সংবাদবিজ্ঞপ্তি
জনগণের তথ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে সকলের অংশগ্রহণ জরুরি
ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১: তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের বাস্তব ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে ‘তথ্য অধিকার আইন’ নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। তবে এর সুফল অর্জনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এ প্রেক্ষিতে তথ্য অধিকার ফোরাম আইনটির সঠিক বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি মূল করণীয় বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে।
তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং অবাধ তথ্য বিনিময়ের অন্যান্য পূর্বশর্ত পর্যালোচনা করার জন্য আইনিটি প্রণয়নের দুই বছর পূর্তিতে তথ্য অধিকার ফোরাম পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যারা কোন না কোন মাধ্যমে তথ্যের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই আবেদনকৃত তথ্য পেয়েছেন। অন্যদিকে ৮৪.৩ শতাংশ উত্তরদাতা আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ৮৪.১ শতাংশ এ সংক্রান্ত যথেষ্ট প্রচারের অভাবকেই দায়ী করেছেন।
তথ্য অধিকার ফোরাম এর আহ্বায়ক শাহীন আনাম এর সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন্ এ তথ্য জানার অধিকার দিবস উপলক্ষে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য কমিশনার রাষ্ট্রদূত (অব.) মোহাম্মদ জমির উপসি'ত ছিলেন। আলোচকবৃন্দের মধ্যে উপসি'ত ছিলেন তথ্য কমিশনার এম.আবু তাহের ও নিজেরা করি এর সমন্বয়ক খুশী কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তথ্য অধিকার ফোরামের পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাঈদ আহমেদ, সিইও, আইআইডি ও মো.হাবিবুর রহমান, রিসার্চ ফেলো, টিআইবি।
তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশে তথ্য অধিকার আইনের দাবি অনেকদিনের। এ আইন প্রণয়নের ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আমরা সকলে মিলে যদি আইনটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতির মাত্রা কমবে। যত বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যাবে, ততো দেশের উন্নয়ন সাধন হবে।’ তথ্য অধিকার নিয়ে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দেশে এ আইনটি পাশ হয়েছে মাত্র দু’ বছর। এই অল্প সময়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সরকার তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন কারিগরি সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ ছাড়াও সংবিধানে স্বীকৃত বাক্ স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার তা নিশ্চিত করতেই তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছে। তিনি একেবারে গ্রামীণ পর্যায়ে এ আইন সম্পর্কে তথ্য জানানোর জন্য সুশীল সমাজ সহ গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
মোহাম্মদ জমির বলেন, ‘মাত্র ৫শ’ এনজিও তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে, যা প্রশংসার দাবিদার। তবে এ সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বাংলায় এ সংক্রান্ত ক্ষুদ্র বার্তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান। তথ্য কমিশন সম্প্রতি স্কুল পর্যায়ে পাঠ্যসূচিতে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে তথ্য প্রদান করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য কমিশনার এম. আবু তাহের বলেন, ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও এনজিও কে তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সবাইকে জানানোর জন্য সুপারিশ করেছেন।’
খুশী কবির তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে গণমাধ্যম ও এনজিওর ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে এ সংক্রান্ত টিভি স্পট, নাটক ইত্যাদি তৈরি সহ গ্রামীণ মেলা আয়োজনের পরামর্শ প্রদান করেন।
ফোরাম কর্তৃক দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৩৬টি এলাকায় অবসি'ত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক ২১৬টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ৪৪.২ শতাংশই তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সম্পর্কে জানেন না। তবে যে ৫৫.৮ শতাংশ উত্তরদাতা আইনটি সম্পর্কে জানেন, তাদের অধিকাংশই (৫৯.২ শতাংশ) ১ জুলাই ২০০৯ এর পর প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার জন্য কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। এর মধ্যে ২৯.৪ শতাংশকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে তদবির করতে হয়েছে এবং ৭.৮ শতাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে। তথ্যদাতাদের ৮৩.৩ শতাংশ সরকারি ও ৮৩.৩ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়েছিলো।
‘তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা: নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে অধিকাংশ তথ্যদাতাই (৭৫.৩%) বলেছেন, যথেষ্ট প্রচারের অভাবের কথা। এ ছাড়া আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা (৭৩.৫%), তথ্য প্রদানে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব (৪৪.৭%), গোপনীয়তার মানসিকতা (৩৮.১%), নাগরিকদের তথ্য চাওয়ার চাহিদা নেই (৩৩.৫%), প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্থতির অভাব (৩০.৭%), বেসরকারি সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা (২২.৮%), কারিগরি প্রস্থতির অভাব (২০.৫%), মিডিয়ার (১৬.৩%) এবং আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আক্ষেপ (১৩%) - এ বিষয়গুলো জরিপে উঠে এসেছে।
আলোচকবৃন্দ তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে ভবিষ্যৎ করণীয় হিসেবে তথ্য ঘাটতি চিহ্নিতকরণ ও তথ্য সংরক্ষণ; তথ্য আদান-প্রদানে ডাক ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার; আইনটি সম্পর্কে নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি; নাগরিকের কাছে তথ্যের চাহিদা সৃষ্টি; তথ্য কমিশন ও বিদ্যমান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কর্মপরিধি ও পদমর্যাদা সুনির্দিষ্টকরণ এবং তথ্য সংগ্রহের একাধিক বিকল্প নিশ্চিতকরণ করার কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে তথ্য অধিকার ফোরামের ওয়েবপোর্টাল এর উদ্বোধন করা হয়।
গণমাধ্যমযোগাযোগ
রিজওয়ান-উল-আলম
পরিচালক
আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
ফোন: ০১৭১৩০৬৫০১২
ই-মেইল: rezwan@ti-bangladesh