টিআইবি’র বার্ষিক সদস্য সভার ঘোষণা: জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব

টিআইবির বার্ষিক সদস্য সভার ঘোষণা: জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব

ঢাকা, রবিবার, ১৭ জুন ২০১২: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গঠন এবং গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে সরকার, রাজনৈতিক, নাগরিক সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার ঢাকায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) - এর সদস্যদের বার্ষিক সভা শেষ হয়েছে।

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বার্ষিক সদস্য সভায় টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের দুই প্রাক্তন চেয়ারপারসন: স্যামসন এইচ চৌধুরী এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, প্রাক্তন চেয়ারপারসন এম. হাফিজউদ্দিন খান, সদস্য রোকেয়া আফজাল রহমান এবং ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা। এতে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মো. নুরুদ্দিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। 

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্ব স্ব অবস্থান থেকে সাহসের সাথে দুর্নীতির মোকাবেলায় সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “টিআইবি তার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যে থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিরোধে গঠনমূলক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারে।

এম. হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “টিআইবি বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহে সততার অঙ্গীকারনামা নামে একটি কার্যক্রম শুরু করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।

ড. এ.টি.এম. শামসুল হুদা বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঠিক কর্ম বিভাগ থাকা উচিত। এতে করে দুর্নীতির মাত্রা অনেক কমে আসে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের কার্যক্রমকে জোরদার করতে টিআইবি আগ্রহী ছাত্র ও যুবসমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ নাগরিককে সদস্যভুক্ত করে আসছে। সদস্য হিসেবে অন্তভুক্ত হওয়ার পর তারা টিআইবির বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। বার্ষিক সদস্য সভা ছাড়াও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত সদস্য দিবসে মিলিত হয়ে তারা টিআইবির কর্মসূচি সম্পর্কে মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

বার্ষিক সদস্য সভা শেষে এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। একইসাথে দুর্নীতির মামলার দ্রুত নিস্পত্তির লক্ষ্যে স্বতন্ত্র বিচার বেঞ্চ গঠনের দাবি জানানো হয়।

সভায় দ্বান্দ্বিক রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানো হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি করে মানবাধিকার লংঘনের সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশেষতঃ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

ন্যায্য, সুশাসিত এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংলাপের মাধ্যমে সকল বিরোধপূর্ণ বিষয়ের সমাধানে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ওপর সবিশেষ জোর দেওয়া হয় সভার ঘোষণাপত্রে। একই সাথে সকল আদিবাসী, প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক দুর্নীতির অভিযোগ, রেলওয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেনের অভিযোগের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়। একইসাথে সুন্দরবনসহ দেশের অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ভূমিসম্পদ এবং তেল-গ্যাসসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ক্রয় প্রক্রিয়ায় সকল ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, সিভিল সার্ভিস আইন প্রনয়ণ, জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দলীয় প্রভাবের উর্ধ্বে উঠে বিদ্যমান সকল আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।

তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারি তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও জনগণের তথ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের সক্রিয় ভূমিকার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়।

অর্থনীতিতে কালো টাকার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাব হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রদানের দাবি করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, টেন্ডার দখল এবং পরিবেশ বিনাশী কর্মকান্ডের তীব্র সমালোচনা করা হয়। এছাড়া দেশজুড়ে যোগাযোগ খাতের বেহাল দশায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যোগাযোগ খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।

জাতীয় বাজেট ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের জোর দাবি জানিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গঠিত সকল আর্থিক তহবিলের ব্যবহারে এবং এ সংক্রান্ত প্রকল্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সকল ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়।

Media Contact


Press Release