টিআইবিসহ ৫টি সংগঠন সুন্দরবনের কাছে প্রস্তাবিত কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের বিরোধী, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাসহ জনমত প্রতিফলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপিত

টিআইবিসহ ৫টি সংগঠন সুন্দরবনের কাছে প্রস্তাবিত কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের বিরোধী, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাসহ জনমত প্রতিফলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপিত

ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০১২: সুন্দরবনের কাছে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিলসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে টিআইবি, পরিবেশবাদী সংগঠন- বেলা, এ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপা এবং সেভ দ্যা সুন্দরবন। আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ ও প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৯ শে জানুয়ারি সম্পাদিত এক চুক্তির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে প্রস্তাবিত ‘কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে ইতিমধ্যে জনস্বার্থে একটি রিট দায়েরের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে সরকারের প্রতি কারণ দর্শানোর রুল জারি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের প্রজ্ঞাপনমূলে সরকার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন পশুর নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে ৩৪০ হেক্টর, ৫৬০ হেক্টর ও ১৭০ হেক্টর নদী ও খালের জলাভূমি জলজ প্রাণী বিশেষত ‘বিরল প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন ও ইরাবতী ডলফিন সংরক্ষণের স্বার্থে ‘বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। কিন্তু, প্রাথমিক পরিবেশগত প্রতিবেদনে প্রকল্প সংলগ্ন সুন্দরবন এলাকাটি যে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এ বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন করা হয়েছে।

টিআইবিসহ ৫টি সংগঠন সুন্দরবনের কাছে প্রস্তাবিত কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের বিরোধী, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাসহ জনমত প্রতিফলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপিত

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ পন্থায় অবস্থানগত ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে এবং ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জোর জবরদস্তি, হুমকিসহ অনেক অবৈধ কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। জন-দাবি উপেক্ষা করে রামপালে প্রস্তাবিত বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হলে স্থানীয় জীবন-জীবিকার উপর হুমকি ছাড়াও পরিবেশ-প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা, যা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। প্রস্তাবিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রামসার কর্তৃপক্ষ এবং ইউনেস্কোও আপত্তি জানিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান; বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর প্রতিনিধি আশরাফ মৃধা; বাংলাদেশ এনভাইরনমেন্টাল লইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি শমসের আলী এবং সেভ দ্যা সুন্দরবন এর প্রধান সমন্বয়কারী এস. কে. ফরিদুল ইসলাম।

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনার পাশাপাশি যে ৫ দফা দাবি জানানো হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো:-

-    অমূল্য জাতীয় সম্পদ ও বিশ্ব ঐতিহ্য  সুন্দরবনকে রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে;

-    পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী কেবলমাত্র শিল্প এলাকা, শিল্প সমৃদ্ধ এলাকা কিংবা ফাঁকা এলাকায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে;

-    সত্য গোপন করে ও চাতুর্যপূর্ণভাবে প্রণীত প্রাথমিক পরিবেশগত সমীক্ষা (আইইই)-এর ভিত্তিতে প্রদত্ত অবস্থানগত ছাড়পত্র বাতিল করতে হবে এবং জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে; এবং

-    বিপিডিবি এবং এনটিপিসি এর মধ্যকার ২৯ জানুয়ারি, ২০১২ তারিখের চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং প্রকল্পের ব্যর্থতার দায় কেবল এদেশের জনগণের উপর বর্তানো সংক্রান্ত চুক্তির ধারা বাতিল করতে হবে।

Media Contact


Press Release