TIB urges clarification on whitening black money in the budget (Bangla)

কালো টাকা বৈধ করার ব্যাপারে বিভ্রান্তি নিরসনের দাবি টিআইবি’র;
বাজেট বক্তৃতায় ঘোষিত সুশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধের পথরেখা অস্পষ্ট
ঢাকা, ৭ জুন ২০১৪: ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের গতকালের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পরিস্কার করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ লক্ষ্যে টিআইবি আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ বিবিবিবিবি ধারা রহিত করে কালো টাকা বৈধ করার সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুযোগ বন্ধ করার আহবান জানায়। অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক উল্লিখিত উপাদান- রাজনৈতিক অঙ্গীকার, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এবং সামাজিক আন্দোলন বেগবান করতে জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়নে কার্যকর পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “প্রভাবশালী মহলের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে বাজেটে কালো টাকাকে বৈধতা দেবার অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক পথে অর্থমন্ত্রীর না যাওয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণা প্রশংসনীয়। তবে একই সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর এর চেয়ারম্যানের বক্তব্যে বিভ্রান্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাজেট বক্তৃতায় বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার ফলেই বিভ্রান্তি ঘনিভূত হয়েছে। প্রাক-বাজেট আলোচনা-বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী কালোটাকা বিরোধী অবস্থান ঘোষণা করে যে আশাবাদ সৃষ্টি করেছেন তার প্রেক্ষিতে সরকারকে আরো দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “যদি কোনো কৌশলে কোনো ভিন্ন রূপে বা প্রক্রিয়ায় প্রকারান্তরে একই সুযোগ রাখা হয় তবে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক এবং অর্থমন্ত্রীর নিজের বিবেকের তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বহুবার ঘোষিত দুর্নীতি-বিরোধী অবস্থানের পরিপন্থী। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ বিবিবিবিবি ধারা রহিত করে কালো টাকা বৈধ করার সকল সুযোগ বন্ধ করার আহবান জানায় টিআইবি। রাষ্ট্রের নীতি-কাঠামো যেভাবে ক্রমাগত দুর্নীতি সহায়ক শক্তির করায়ত্ত হতে চলেছে, দুর্নীতির প্রভাবে সততা, নৈতিকতা ও আদর্শ যেভাবে পদদলিত, এই প্রেক্ষিতে কালো টাকা বৈধতা দেয়ার সুযোগ বন্ধ করে সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে এই পদক্ষেপটি নিতে পারে।”
অন্যদিকে বাজেট বক্তৃতায় দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এবং সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা কথা স্বীকার করা হলেও দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়  সুনির্দিষ্ট কোন রূপরেখা না থাকায় এবং বাজেট বক্তৃতায় বিশেষতঃ সরকারের দুর্নীতি-বিরোধী দলিল জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বা তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে কোনো বক্তব্য না থাকায় ড. জামান বিস্ময় প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের অধীন জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন ইউনিটের ক্ষমতা, সম্পদ ও দক্ষতা বৃদ্ধিসহ কৌশলপত্রের আওতাভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচারের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা ও অর্থায়নের আহ্বান জানানো হয়। অন্যদিকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে প্রতিরক্ষা খাত ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও সুশাসনের অগ্রগতির উপাদান হিসেবে প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করার কথা বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে যা বিভ্রান্তিকর। একই সাথে বাজেট বক্তৃতায় দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক গৃহিত দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমকে সরকারের সাফল্য হিসেবে  উল্লেখ থাকায় এটি স্পষ্ট যে সরকার দুদককে আর অন্য দশটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতই গণ্য করে থাকে যা দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক নয়। অথচ একই কার্যক্রম বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার নিয়ে বিদেশ থেকে ফেরতপ্রাপ্ত পাচারকৃত অর্থ দুদকের হাতে অর্পণ করতে সরকারি দীর্ঘসূত্রিতার মাধ্যমে দুদকের উল্লিখিত কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যা দুর্ভাগ্যজনক।
উপস্থাপিত বাজেট পুস্তিকায় জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বিস্তারিত ব্যাখা ছাড়াই আবারও বাজেটের সর্ববৃহৎ খাতের অন্যতম হিসেবে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হল। স্বাস্থ্যখাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষায় এরূপ বরাদ্দ বৃদ্ধির পেছনের যুক্তি সম্পর্কে জনগণের আরো তথ্য জানার অধিকার রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় সম্পর্কে জনগণের আস্থা বাড়বে বলে মনে করে টিআইবি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে উৎসে কর ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে সরকার যতটুকু প্রাধান্য দিয়েছে, সে তুলনায় তৈরি পোশাক কর্মীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণসহ মৌলিক অধিকার ও প্রণোদনার গুরুত্ব বাজেটে দেওয়া হয়নি, যা দুঃখজনক।

Media Contact

 


Press Release