সনাক ও ইয়েস জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা: সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই দুর্নীতি দমন সম্ভব

সনাক ও ইয়েস জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা: সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই দুর্নীতি দমন সম্ভব

 ঢাকা, শনিবার, ২ জুন ২০১২: স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে এবং গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে সরকার, রাজনৈতিক, নাগরিক সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপের মধ্য দিয়ে আজ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) এর দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক আয়োজিত আজকের ইয়েস সম্মেলনে ঢাকা ও দেশের ৪৫টি অঞ্চল থেকে দুই হাজারেরও বেশী তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন শুরু হয় জাতীয় সংগীত ও টিআইবির থিম সংগীত-ভিত্তিক কোরিওগ্রাফি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। সম্মেলনটিকে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের দুই প্রাক্তন চেয়ারপারসন: স্যামসন এইচ চৌধুরী এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের প্রতি উৎসর্গ করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসন ড. হিউগেট ল্যাবেলের শুভেচ্ছা বাণী পাঠ করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে আমরা তরুণ: অর্জন, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, মহাসচিব কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কোষাধ্যক্ষ দ্যা ডেইলি স্টার এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় বক্তারা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে তরুণদের সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্ব স্ব অবস্থান থেকে সাহসের সাথে দুর্নীতির মোকাবেলায় সকল তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেলিনা হোসেন তরুণদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকার আহ্বান জানান। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ পুলিশ বাহিনীর সাম্প্রতিক মানবাধিকার বিরোধী ভূমিকার সমালোচনা করে আইনশৃঙখলা বাহিনীর অপরাধের শাস্তি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মাহফুজ আনাম দুর্নীতিকে ক্যান্সারের সাথে তুলনা করে তরুণদের আরো সংগঠিত হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে দেশকে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির হাত থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানান।

দুই দিনব্যাপী সনাক ও ইয়েস সম্মেলন শেষে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। একইসাথে দুর্নীতির মামলার দ্রুত নিস্পত্তির লক্ষে স্বতন্ত্র্য বিচার বেঞ্চ গঠনের দাবি জানানো হয়।

সম্মেলনে দ্বান্দ্বিক রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি করে মানবাধিকার লংঘনের

সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশেষতঃ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

ন্যায্য, সুশাসিত এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংলাপের মাধ্যমে সকল বিরোধপূর্ণ বিষয়ের সমাধানে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ওপর সবিশেষ জোর দেওয়া হয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে। একই সাথে সকল আদিবাসী, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক দুর্নীতির অভিযোগ, রেলওয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেনের অভিযোগের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়। একইসাথে সুন্দরবনসহ দেশের অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ভূমিসম্পদ এবং তেল-গ্যাসসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সকল ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, সিভিল সার্ভিস আইন প্রনয়ণ, জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দলীয় প্রভাবের উর্ধ্বে উঠে বিদ্যমান সকল আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।

তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারি তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও জনগণের তথ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের সক্রিয় ভূমিকার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়।

অর্থনীতিতে কালো টাকার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাব হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রদানের দাবি করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, টেন্ডার দখল এবং পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ডের তীব্র সমালোচনা করা হয়। এছাড়া দেশজুড়ে যোগাযোগ খাতের বেহাল দশায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যোগাযোগ খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।

জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের জোর দাবি জানিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গঠিত সকল আর্থিক তহবিলের ব্যবহারে এবং এ সংক্রান্ত প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সকল ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়।

Media Contact


Press Release