সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পূর্বানুমতির বিধান রেখে
দুদক আইন সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় টিআইবি‘র নিন্দা ও উদ্বেগ
ঢাকা, ১১ নভেম্বর ২০১৩: প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ও মামলা দায়েরে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান সম্বলিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন সংশোধনী বিল-২০১৩ কে সংবিধান পরিপন্থী আখ্যায়িত করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রোববার জাতীয় সংসদে পাশকৃত আইনটি অনতিবিলম্বে পুনর্বিবেচনার জোর দাবি জানিয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, “মেয়াদের শেষ পর্যায়ে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক এই সংশোধনী পাশ করা শুধু হতাশাজনকই নয়, সরকারের জন্য আত্মঘাতীমূলক। দুদকের যতটুকুই ক্ষমতা ছিল তাও খর্ব করায় জনগণের কাছে সরকারের এই পদক্ষেপ প্রতারণামূলক হিসেবে বিবেচিত হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে পূর্বানুমতি নেওয়ার এই বিধান সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক এবং বৈষম্যমূলক। কারণ সংবিধান মতে একই অপরাধের জন্য কোন বিশেষ শ্রেণির জন্য বিশেষ মাপকাঠি প্রয়োগের সুযোগ নেই।”
তিনি আরো বলেন, “বিষয়টি শেষ অধিবেশন পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অন্ধকারে রেখে একতরফাভাবে তড়িঘড়ি করে এধরণের নেতিবাচক বিধান রেখে আইনটির সংস্কার করা দুরভিসন্ধিমূলক। অন্যদিকে এর মাধ্যমে আরো প্রমাণিত হলো যে সরকার তার পূর্ণ মেয়াদকালে আইনটির সংশোধনীটি ঝুলন্ত রেখে দুদককে শুধুমাত্র মনস্তাত্বিক চাপের মধ্যেই রাখেনি, বরং একে সম্পূর্ণ অকার্যকর করার সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করলো। দুর্নীতি বান্ধব এই সংশোধনীর ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারসহ সকল বড় বড় বক্তৃতা ফাকা-বুলি ছাড়া আর কোনভাবে দেখার সুযোগ থাকলো না।” সংশোধিত দুদক আইনটি এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের গোপন আঁতাতের সুযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশে দুর্নীতির গতিকে আরো বেগবান করবে বলে ড. জামান আশংকা প্রকাশ করেন।
দুর্নীতির কোন অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্ত চলাকালে কমিশন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অথবা সংস্থা থেকে যে কোন প্রতিবেদন চাওয়া, পুলিশ, র্যাব, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, জাতীয় রাজস্ব্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দুর্নীতি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে ক্ষমতা বৃদ্ধি, দুদকের সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রদান, দুর্নীতির তথ্য প্রদানকারীর নিজের পরিচয় গোপন রাখার বিধান, অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশে বাধ্য না করা, দুর্নীতি’র তদন্ত দ্রুত শেষ করা এই মর্মে সংশোধিত আইনটিতে যে বিধান রাখা হয়েছে সেগুলোকে টিআইবি স্বাগত জানায়। তবে উল্লিখিত পশ্চাদমুখী পদক্ষেপের কারণে এসব বিধান তাৎপর্যহীন থেকে যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।
উল্লেখ্য, বিগত ২৬ এপ্রিল ২০১০ সালে মন্ত্রিপরিষদের সভায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে ২০০৪ এর সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার প্রতিবাদে টিআইবি দেশব্যাপি এক প্রচারাভিযান পরিচালনা করে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১-৫ জুলাই ২০১০ এ দেশব্যাপী টিআইবি পরিচালিত এক জনমত জরিপে প্রায় ৯৭ ভাগ উত্তরদাতা দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেন। এছাড়া ঢাকাসহ দেশব্যাপী মানববন্ধন, প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের সাক্ষর, মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা এবং অনলাইনে আবেদন সংগ্রহ করে। এইসকল কর্মসূচির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীবর্গ, সকল সংসদ সদস্য, সংসদীয় কমিটি ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বরাবরে বিভিন্ন পর্যায়ে পলিসি ব্রিফ উপস্থাপনসহ অ্যাডভোকেসি করা হয়। টিআইবি, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে সরকার সংশোধনী প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অঙ্গীকার করে। আইনটি পাসের ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত সরকার নির্লজ্জভাবে কমিশনকে অকার্যকর করার পথ বেছে নিল, যা দেশবাসীর জন্য হতাশাব্যঞ্জক এবং সরকারের জন্য আত্মঘাতী।