TIB for full implementation of automation in Chittagong Port and Custom House, demands exemplary punishment for irregularities and illegal transactions (Bangla)

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউজে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অটোমেশনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবী টিআইবি’র
অনিয়ম ও অবৈধ লেনদেনের সাথে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান
ঢাকা, ১৪ জুলাই ২০১৪: চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও কাস্টম হাউজে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় শুল্কায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পূর্ণ অনলাইনে পরিচালনা এবং বন্দরে বাল্ক পণ্যের কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য অটোমেশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করাসহ ৯ দফা সুপারিশ উত্থাপন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ “চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউজে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর--খোদা ও জুলিয়েট রোজেটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের। ২০১৪ এর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউজের উপর পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণীত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে অটোমেশন পদ্ধতির আংশিক বাস্তবায়নের ফলে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে: বন্দরে অটোমেশন বা সিটিএমএস বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমানে ইন্টারনেট বা মোবাইলের মাধ্যমে টার্মিনালের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনারের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য জানা; ওয়েব নির্ভর অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সংস্করণের ফলে, যে কোন স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিল-অফ-এন্ট্রি ও বিল-অফ-এক্সপোর্ট ফরমে তথ্য দেওয়ার সুবিধা, অনলাইনে ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট (আইজিএম) দাখিলের পর বিল-অফ-এন্ট্রি ফরম পূরণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর (C number) তৈরী; অনলাইনে বিল-অফ-এন্ট্রি ফরম পূরণ করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্যের এইচএস কোড অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ, নির্ধারিত হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধের ব্যবস্থা এবং বন্দরে ইন্টারনেট বা মোবাইলের মাধ্যমে টার্মিনালের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনারের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্যের সহজলভ্যতা সৃষ্টি হয়েছে ।
তবে উভয় প্রতিষ্ঠানেই অটোমেশন আংশিক বাস্তবায়ন করা হলেও প্রায়োগিক সফলতা নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ও বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ বিদ্যমান রয়েছে। অটোমেশন বাস্তবায়নের কিছু ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হলেও এক্ষেত্রে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের কার্যকর সফলতা অর্জিত হয়নি। অন্যদিকে কাস্টম হাউজে অটোমেশনের মাধ্যমে কাগজবিহীন অফিস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো প্রতিটি ধাপে ম্যানুয়াল স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা বিদ্যমান। অন্যান্য সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কমার্শিয়াল পণ্যের শুল্কমূল্য পরিশোধ চালু না হওয়া; কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সহায়তাকারী হিসেবে অবৈধভাবে ৬০-৭০ জন ব্যক্তির নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ; বন্দরে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবহারকারীদের আগ্রহ ও আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব; ইয়ার্ডে কন্টেইনার স্ট্রিপিং বন্ধ করা; বন্দরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে কন্টেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) এর প্রয়োজনীয় মডিউলসমূহ তাদেরকে সরবরাহ না করা বা ব্যবহারের নির্দেশ না দেয়া ইত্যাদি।
এছাড়া শুল্কায়ন ও পণ্য ছাড় প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের চিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বন্দরে অটোমেশনে চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পূর্বেই প্রকল্পের মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শুল্কায়নে বিভিন্ন ধাপে সর্বনি ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩,০০০ টাকা, কায়িক পরীক্ষণে ১০০-,০০০ টাকা; কাস্টম হাউজে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে দৈনিক নূন্যতম ৪৭.৫ লক্ষ টাকা এবং পণ্য ছাড়ে দৈনিক নূন্যতম ১৭.২ লক্ষ টাকা নিয়ম বহির্ভূতভাবে আদায়ের অভিযোগের প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বার্থান্বেষী কিছু মহলের যোগসাজশ ও কারসাজির কারণে একদিকে যেমন অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না তেমনি এর ফলে উক্ত মহল আর্থিকভাবে বিশেষ লাভবান হচ্ছে এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও শুল্ক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ব্যাহত হচ্ছে। অবৈধ লেনদেনের সুযোগ অব্যাহত রাখা অটোমেশন বাস্তবায়নে অনীহা ও প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ। যারা অনিয়মের সাথে জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টম হাউজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবী।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউজে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় আধুনিকায়নে টিআইবি’র উত্থাপিত উল্লেখযোগ্য সুপারিশসমূহের মধ্যে রয়েছে: বন্দরে সিটিএমএস-এর পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সকল মডিউল প্রস্তুত ও ব্যবহার; বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ করা; স্বাধীন, নিরপেক্ষ তৃতীয় কোনো পক্ষের মাধ্যমে নিয়মিত বিরতিতে বন্দর ও কাস্টম হাউজের কর্মদক্ষতা ও অটোমেশনের কার্যকরতা পরিমাপে “পারফরমেন্স ইভ্যালুয়েশন” করা; কাস্টম হাউজ ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায় সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান; কাস্টম হাউজ ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নৈতিক আচরণ বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা এবং বছরে একবার সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব ও বিবরণ প্রকাশ ইত্যাদি।

Media Contact

 


Press Release