TIB Calls for Effective and Visible Role of the Opposition: Quorum Crisis still a concern (Bangla)
‘পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন’
বিরোধীদলকে কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা পালনের আহ্বান টিআইবি’র: কোরাম সংকট এখনো উদ্বেগজনক
ঢাকা, ৭ জুলাই ২০১৪:সংসদে কোরাম সংকটের দীর্ঘ মেয়াদী প্রবণতা কিছুটা কমে আসলেও দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির ঘাটতির কারণে কোরাম সংকট এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। দৈনিক গড়ে ২৮ মিনিট কোরাম সংকটের কারণে নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের অংশ হয়েও বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির পরিচিতির প্রচেষ্টা সংসদকে একটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। আজ দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনের কার্যক্রমের ওপর টিআইবি’র পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংসদকে কার্যকর করতে ১৮ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। ব্র্যাক সেন্টার ইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোরশেদা আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন এডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিক হাসান।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংসদ নেতার উপস্থিতি ছিল ৮৮.৮৮% (৩২ দিন) এবং বিরোধী দলীয় নেতার উপস্থিতি ছিল ৩৮.৮৮% (১৪ দিন)। দশম সংসদের ইতিবাচক দিক হল প্রধান বিরোধী দল সংসদ বর্জন করেনি। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দৃশ্যমান ছিল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দশম সংসদের একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধান বিরোধী দল এবং সরকারের মন্ত্রীপরিষদে সহাবস্থানকে কার্যকর সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধক হিসেবে উপস্থাপন করেন। সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অসংসদীয় ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করে নবম সংসদের বিরোধী দলের সমালোচনার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সকল সংসদীয় (৫১টি) কমিটি গঠিত হলেও বিরোধী দলের কোনো সদস্যকে কমিটির সভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে কমিটিগুলোতে সদস্যদের সার্বিক গড় ইতিবাচক উপস্থিতি ছিল ৭৮%। নবম সংসদের কয়েকজন মন্ত্রীকে দশম সংসদে একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির ফলে নবম সংসদের কোনো অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন ও তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনার সুযোগ তৈরী হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। নবম ও দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে দলীয় প্রশংসা হয়েছে ৮৫৬ বার, প্রাক্তন বিরোধী দলের সমালোচনা করা হয় ৫৩১ বার যেখানে নবম সংসদে প্রতিপক্ষ দলের সমালোচনা করা হয়েছিল ৩৪২ বার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে মোট কোরাম সংকট হয়েছে ১৭ ঘন্টা ৭ মিনিট যার অনুমিত অর্থমূল্য প্রায় ৮ কোটি ১ লক্ষ টাকা। অধিবেশনে আইন প্রণয়নে মোট সময়ের মাত্র ১.৮% ব্যয়িত হয়েছে। অন্যদিকে সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি সংক্রান্ত আইন ২০১০ এবং সংসদের স্থায়ী কমিটি (সাক্ষ্য গ্রহণ ও দলিলপত্র দাখিল) আইন-২০১১’ নামে একটি বিলের খসড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তৈরি করলেও পাসের জন্য তা প্রথম অধিবেশনে উত্থাপিত হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহিতা কার্যক্রেমর আওতায় কার্যপ্রণালী বিধি ৭১-ক বিধিতে মোট ৭১টি জনগুরুত্ব সম্পন্ন নোটিসের ওপর আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন খাত ও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত ৫টি মূলতবী প্রস্তাব অন্য পর্বে আলোচিত হবে এ মর্মে প্রত্যাখাত হলেও পরে তা নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। উল্লেখ্য, নিয়োগ ও বোর্ডের প্রশ্নপত্র ফাঁস, মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টের জালিয়াতি, উপঢৌকন নিয়ে চিফ হুইফ এর বক্তব্য, পৌরমেয়র পদে বহাল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া, হলফনামায় দেওয়া তথ্যের বাইরে অপ্রদর্শিত সম্পদ আহরণের অভিযোগ ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে বিরোধী দলকে কোন গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন: “সংসদের মূল কাজ জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করা, অথচ সংসদের কার্যাবলীর মধ্যে আইনপ্রণয়নের হার ২ শতাংশেও পৌছাঁয় না। এর কারণ ব্যবসায়ী অধ্যুষিত সংসদ। আর সেজন্যই জনগণের স্বার্থের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায় না এবং জনস্বার্থে আইন প্রণয়নে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। অথচ ব্যবসায়ীক স্বার্থের আইনগুলো অত্যন্ত দ্রুত পাশ হয়।”
ইফতেখারুজ্জামান সংসদকে জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার মাধ্যমে সংসদকে আরো অধিক কার্যকর করতে বিরোধী দলকে আরো দৃশ্যমান ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
প্রতিবেদনে সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ় করা, সংসদকে কার্যকর করা ও সর্বোপরি সংসদকে জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে সদস্যদের উপস্থিতি, তাদের গণতান্ত্রিক আচরণ ও অংশগ্রহণ, সংসদীয় কমিটি কার্যকর করা এবং তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সুপারিশসমূহ হলো- সংসদ অধিবেশনে সদস্যদের অনুপস্থিত থাকার সর্বোচ্চ সময়সীমা উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে ৩০ কার্যদিবস করার বিধান করা; সদস্যদের স্বাধীন ও আত্মসমালোচনামূলক মতামত প্রকাশে ও ভোটদানে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা; আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে সংসদে আলোচনা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া; সংসদ অধিবেশন ও স্থায়ী কমিটির সভায় সদস্যদের উপস্থিতিসহ সংসদ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে ও সময়মত ওয়েবসাইটে প্রকাশ; সংসদীয় কমিটির সুপারিশসহ কার্যবিবরণী জনগণ তথা সরকারি ও বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমে সহজলভ্য করা; কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য/আপত্তি লিখিতভাবে জানানোর বিধান প্রণয়ন; সুপারিশের আলোকে মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জানানোর বিধান এবং সংসদীয় কমিটিতে কোনো সদস্যের অন্তর্ভুক্তির ফলে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ পাওয়া গেলে সে সম্বন্ধে যথাযথ অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি উক্ত সদস্য মন্ত্রী হলেও তিনি সংশ্লিষ্ট আলোচনা বা ভোট দান থেকে বিরত থাকবেন এরকম বিধান প্রণয়নের সুপারিশ করা হয় পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদনে।