সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
উপজেলা পরিষদ কার্যকর করার লক্ষ্যে টিআইবি’র ১২ দফা সুপারিশ প্রস্তাবনা
ঢাকা, ২৮ নভেম্বর ২০১১: স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে উপজেলায় সংসদ সদস্যের উপদেষ্টার মর্যাদা রহিত করে স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা পরিহারের সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আজ ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে “কার্যকর উপজেলা পরিষদ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়াম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যকার ত্রিমুখী ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে উপজেলা পরিষদের অকার্যকারিতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে সমস্যার উত্তরণে ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার জনাব শওকত আলী, এমপি। আলোচনায় বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ। আরো উপস্থিত ছিলেন হারুন অর রশীদ হাওলাদার, চেয়ারম্যান, দুমকী উপজেলা, পটুয়াখালী; আনোয়ারুল হক বাবলু, চেয়ারম্যান, আক্কেলপুর উপজেলা, জয়পুরহাট; সৈয়দ রাজ্জাক আলী, চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা, ঝালকাঠি; মোঃ শফিকুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেঘনা উপজেলা, কুমিল্লা; আব্দুল রউফ, উপজেলা চেয়ারম্যান, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। গোলটেবিল আলোচনায় কার্যপত্র উপস্থাপন করেন মোঃ হাবিবুর রহমান, প্রোগ্রাম ম্যানেজার টিআইবি।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে উপজেলা পরিষদ কার্যকর হবে না এরূপ সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, উপজেলা পরিষদ কার্যকর করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘‘সংবিধান বিরোধী কোনো আইন সংসদ পাশ করতে পারে না। করলে তা হবে অগণতান্ত্রিক। জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতার উর্দ্ধে গিয়ে স্থানীয় সরকারকে অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে।’’ এ প্রসঙ্গে তিনি সংসদ সদস্যদেরকে উপজেলা পরিষদে উপদেষ্টার ভূমিকা প্রদানের সমালোচনা করেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বর্তমান আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সংবিধানে বর্ণিত স্থানীয় শাসনের ধারণার সাথেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আইনগতভাবে সংসদ সদস্যরা উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হলেও বাস্তবে তাঁরা উপদেশ নয়, কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, যা স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের পরিপন্থী।”
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানকে একটি মানদন্ড হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ আইন করে পরোক্ষভাবে উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, যা সংবিধান পরিপন্থী। উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদের প্রধান তবে কর্মকান্ড বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনা করবেন পরিষদ। পরিষদ কখনো ব্যক্তি বা পদবী সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে না। সর্বোপরি, এ পরিষদকে স্বায়ত্বশাসিত হতে হবে এবং প্রতিটি পরিষদকে স্বাধীন হতে হবে।
অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংসদ কর্তৃক পাশকৃত যে কোনো আইন, তা যতই ক্রুটিযুক্ত হোক না কেন, তা প্রজাতন্ত্রের সকলের মেনে চলা উচিত। উপজেলার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অনুকূলে স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করলে অল্প সময়ে
দৃশ্যত পরিবর্তন আনা সম্ভব। এজন্য তিনি অর্থ ব্যবস্থাপনার যথাযথ মনিটরিং, সেইসাথে নির্বাচিত প্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বিতভাবে কার্য সম্পাদন করার কথা বলেন। পরিপত্রের প্রাধান্যের সমালোচনা করে তিনি আইন ও সংবিধান অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
প্রতিবেদনে উপজেলা পরিষদ প্রত্যাশিতভাবে কার্যকর না হওয়ার আইনগত, প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলা হয় উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বর্তমান মহাজোট সরকারের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। অথচ নির্বাচনের তিন বছর পরেও উপজেলা পরিষদ কার্যকর না হওয়ায় স্থানীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং গ্রামীণ জনগণ উপজেলা পরিষদের সুফল ভোগ করতে পারছে না। সংসদ সদস্য, চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যকার ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের কারণে উপজেলা পরিষদের দৈনন্দিন কার্যক্রমসহ স্থানীয় উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, এবং উপজেলা পরিষদ অকার্যকর থেকে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি তা পূরণ হচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলা হয় ভারতের পঞ্চায়েত, নেপাল, ফিলিপাইন, সুইডেন ও ইংল্যান্ডে স্থানীয় সরকার স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। নেপালে স্থানীয় সরকার নিজস্ব লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। নিউজিল্যান্ডে স্থানীয় সরকার কমিশন থাকায় কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
উপজেলা পরিষদের বর্তমান এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে টিআইবি ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
‘উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮’ এর ২৫ ধারা বাতিল ও ৪২ (৩) ধারা বাস্তবায়ন; সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও কর্তব্য সাংঘর্ষিক না হওয়া; ‘উপজেলা পরিষদ আইন ২০১০’ এর খসড়ায় জনমত যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা; একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন; সকল উপজেলায় দ্রুত ১৪টি স্থায়ী কমিটি গঠন ও কার্যকর করা; পরিষদের দাপ্তরিক নথিপত্রসহ প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন বিষয়ক নথিপত্রে ভাইস চেয়ারম্যানের সুপারিশক্রমে চেয়ারম্যানের নিকট উপস্থাপন; উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ; সকলের অংশগ্রহণে নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন এবং নারী সংরক্ষিত আসনের সদস্য পদে দ্রুত নির্বাচন ।
গণমাধ্যম যোগাযোগ
রিজওয়ান-উল-আলম
পরিচালক-আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
ফোন: ০১৭১৩০৬৫০১২
ই-মেইল: rezwan@ti-bangladesh.org