নারীর সমতাভিত্তিক উন্নয়নে চাই সুশাসন ও কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধ
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ
ঢাকা, মার্চ ১৬, ২০১৪: আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪ উপলক্ষে ‘নারীর সমতাভিত্তিক উন্নয়নে চাই সুশাসন ও কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধ’ প্রতিপাদ্যে টিআইবি কর্তৃক আয়োজিত দুই দিনব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আজ রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর মহাসচিব সেলিনা হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিযোগিতায় সারাদেশের উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতাধিক বিতার্কিক অংশগ্রহণ করেন।
ছায়া সংসদীয় পদ্ধতির এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের প্রথম অধিবেশনে সরকারি দলের পক্ষ থেকে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগবিধি বিল ২০১৪’ উপস্থাপন করা হয় যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সম্ভব এবং দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রস্তাবনা ছিল ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে নারীর ক্ষমতায়ন বিল ২০১৪’ এবং প্রস্তাবনার প্রতিপাদ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমেই দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব। প্রস্তাবিত দুইটি বিলের উপযোগিতা সম্পর্কে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বিতর্কে অংশগ্রহণ করে সে বিষয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। উল্লেখ্য, বিলের ওপর আলোচনায় সংবিধানের ৭০ (খ) ধারাটি বলবৎ ছিলনা অর্থাৎ সরকারি বা বিরোধীদলের সদস্যরা জনস্বার্থে বিলের পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলেছেন এবং ভোট দিয়েছেন।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন জান্নাতুল রাফেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রথম রানার-আপ হয়েছেন মেহেদী হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় রানার-আপ হয়েছেন শাকিল আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “মানুষ হিসেবে সকলকে সমানভাবে সম্মান দিতে হবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গা তৈরী করতে হবে। নারী অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক আন্দোলন তৈরী করতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বচ্ছ, দক্ষ এবং উন্নত একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তিনি নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একটি স্বাবলম্বী ও সুশাসিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে মন্ত্রী সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সেলিনা হোসেন বলেন, “আমরা চাই না দুর্নীতির কারনে দেশ মাতৃকার মুখ মলিন হয়ে যাক। তাই যে যেখানে আছেন সেই জায়গা থেকে সমাজ পরিবর্তনে উদ্যোগী হতে হবে। সারা পৃথিবীর কাছে দেশের মুখকে উজ্জ্বল করতে হবে।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন “আমরা সব জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে পারিনি। আমরা নারী অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি এমনকি ৭১ এর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান আজও প্রদান করতে পারিনি। তবে আমি আশাবাদী যে নতুন প্রজন্ম অবশ্যই নারীদেরকে যথাযথ সম্মানের জায়গা নিশ্চিত করবে।” তিনি আরো বলেন, “মানুষের নৈতিকতা যখন হারিয়ে যায় তখন ন্যায় বিচারও নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। যার ফলে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশী পড়ে নারীদের ওপর। তাই আমি মনে করি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন আর নারী অধিকার আন্দোলন একসূত্রে গাঁথা।”