Bangladesh's score improves in CPI- ranked 2nd from the bottom in South Asia

দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের কিঞ্চিত অগ্রগতি হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে

দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি

ঢাকা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩: আজ বার্লিন-ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান গতবছরের তুলনায় সামান্য এগুলেও দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে। তাছাড়া, বৈশ্বিক গড় স্কোরের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর অনেক কম হওয়ার কারনে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক। দুর্নীতি দমনে আরো কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)
সিপিআই ২০১৩ এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে টিআইবি’র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান এ বছর বাংলাদেশ ০-১০০ স্কেলে ২৭ স্কোর পেয়ে ১৭৭টি দেশের মধ্যে উর্ধ্বক্রম অনুসারে ১৩৬-তম এবং নিম্নক্রম অনুসারে ১৬-তম অবস্থানে রয়েছে। ২০১১ ও ২০১২ সালের তুলনায় নিম্নক্রম অনুযায়ী তিন ধাপ এবং ২০১২ সালের ১৪৪তম অবস্থানের তুলনায় আট ধাপ এগিয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় মাত্র এক স্কোর বেশী পাওয়ায় (২০১২ সালে ছিল ২৬) এবং ২০১১ সালে বাংলাদেশ একই স্কোর (২৭) পাওয়ায় সার্বিকভাবে বাংলাদেশের দুর্নীতির ধারণাসূচকে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ড. জামান বলেন, “একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নিম্নক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় সর্বনিম্নে অবস্থান করছে এবং ২০১৩ সালে বাংলাদেশ যে মাত্র এক পয়েন্ট বেশী পেয়েছে তা বৈশ্বিক গড় ৪৩ এর চেয়ে অনেক কম হওয়ায় উল্লিখিত কিঞ্চিত অগ্রগতি তাৎপর্যহীন প্রতিয়মান হয়।”
২০১৩ সালে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত তালিকার শীর্ষে যৌথভাবে অবস্থান করছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড, যাদের প্রত্যেকের স্কোর ৯১। ৮৯ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে নরওয়ে ও সিঙ্গাপুর যাদের স্কোর ৮৬। ৮ স্কোর পেয়ে ২০১৩ সালে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে সম্মিলিতভাবে সোমালিয়া, উত্তর কোরিয়া ও আফগানিস্তান। ১১ ও ১৪ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্নের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দেশ হিসেবে রয়েছে যথাক্রমে সুদান ও দক্ষিণ সুদান।
সূচকে স্কেলের ০ স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণার মাপকাঠিতে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসন প্রতিষ্ঠিত দেশ বলে ধারণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, “দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপক বিস্তার এবং জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের দরিদ্র জনগণ। আমরা সরকারের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখতে পাই নাই। সেকারণে নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় সরকারকেই নিতে হবে। যেকোন সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের দাবি উত্থাপনে সোচ্চার হওয়া। দুর্নীতি দুর করতে হলে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”
. জামান অভিমত প্রকাশ করে বলেন, “বিভিন্ন কারণে সিপিআই সূচকে এবছর প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: দুর্নীতিবিরোধী নির্বাচনী অঙ্গীকারের প্রেক্ষিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক উদ্যোগ স্বত্ত্বেও কার্যকরভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রনের দৃষ্টান্তের ঘাটতি, বিশেষ করে পদ্মাসেতু প্রকল্প, রেলওয়ে নিয়োগ বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, হলমার্ক ও ডেষ্টিনির মত “রুই-কাতলা’’ শ্রেণীর দুর্নীতির ঘটনা প্রবাহের এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মহোৎসবের শীর্ষে সোনালী ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাকে গুরুত্বহীন অভিহিত করার মত দুর্নীতির অভিযোগের যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার পরিবর্তে একধরনের অস্বীকৃতির মানসিকতার প্রসার ঘটেছে।”
তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অঙ্গীকারের বিপরীতে একগুচ্ছ সংশোধনী প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে সরকারের পুরো মেয়াদকালে কমিশনকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে রেখে প্রায় অকার্যকর করে রেখেছিল। বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুদককে অনেক সময়ই দেখা গেছে সরকারের এক প্রকার বি-টিমের ভূমিকা পালন করতে। সংসদের শেষ অধিবেশনে সংবিধান ও সরকারের নিজস্ব নির্বাচনী অঙ্গীকার পরিপন্থী অবস্থান নিয়ে দুদক আইন সংশোধন করে জজ, ম্যাজিষ্ট্রেট ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে দুদকের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেবার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতির বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিয়ে দুদককে বাস্তবে অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব এবারের সূচকে বিবেচিত হয়নি, কারন সূচকের তথ্য সংগ্রহের সময়ের পর এ ঘটনাটি ঘটেছে, তবে যেভাবে সংশোধনীটিকে নিয়ে সরকার উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে কাল ক্ষেপণ করে দুদককে স্থবির করে রাখার প্রবণতা দেখিয়েছে তা নিশ্চয়ই পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টির আড়ালে ছিল না।”
সিপিআই ২০১৩ এর জন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তথ্যসূত্র হিসেবে ৭টি প্রতিষ্ঠানের যথাক্রমে: বার্টেলসমান ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স ২০১৪, ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কর্র্তৃক পরিচালিত কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস্‌, গ্লোবাল ইনসাইটের কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস্‌, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস এর ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট ২০১২, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এক্সিউকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে ২০১৩ এবং ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট পরিচালিত রুল অব ল ইনডেক্স ২০১৩ এর রিপোর্টসমূহ জরিপে ব্যবহৃত হয়েছে ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিপিআই নির্ণয়ে টিআইবি কোনো ভূমিকা পালন করে না। এমনকি টিআইবি’র গবেষণা থেকে প্রাপ্ত কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণ সিপিআই-এ প্রেরণ করা হয় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের মতই টিআইবি সিপিআই সূচক স্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ করে মাত্র।

Media Contact


Press Release