ঢাকা, রবিবার, ২৯ জুন: গত শনিবার জাতীয় সংসদে পাশকৃত অর্থবিলে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগের মাধ্যমে কালো টাকা বৈধ করার বিধান রাখায় গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে বিধানটি বাতিলের আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক বিধানটি অব্যাহত রাখায় সরকারের নীতিকাঠামো দুর্নীতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। একদিকে এরুপ বিধানের বিরুদ্ধে সংসদ ও সংসদের বাইরে অর্থমন্ত্রী বিভিন্নভাবে অবস্থান গ্রহণ করেও কোনো প্রকার যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াই অনৈতিকতা-বান্ধব এ সুযোগটি আবারো অব্যাহত রাখা যেমন হতাশাব্যঞ্জক তেমনি বিব্রতকর। এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সরকারের ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন মনোভাব’ বা বিদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ঘোষিত উদ্যোগের পরিপন্থী। পরস্পরবিরোধী এই অবস্থানের ফলে দেশে দুর্নীতিকে পুরস্কৃত করা ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “এ রকম বিধান চালু হলে তা হবে একদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনৈতিকতাকে পুরস্কৃত করার সমার্থক ও অন্যদিকে তা সততা ও বৈধতাকে নিরুৎসাহিত করে অধিকতর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। আবাসন খাতের সৎ ক্রেতাদের জন্য বিধানটি বৈষম্যমূলক হবে এবং তা জনগণকে অনৈতিক আয়ে উদ্বুদ্ধ করবে। শুধু তাই নয়, সরকারের এই অবস্থান আবাসন খাতে বিদ্যমান অনিয়মকে প্রশ্রয় দেবার পাশাপাশি খাতটিকে একটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নির্ভর দুর্নীতি সহায়ক খাত হিসেবেও পরিগণিত করবে।”
ড. জামান বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী কালো টাকা বৈধ করার এই অব্যাহত সুযোগ রাজস্ব আদায় বা বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে কখনো কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেনি। অথচ কোন কোন বিশেষ প্রভাবশালী সুবিধাভোগী মহলের অবৈধতাকে প্রশ্রয় দিয়ে সরকার সমাজে নির্বিকারভাবে নৈতিকতাবিরোধী অবস্থানকে সুরক্ষা দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে উদ্বেগজনকভাবে ভুলুষ্ঠিত করেছে।”
টিআইবি দীর্ঘদিন থেকেই বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার বিধানের বিপক্ষে অ্যাডভোকেসী করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাজেট ঘোষণার পূর্বে গত ২৭ মে, দীর্ঘদিনের উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে বর্তমান বাজেটে কালো টাকা বৈধকরণের সুযোগ না দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।