Significant steps in implementing National Integrity Strategy: needs firm commitment of institutions and stakeholders (Bangla)

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ;
সুফল পেতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনের সুদৃঢ় প্রত্যয় আর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি;
কৌশলপত্রের ঘাটতি পূরণ করতে হবে - টিআইবি
ঢাকা, ২৯ মে ২০১৪: বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের ঘাটতিসমূহ দূর করে এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলিলটিকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন উপযোগী করে তোলার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একই সাথে আর্থিক বরাদ্দ ও নিয়মিত প্রতিবেদন প্রণয়নের বিধান রেখে নৈতিকতা কমিটির কার্যক্রমকে প্রশাসনিক কার্যক্রমের আওতায় আনার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আজ রাজধানীর হোটেল অবকাশে ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল: বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব আহ্বান জানানো হয়। এতে মূল প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাধন কুমার দাস ও শাম্মী লায়লা ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের।
জানুয়ারী - মে ২০১৪ সময়কালে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে প্রণীত এই গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ‘জাতীয় শুদ্ধাচার উপদেষ্টা পরিষদ’ এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ‘নির্বাহী কমিটি’ রয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক ও বাস্তবায়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন ইউনিটের নির্দেশনায় সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা কমিটি গঠন ও একজন ‘ফোকাল পয়েন্ট’ নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন ইউনিট সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচার বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রেরণ করেছে, ফোকাল পয়েন্ট ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং জেলা পর্যারে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে শুদ্ধাচার সম্পর্কে মতবিনিময় করেছে। তাছাড়া শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইনী সংস্কার ও প্রশাসনিক উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ১০টি প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রমে বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে। যেমন - ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল ও ই-সার্ভিস সিস্টেম চালু, দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে সকল স্থায়ী কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সার্ভার স্টেশন চালু, সোস্যাল পারফমেন্স অডিট চালুর উদ্যোগ, দুদক-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধে মনিটরিং সেল গঠন এবং বিভিন্ন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ ইত্যাদি। অন্যদিকে অনেক কর্মপরিকল্পনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয় না। যেমন, সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পদ্ধতি, নীতি ও কার্যপ্রণালি প্রণীত হয়নি, ন্যায়পাল নিয়োগ হয়নি, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
অন্যদিকে অরাষ্ট্রীয় ৬টি অর্থাৎ রাজনৈতিক দল, বেসরকারি খাতের শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া এখনও প্রণীত হয়নি। তারপরও এ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। যেমন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর উদ্যোগে কয়েকটি এনজিও’র সহায়তায় এনজিও ও সুশীল সমাজ খাতের জন্য একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করে তা জনসাধারণের মতামতের জন্য উন্মু্‌্‌ক্ত করা হয়েছে, পাঠ্যসূচিতে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইত্যাদি। তবে এ সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রেই কোন অগ্রগতি নেই। যেমন, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে প্রত্যাশিত পর্যায়ের গণতন্ত্র চর্চার ঘাটতি রয়েছে, রাজনৈতিক দলের আচরণবিধি প্রণয়নের উদ্যোগ নাই, সরকারের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সুবিধা অর্জন ও সুস্থ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র প্রভাবিত করার সংস্কৃতি অব্যাহত এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়া ইত্যাদি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী কৌশলপত্রের উল্লেখযোগ্য ঘাটতিসমূহ হচ্ছে: দুর্নীতিরোধে অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রমের অনুপস্থিতি; জাতীয় শুদ্ধাচার ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান - তথ্য কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্রে অন্তর্ভুক্ত না করা, প্রতিষ্ঠানসমূহের চলমান ও নিয়মিত কার্যক্রমের প্রাধান্য ইত্যাদি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলটি সফলভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে উল্লেখযোগ্যচ্যালেঞ্জসমূহ হলো - সুপারিশের সাথে কর্মপরিকল্পনার সামঞ্জস্যহীনতা; কর্মসম্পাদনের নির্ধারিত সময়সীমা সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নয়; অংশীজনদের মধ্যে শুদ্ধাচার সম্পর্কিত সচেতনতার অভাব; শুদ্ধাচার কৌশলটি বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব; কিছুক্ষেত্রে যেমন- বিচার বিভাগ (সুপ্রীম কোর্ট) এবং অ্যাটর্নী জেনারেলের কার্যালয়ে নৈতিকতা কমিটি গঠন ও ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত না হওয়া, এখতিয়ার না থাকার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে নিয়মিত সভা করতে না পারা এবং নৈতিকতা কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রেরণে দীর্ঘসূত্রতা।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের যে প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে তা যথাযথ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ সকলকে বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলটির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টিআইবি’র উত্থাপিত ১০ দফা সুপারিশসমূহের মধ্যে অন্যতম হল: সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সকল অংশীজনের মধ্যে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা; যে সকল প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা কমিটি ও শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত এবং ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারিত হয়নি তা দ্রুত সম্পন্নকরণ; আর্থিক বরাদ্দ এবং নিয়মিত প্রতিবেদন প্রণয়নের বিধান রেখে নৈতিকতা কমিটির কার্যক্রমকে প্রশাসনিক কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা; জাতীয় শুদ্ধাচার ব্যবস্থার সকল স্তম্ভ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে যেমন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে কৌশলপত্রে অন্তর্ভুক্তকরণ; রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনায় শুদ্ধাচারের প্রধান সূচক এবং দুর্নীতি রোধের বিষয়টিকে অগ্রাধিকরের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং সকল অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচার বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদ্ধতি চূড়ান্তকরণ।

Media Contact


Press Release