Independent status demanded to free Office of the Controller General of Accounts from dual management (Bangla)

হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়কে দ্বৈত ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে

স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদানের দাবি

ঢাকা, ১২ আগষ্ট ২০১২: সংবিধান সংশোধন ছাড়াই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশে বাংলাদেশের হিসাব মহা নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) কার্যালয়কে মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয় থেকে পৃথক করার ফলে সিজিএ কার্যালয়ের কার্যক্রমে সৃষ্ট স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি নিরসনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেছে। আজ সিরডাপ মিলনায়তনে ‘হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ: উত্তরণের উপায় শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় সিজিএ কার্যালয়কে দ্বৈত ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে সংবিধান সংশোধন করে একে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব মো. তাজুল ইসলাম এমপি এবং বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক জনাব আহমেদ আতাউল হাকিম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সিজিএ জনাব মো. সাহাদ চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান এবং ভারপ্রাপ্ত সিজিএ মো. আনিসুর রহমান। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। গবেষণা ভিত্তিক প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষক দিপু রায়।

সেপ্টেম্বর ২০১০ থেকে মার্চ ২০১২ পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় বিভিন্ন পরোক্ষ সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ডিজি অফিস, ডিপার্টমেন্ট ও বোর্ড, সরকারি কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৩০টি সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সিজিএ, সিএজি অফিসের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ প্রায় ১৫০ জন মুখ্য তথ্যদাতার কাছ থেকে চেকলিস্টের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

দীর্ঘ সাত মাস যাবত সিজিএ প্রধানের পদ শূন্য রয়েছে, এই তথ্যের উল্লেখ করে গবেষক জানান সিজিএ অফিসে তেইশ ধরণের দুর্নীতির উপস্থিতির কারণে সেবা-গ্রহীতাদের হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে। সিজিএ অফিসের বিভিন্ন ধরনের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মধ্যে বিল হারিয়ে ফেলা, হিসাবের প্রতিবেদন তৈরিতে বিলম্ব, হিসাব সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, আনুষঙ্গিক বিল, ভ্রমণ ও দৈনিক ভাতা বিলে দুর্নীতি এবং ঋণ ও প্রভিডেন্ট ফান্ডে একাউন্ট স্লিপ পাঠানো এবং এই ফান্ডের টাকা উত্তোলনে ঘুষ প্রদান অন্যতম।

গবেষণায় বলা হয় সরকারি কর্মকর্তাদের নতুন বেতন স্কেল সংযোজন, এমনকি প্রথম বেতন বোনাস পেতেও ঘুষ দিতে হয়। ঠিকাদারদেরকে তাদের বিলের ওপর আনুপাতিক হারে ঘুষ প্রদান করতে হয় (এক লক্ষ টাকার ওপর ১০%, বিল কোটি টাকার বেশি হলে তাকে ১% পর্যন্ত ঘুষ প্রদান করতে হয়)। পেনশন পেতে পাঁচ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা বা তার বেশি ঘুষের লেনদেন হয়। জিপিএফ এর টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ প্রদান করতে হয়। প্রতিটি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের টিএ, ডিএ বিল পাশ করাতে সাধারণত ১% থেকে ১০% পর্যন্ত ঘুষ প্রদান করতে হয়। আনুষঙ্গিক জিনিষপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিল পাশ করাতে ১% থেকে ৫% পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। 

গবেষণায় বলা হয় অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৩৭% শতাংশ কম সংখ্যক জনবল দিয়ে সিজিএ অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, যার অন্যতম কাজ হল সরকারি বিল পাসের পূর্বে কোন প্রশাসনিক,আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা যাচাই করা। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, পদায়ন ও বদলীর কারণে প্রশাসনিক চেইন অফ কমান্ড নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া হলেও সিজিএ এবং সিএজি কার্যালয়ের দ্বৈত ব্যবস্থাপনায় কোন মৌলিক পরিবর্তন ঘটেনি উল্লেখ করে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি অ্যাক্রুয়াল পদ্ধতিতে হিসাব নিরীক্ষণের সুপারিশকে সমর্থন জানান। জুন মাসে সরকারী কর্মকান্ডের এক চর্তুথাংশের বেশী বিল ছাড় না করার ব্যাপারে টিআইবির সুপারিশকে সমর্থন জানান। প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত দুর্নীতির তথ্যগুলোকে ধারনার ভিত্তিতে করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জনগনের দুর্নীতির ধারনাকে বিবেচনায় নেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

আহমেদ আতাউল হাকিম বলেন, “গুরুত্ব অনুযায়ী যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি বলেই হিসাব ও নিরীক্ষা অফিসের কাজের ক্ষেত্রে কোন গতিশীলতা নেই। সংবিধান অনুযায়ী অডিটর জেনারেলকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি নানা সীমাবদ্ধতার কারনে সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না। একটি অডিট আইনের অনুপস্থিতির কারনে অডিটর জেনারেলগণ কোন প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না। তিনি এ বিষয়ে দ্রুততার সাথে অডিট আইন পাশের দাবি জানান।

মো. তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, “রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্নস্তর পর্যন্ত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না হলে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি প্রতিরোধে সম্ভব হবে না।

এম. হাফিজউদ্দন খান বলেন, “সিজিএ অফিস ঠিকমত কাজ করছে কিনা সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন। এবিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

চেয়ারপারসনের বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “দুর্নীতি বাংলাদেশের সবাই করে না। ব্যক্তিগতভাবে এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের ওপর বর্তিত দায়িত্ব আমরা কিভাবে পালন করছে সেটিই মূল বিবেচ্য বিষয়। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি। বাংলাদেশ আজ মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে কিছু ভাল মানুষ রয়েছে। তাই আমাদেরকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যাতে করে একটি দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে পাই।

টিআইবির প্রস্তাবিত অন্যান্য সুপারিশমালার মধ্যে অন্যতম হল: সিজিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য নৈতিক আচরণ বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নৈতিকতা কমিটি গঠন, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণ, সিজিএ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দুর্নীতি বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণের জন্য একজন ন্যায়পাল নিয়োগ করা, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সম্পদের বাৎসরিক হিসাব ও বিবরণ প্রকাশ এবং পর্যায়ক্রমে অ্যাক্রুয়াল ভিত্তিতে হিসাব পদ্ধতির প্রবর্তন। এছাড়াও অর্গানোগ্রাম ও জনবল, প্রশিক্ষণ এবং মনিটরিং সংশ্লিষ্ট বেশ কিছ সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

Media Contact


Press Release