সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
টিআইবি-সুজন গোলটেবিল আলোচনা
সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি আইন প্রণয়নের দাবি
ঢাকা, ৩১ আগস্ট ২০১৩: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর যৌথ উদ্যোগে আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি আইনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারীগণ সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানানো হয়।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, এবং সভাপতিত্ব করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান সরকার এমপি, সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সি এম শফি সামি, সাবেক সচিব জনাব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সাবেক মন্ত্রী সরদার আমজাদ হোসেন, সাবেক এমপি জনাব হুমায়ুন কবির হিরু, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মো. জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আইনসভা বা সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। আর সংসদীয় গণতন্ত্রের চরিত্র এবং গুনগত মান নির্ভর করে সংসদ সদস্যদের নিজেদের চারিত্রিক গুনাবলী, মান ও আচরণের ওপর। একইভাবে সংসদের মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠানটির প্রতি জনগণের আস্থা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সংসদ সদস্যদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট ও তাঁদের সুনাম-দুর্নামের ওপর। তাই সংসদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে সংসদ সদস্যদের আচরণ সংযতকরণ ও নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণেই, বিশেষত আইন প্রণেতাদের সদাচরণ নিশ্চিত করার জন্য একটি সংসদ সদস্য আচরণ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।”
আালী ইমাম মজুমদার বলেন, “আমাদের জাতীয় সংসদরে স্পিকারের ক্ষমতা রয়েছে কোন সদস্য অসদাচরণ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের। কিন্তু বিগত সময়ে কখনোই আমাদের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখিনি। যদি তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মাননীয় স্পিকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তাহলে নতুন আচরণ বিধি আইনেরও প্রয়োজন হতো না।”
মো. শহিদুজ্জামান সরকার এমপি বলেন, “সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তারপরও প্রয়োজন হলে জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে এধরণের একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমাদের জাতীয় সংসদের সদস্যরা ব্যবসার সাথে জড়িত এটা উদ্বেগের বিষয়। স্বাধীনতার পর এই হার ছিল ১৮ শতাংশ অথচ এখন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ব্যবসায়ী। তবে সকল শ্রেণী পেশার মানুষেরই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে এবং এটা সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে ব্যবসা করবেন এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।”
সভাপতির বক্তব্যে ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, “কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়-এ নীতি বাস্তবায়ন না হলে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব।” তিনি সংসদীয় কার্যক্রম ও জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বার্থের দ্বন্দ্বকে জবাবদিহিতার অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সংসদের ভিতরে এবং বাইরে মাননীয় সদস্যদের একাংশের বক্তব্য, আচরণ এবং কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় এই আইনের প্রয়োজনীয়তা, সময়োপযোগিতা ও যথার্থতা প্রতীয়মান হয়েছে। এই আলোকে অংশগ্রহণকারীগণ সংসদের আসন্ন অধিবেশনে বিলটি পাস করার জোর দাবি জানান। বক্তরা বলেন, এই বিলটি আইনে রূপান্তরিত হলে এর কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে একদিকে সংসদ সদস্যদের নিকট জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সহজতর হবে এবং অন্যদিকে সংসদের ওপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এর কার্যকর প্রয়োগ মাননীয় সংসদ সদস্যদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বক্তরা।
উল্লেখ্য যে, ২০১০ সালে জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি শিরোনামে একটি বেসরকারি বিল উত্থাপন করেন। সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি জনাব আব্দুল মতিন খসরু, এমপি’র নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি বিলটি পর্যালোচনা করে এটি পাশের ব্যাপারে ইতোমধ্যে সুপারিশ করেছে।