TIB releases research report: Call to formulate law to refrain MPs from direct participation in local administration and development works, group parliament boycott must be banned (Bangla)

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

সংসদ সদস্যদের স্থানীয় প্রশাসন ও উন্নয়নকর্মকান্ডেপ্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে আইন প্রণয়নের আহ্বান

দলগতভাবে সংসদ বর্জন নিষিদ্ধ করতে হবে

ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০১২: আইন সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের স্থানীয় প্রশাসন ও উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের ভূমিকা থেকে সরিয়ে এনে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসাথে দলগতভাবে সংসদ বর্জন প্রতিরোধক আইন প্রণয়নের আহ্বান পুর্নব্যক্ত করা হয়েছে।

আজ ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন্ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নবম জাতীয় সংসদের সদস্যদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ভূমিকা পর্যালোচনা শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয় জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের মোট কার্যদিবসের ৭৮ শতাংশ বর্জন, সংসদের প্রত্যাশিত দায়িত্ব পালনে অন্যতম অন্তরায়। এছাড়া সংসদ সদস্যদের পদটিকে অনেকেই লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করার কারণে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যগণ স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডেজড়িত হচ্ছেন। এর ফলে শতকরা ৫৩ ভাগ সদস্য স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকান্ডেইতিবাচক অবদানের দৃষ্টান্ত রাখলেও ৯৭ শতাংশ সদস্যই কোন না কোন প্রকার অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম. আকরাম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

গবেষণায় সংসদের বাইরে সংসদ সদস্যদের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য ৪২টি জেলার ১৪৯টি আসনের সংসদ সদস্যদের ওপর পরোক্ষ বা প্রত্যাক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দলগত আলোচনার মাধ্যমে ৬০০ জন দলনিরপেক্ষ ও সচেতন ব্যক্তির কাছ থেকে জুলাই ও সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত তথ্য ও মতামত সংগৃহীত হয়। পুরো গবেষণার জন্য নবম সংসদের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর ২০১২ পর্যন্ত পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগৃহীত হয়।

গবেষণায় যে ১৪৯ জন সংসদ সদস্য সম্পর্কে তথ্য সংগৃহীত হয় তাদের মধ্যে নারী সদস্য ৮ জন, পুরুষ সদস্য ১৪১ জন। ১৪৯ জনের মধ্যে সরকার দলীয় সদস্য ১৩৬ জন এবং বিরোধী দলীয় সদস্য ১৩ জন। ১৪৯ জনের মধ্যে ২৭ জন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী সম্পর্কেও তথ্য ও মতামত সংগৃহীত হয়। ১৪৯ জন সদস্যের মধ্যে ৫৩.৭৮ শতাংশ ইতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত থাকলেও এদের প্রায় ৯৭ শতাংশ নেতিবাচক কর্মকান্ডে যুক্ত বলে দলগত আলোচনায় জানা যায়। সংসদ সদস্যগণ তাদের কর্মকা- সম্পর্কে উত্তরদাতাদের সন্তুষ্টির বিবেচনায় ১ থেকে ১০ এর স্কেলে গড়ে মাত্র ৪.১৮ পেয়েছেন, ৬৮.০৫ শতাংশ সংসদ সদস্য ৫ বা তার নিচে স্কোর পান। ৭.৬ বা তার বেশি স্কোর পেয়েছেন মাত্র ৩.৩৬ শতাংশ সংসদ সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “সংসদে অনুপস্থিতি, আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় নূন্যতম অংশগ্রহণ এবং সরকারের জবাবদিহিতা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে না পারায় সংসদ সদস্যগণ জাতীয় সংসদে তাঁদের প্রত্যাশিত দায়িত্ব পালন করছেন না। অন্যদিকে আইন বহির্ভূত কর্মকা- , ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়া এবং অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে সংসদ সদস্যদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। সংসদেও প্রত্যাশিত ভূমিকার ঘাটতির কারণ হিসেবে তিনি বিরোধীদলের সংসদ বর্জনের সংস্কৃতিকে দায়ী করেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিল হিসেবে উত্থাপিত খসড়া সংসদ সদস্য আচরণবিধিকে আইনে রূপান্তর করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট আইন করে দলগত বা সমষ্টিগতভাবে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। একইসাথে ব্যক্তিগত কারণে অনুপস্থিতি সর্বোচ্চ ৩০ দিন এবং একাধারে সর্বোচ্চ ৭ দিনে সীমাবদ্ধ করতে হবে। জনগণ চায় সংসদ সদস্যগণ স্থানীয় উন্নয়নে নীতি-নির্ধারণী ভূমিকা অবশ্যই রাখবেন কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন বা স্থানীয় প্রশাসনে কোন প্রকার প্রত্যক্ষ ভূমিকা পরিহার করবেন।”

টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম. হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “ধারাবাহিকভাবে সংসদ বর্জনের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর কোন সংসদীয় গণতন্ত্রে নেই। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে সংঘবদ্ধভাবে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতিকে আইনের মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।

সংসদ সদস্য কর্তৃক ইতিবাচক কর্মকান্ডের তালিকায় নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি বরাদ্দ, অনুদান, সেতু নির্মাণ, সংস্কার প্রকল্প অনুমোদন, বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজ অন্যতম। এছাড়া নদী ভাঙ্গনরোধ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক কার্যক্রম হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

পক্ষান্তরে, নেতিবাচক কর্মকান্ডের দীর্ঘ তালিকা অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্থানীয় উন্নয়ন বরাদ্দ নিজ কাজে ব্যবহার, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত হওয়া উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য, নবম সংসদের ১৮১ জন সংসদ সদস্যের বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যা মোট সংসদ সদস্যের ৫১.৭ শতাংশ। সংবাদ মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ইতিবাচক ভূমিকার উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য পরিলক্ষিত হয় নি।

অধিকাংশ সংসদ সদস্যের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারণ হিসেবে টিআইবির গবেষণায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার মধ্যে সংসদ সদস্য পদকে আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার, দলীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার অনুপস্থিতি, শাস্তি না হওয়ার সংস্কৃতির বিকাশ অন্যতম।

উল্লিখিত আইনি সংস্কারের পাশাপাশি টিআইবির সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে সংসদ সদস্যদের সংসদে কার্যকর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের দলীয় অবস্থান থেকে পদত্যাগ ইত্যাদি।

অন্যদিকে সংসদ সদস্যদের নেতিবাচক কর্মকা- থেকে বিরত রাখতে ৫টি প্রধান সুপারিশের মধ্যে সংসদ সদস্যদের আচরণ বিল সংসদে পাশ, আয়-ব্যয়, সম্পদ, মামলা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ এবং স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অন্যতম।

Media Contact


Press Release