ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বাউইন
ঢাকা, ২৬ মে ২০১২: পানি খাতে সরকারি পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন)। আজ বিয়াম মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ও প্রশাসনিক নিবিড় তদারকি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী। বাউইনের পক্ষে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও বাউইনের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রমেশ চন্দ্র সেন, এমপি বলেন, “ভূমি দস্যুরা অপরিকল্পিতভাবে নদীখালগুলো ভরাট করে দিয়ে সুপেয় পানির উৎস কমিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানির পরিমান কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ঢাকা শহরে ভূমিকম্পের ঝুকি বেড়ে যাচ্ছে। সরকার ভূমি উপরিওস্থ পানির উচ্চতাকে বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছে।” সরকার ১৬২ কি.মি নদী খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নদী খননের মাধ্যমে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব যার মাধ্যমে খাদ্য আমদানীর জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয় তার পরিমান অনেক কমে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, “পানি সরবরাহের জন্য গ্রাউন্ড ওয়াটার এখন আর পানি সরবরাহের জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে ঢাকা শহরের গ্রাউন্ড ওয়াটার থেকে সারফেস ওয়াটারের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা তথা লোডশেডিং এর জন্য প্রয়োজনমত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’’ স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ছাড়া পানি সরবরাহ ক্রমশই অসাদ্য হয়ে যাচ্ছে। এজন্য অধিক পরিমানে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে হবে কিন্তু সেজন্য অতিরিক্ত অর্থের বরাদ্দ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পানি সরবরাহ খাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ঘাটতির কারনে অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হয়, এবং একশ্রেণীর প্রভাবশালী মহল গ্রাহকদের বিশেষ করে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে প্রতারিত করে। সেবার মানোন্নয়নে স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতার বিকল্প নেই।” ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে জলাশয় ও নদীর অবৈধ দখল পানি সম্পদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে। পানি সমস্যার সমাধানে ্ধরনের অবৈধ দখল প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্রস্তাবিত জাতীয় পানি আইন প্রণয়নের পূর্বে খসড়া প্রকাশ ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করে মতামত ও পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হওয়ার দাবি জানান।
সভায় উত্থাপিত প্রবন্ধের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার বাসিন্দাদের ওয়াসা থেকে পানি সরবরাহ না পাওয়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে- ঘুষ আদান-প্রদানের চর্চা, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার অভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার অন্যতম। এছাড়াও কার্যকর জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের পানি-সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রকল্প সহায়তাসমূহও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না।
সভায় ‘ঢাকা শহরের পানি সরবরাহ: ধারণা এবং বাস্তবতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাউইন এর সদস্য এবং জল পরিবেশ ইনস্টিটিউট এর নির্বাহী সভাপতি প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক এবং ঢাকা ‘ঢাকা শহরে পানি সরবরাহে সততা ও স্বচ্ছতা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাউইন এর অপর সদস্য এবং ঢাকা ওয়াসা’র প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. খন্দকার আজহারুল হক।
বাউইন এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে বিবেচনার জন্য যে সুপারিশসমূহ উত্থাপিত হয় সেগুলো হলো: দুর্নীতি এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চ্যালেঞ্জকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে পানি সরবরাহ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; সকল প্রকার নদী ও জলাশয় দখলবাজী প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কারো প্রতি ভয়, করুণা না করে তার প্রয়োগ; জাতীয় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন নীতিমালা ১৯৯৮ ও জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯ এর কার্যকর বাস্তবায়ন; সরকারের নিবিড় প্রশাসনিক তদারকি বৃদ্ধি ও এতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা; সরকারি ক্রয়-বিক্রয় বিষয়ক সকল সিদ্ধান্ত সমূহের স্ব-প্রণোদিত প্রকাশ; সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী কর্তৃক সকল প্রকল্পসমূহের ‘ইন্টিগ্রিটি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ প্রনয়ণ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কার্যকর মানদন্ড হিসেবে টিআইবি’র ‘সততা চুক্তি’ বা এ ধরনের কোন শক্তিশালী কৌশল ব্যবহার।
উল্লেখ্য, পানি খাতে সামগ্রিকভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন) গঠিত হয়েছে যার মূল উদ্দেশ্য সরকার ও সরকারের বাইরে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত বাংলাদেশে পানি খাতে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্টার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করা।