হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতটুকু বজায় থাকবে এবং বিচারকগণ কতটুকু স্বাধীন, দলীয় প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ ও চাপের উর্ধ্বেথেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”
তিনি বলেন, “অভিসংশন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য একে একদিকে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে ও অন্যদিকে বিচারপতিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ও প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে সুনির্দিষ্ট বিধান রাখতে হবে। দেশে সুদীর্ঘকালের লালিত বিদ্বেষপূর্ণ, পারস্পরিক আস্থাহীন ও ক্ষমতা-কেন্দ্রীক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বিলুপ্ত করে সংসদের হাতে বিচারকদের অভিসংশনের একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রদান করা হলে বিচার ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবের প্রাতিষ্ঠানীকিকরণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে।”
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বিচারপতিদের অভিসংশন বিষয়ে জনমত যাচাই এবং আরো ব্যাপক, গভীর ও বহুমুখী আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। এই লক্ষ্যে সাংবিধানিক ও আইন বিশেষজ্ঞ, সুখ্যাতি সম্পন্ন প্রাক্তন বিচারপতি, গবেষক, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে বিচারপতি অভিসংশন বিষয়ক নাগরিক উদ্যোগ অপরিহার্য বলে মনে করছে টিআইবি।